ইয়টের চার আমেরিকানকেই হত্যা করেছে জলদস্যুরা

১৫ বছরের সংসার জীবনে একটাই স্বপ্ন লালন করেছেন জিন ও স্কট অ্যাডামস দম্পতি। অবসরের পর একটি নৌকা বানিয়ে তাতে করে বিশ্ব ভ্রমণ করবেন। এই স্বপ্নকে সত্যিতে রূপ দিতে শুরুও করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু গত সোমবার চরম নৃশংসতার মধ্যে তাঁদের এই স্বপ্নজীবনের ইতি ঘটল।


সোমালি জলদস্যুরা জিম্মি এই মার্কিন দম্পতি এবং তাঁদের দুই সহযোগীকে হত্যা করেছে। চার নাগরিক হত্যার ঘটনায় মার্কিন সেনাবাহিনী বলেছে, এবার তারা সোমালি জলদস্যুদের জিম্মি নাটকের শেষ দেখতে চায়।
মার্কিন নৌবাহিনী জানায়, একটি মার্কিন রণতরী ছিনতাইকৃত অ্যাডামস দম্পতির ইয়টটি অনুসরণ করার একপর্যায়ে জলদস্যুরা তাঁদের গুলি করে হত্যা করে। মঙ্গলবার সকালে ওই ঘটনায় চার জলদস্যুও নিহত হয়। তাদের মধ্যে দুজনকে মার্কিন বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা হত্যা করে। এ ছাড়াও আটক করা হয়েছে ১৫ জলদস্যুকে।
ক্যালিফোর্নিয়ার এই দম্পতি মূলত মিশনারি কাজের লক্ষ্যে বিশ্ব ভ্রমণে বের হন। সাত বছর ধরেই তাঁরা 'এস/ভি কোয়েস্ট' নামের ইয়টে (হালকা নৌযান) করে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। তাঁদের ইয়টটি সোমালি জলদস্যুদের হাতে পড়ে গত শুক্রবার বিকেলে। ওই সময় তাঁরা ওমানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলে ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে ফিলিস ম্যাসে এবং বব রিঙ্গেল নামের সিয়াটলের আরেক দম্পতিও ছিল।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বলেছেন, 'যুক্তরাষ্ট্র এই হত্যাকাণ্ডের কঠোর ভাষায় নিন্দা জানাচ্ছে'। এক বিবৃতিতে তিনি অন্যান্য বিশেষ করে আফ্রিকার দেশগুলোর প্রতি সোমালি জলদস্যুদের তৎপরতা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গত শনিবার অ্যাডামস দম্পতির বিষয়ে প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি অনুমোদন করেন। পরমাণু শক্তিচালিত বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস এন্টারপ্রাইজসহ চারটি রণতরী ইয়টের গতিপথ অনুসরণ করতে শুরু করে। বাহরাইনভিত্তিক মার্কিন নৌবাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ডের প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল মার্ক ফঙ্ জানান, মুক্তিপণের দরদাম করতে গত সোমবার জলদস্যু দলের দুই সদস্য ইউএসএস এন্টারপ্রাইজে ওঠে।
পর দিন সকালে 'কোনো ধরনের সতর্কতা ছাড়াই' রণতরীর দিকে কোয়েস্ট থেকে রকেটচালিত গ্রেনেড ছোড়ে দস্যুরা। একই সময় ইয়টের ডেক থেকে আত্মসমর্পণের উদ্দেশ্যে হাতও তুলে দাঁড়ায় কয়েক দস্যু। ফঙ্ জানান, এই ঘটনার পর ছোট নৌকায় করে ইয়টের দিকে এগোতে শুরু করে মার্কিন বিশেষ বাহিনী। তারা ইয়টে ওঠার আগেই গুলির আওয়াজ পায়। ইয়টে উঠে দেখে চার আমেরিকানকেই গুলি করা হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। চতুর্থ জনের মৃত্যু হয় তারা পেঁৗছানোর পর।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন থেকে টেলিফোনে ফঙ্ জানান, ইয়টে এক দস্যুকে ছুরিকাঘাতে এবং আরেক জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ইয়টের ভিতরে আরো দুই দস্যুর মৃতদেহ পাওয়া গেলেও কিভাবে তারা মারা গেছে নিশ্চিত নয়। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, সম্ভবত পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে তারা নিহত হয়েছে। তবে দস্যুদের ভাষ্য একেবারেই ভিন্ন। তাদের দাবি, রণতরী থেকেই প্রথমে হামলা চালানো হয়। এতে দুই দস্যু মারা পড়ে। পাল্টা আঘাতে নিহত হয় জিম্মিরা।
প্রসঙ্গত, সোমালিয়াতে ১৯৯১ সাল থেকে কার্যকর কোনো কেন্দ্রীয় সরকার নেই। ফলে দস্যুতার বাণিজ্য ফুলে ফেঁপে উঠছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পণ্যবাহী জাহাজকে জিম্মি করে কোটি কোটি ডলার মুক্তিপণ আদায় করেছে দস্যুরা। যুক্তরাষ্ট্রের করা এক জরিপে দেখা যায়, দস্যুতায় বছরে বিশ্ব অর্থনীতির ৭০০ কোটি থেকে এক হাজার ২০০ কোটি ডলার ক্ষতি হয়। সূত্র : বিবিবি, সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমস, এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.