বাস-অযোগ্য ঢাকা

ঢাকা আবার শীর্ষে। 'দি ইকোনমিস্ট' পত্রিকার ইনটেলিজেন্স ইউনিট একটি জরিপ করেছে বিশ্বের বাসযোগ্য ও বাস-অযোগ্য শহর নিয়ে। সেখানে এসেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার নাম। শীর্ষে নয়, দ্বিতীয় স্থানে। এ নিয়ে দ্বিতীয়বার। আন্তর্জাতিক জরিপে শীর্ষস্থান দখল করাটা গর্বেরই ব্যাপার।


কিন্তু সেই শীর্ষস্থানটা যখন নেতিবাচক হয়ে যায় তখন? গত বছরের মতো এবারও রাজধানী ঢাকা বাস-অযোগ্য শহর হিসেবে দুই নম্বরে স্থান পেয়েছে। জরিপ প্রতিবেদনে ১৪০টি শহরের মধ্যে বসবাসের উপযোগিতার দিক থেকে ঢাকার অবস্থান ১৩৯তম। পাঁচটি নির্ধারকের আওতায় ৩০টিরও বেশি গুণগত ও পরিমাণগত বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট এই সূচক তৈরি করেছে। সূচকের মূল পাঁচটি নির্ধারক হলো_স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা ও অবকাঠামো।
স্থিতিশীলতার মধ্যে যেসব বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে : ছোট অপরাধের উপস্থিতি, সহিংস অপরাধের উপস্থিতি, সন্ত্রাসের হুমকি, সামরিক যুদ্ধের হুমকি ও গৃহযুদ্ধের হুমকি। স্বাস্থ্যসেবার মধ্যে বিবেচনা করা হয়েছে : ব্যক্তিপর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার সক্ষমতা, বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার মান, সরকারি স্বাস্থ্যসেবার সক্ষমতা, সরকারি স্বাস্থ্যসেবার মান, মাদকবিরোধী সক্ষমতা ও স্বাস্থ্যসেবার সাধারণ নির্ধারক। সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত বিষয়ের মধ্যে বিবেচনা করা হয়েছে : তাপমাত্রা বা আর্দ্রতার হার, ভ্রমণকারীদের কাছে আবহাওয়ার অস্বস্তিকর দিক, দুর্নীতির মাত্রা, সামাজিক ও ধর্মীয় বিধিনিষেধ, সেন্সরশিপের মাত্রা, ক্রীড়ার সক্ষমতা, সংস্কৃতিগত সক্ষমতা, খাদ্য ও পানীয় এবং ভোক্তাপণ্য ও সেবা। শিক্ষার মধ্যে বিবেচনা করা হয়েছে : বেসরকারি শিক্ষার সক্ষমতা, বেসরকারি শিক্ষার মান ও সরকারি শিক্ষার নির্ধারককে। অবকাঠামোগত বিষয়ের মধ্যে বিবেচনা করা হয়েছে : সড়ক যোগাযোগের মান, সরকারি পরিবহনের মান, আন্তর্জাতিক যোগাযোগের মান, ভালো মানের বাসগৃহের প্রাপ্যতা, জ্বালানি সরবরাহের মান, পানি সরবরাহের মান ও টেলিযোগাযোগের মান।
ইকোনমিস্টের ইনটেলিজেন্স ইউনিট যে জরিপ করেছে, সে জরিপের ফল আমরা অস্বীকার করব কেমন করে? আমরা জানি, রাজধানী ঢাকা দিনে দিনে কেমন করে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। আমরা তো ভালো করেই জানি যে ঢাকার বাতাসে ছড়িয়ে আছে বিষ। বুকভরে নিঃশ্বাস নিতে গিয়ে অঙ্েিজনের বদলে আমরা নিচ্ছি কার্বন ডাই-অঙ্াইডের বিষ। সহনীয় মাত্রার চেয়ে ছয় গুণ বেশি সিসাসহ বিভিন্ন দূষিত পদার্থ মিশে আছে ঢাকার বাতাসে। দূষণে প্রতিবছর মারা যাচ্ছে মানুষ। ঢাকার চারপাশের নদীগুলো দূষণমুক্ত নয়। বিষাক্ত বর্জ্যে ভরা এসব নদী থেকেও দূষণ ছড়াচ্ছে। একদিকে ঢাকায় বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষের নিজস্ব কোনো বাড়ি নেই, অন্যদিকে পুরান ঢাকায় মানুষের বাস জরাজীর্ণ ভবনে। সব মিলিয়ে ঢাকার বাসিন্দারা ভালো নেই।
রাজধানী ঢাকা দিনে দিনে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে_এমন অভিযোগ অনেকেরই। একদিকে বাড়ছে জনসংখ্যার চাপ, অন্যদিকে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। পরিবেশবান্ধব রাজধানী গড়ে তোলার স্বপ্ন আজ অবধি পূরণ হয়নি। কিন্তু এই রাজধানীকে আমরা তিলে তিলে তিলোত্তমা করে গড়ে তুলতে চাই। দিনে দিনে নগরীর পরিধি বাড়লেও পরিকল্পনার অভাব এখনো প্রকটভাবেই দৃশ্যমান। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও মানুষের লোভের আগুনে পুড়ছে রাজধানীবাসীর স্বপ্ন। কিন্তু এভাবে তো আর চলতে দেওয়া যায় না। রাজধানীকে বসবাসের উপযোগী করতে হবে। মানুষের জন্য নিরাপদ করতে হবে এই রাজধানীকে। বাস-অযোগ্য শহরের দুর্নাম ঘোচাতে হবে। দায়িত্বটা নিতে হবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে।

No comments

Powered by Blogger.