নুরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকীতে সভা- হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি

গণতন্ত্রী পার্টির নেতা নুরুল ইসলাম ও তাঁর ছেলে ইসলাম তমোহর হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তাঁরা বলেছেন, সরকার সহায়তা না করলে তদন্ত সংস্থার ব্যর্থতার দায় সরকারের ঘাড়েই পড়বে।


গতকাল সোমবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময়’ শীর্ষক সভায় বিশিষ্টজনেরা এ কথা বলেন। নুরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর এবং তাঁর ছেলে তমোহরের হত্যার বিচারের দাবিতে ‘নাগরিক কমিটি’ এ সভার আয়োজন করে।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘রাজনৈতিক সরকারের আন্তরিকতায় ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার-প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু নুরুল ইসলাম হত্যা, সাগর-রুনিসহ সাংবাদিক হত্যার বিচার হচ্ছে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সরকার আন্তরিক হলে এর তদন্ত করুক। আর তদন্ত করতে না পারলে তা-ও বলুন।’
নুরুল ইসলামের মৃত্যুর আগের ঘটনাগুলো তদন্তকারী সংস্থা গুরুত্বের সঙ্গে কেন নিচ্ছে না—এ প্রশ্ন করেন রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, পুলিশ তাদের নির্দিষ্ট ছকের বাইরে যায় না। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা দরকার।
সভার সভাপতি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘তদন্তকাজে রাজনৈতিক সরকার সহায়তা না করলে তদন্ত সংস্থার ব্যর্থতার দায় তাদের ঘাড়েই পড়বে। সরকারকে অনুরোধ জানাব, তারা যেন তদন্তকারী সংস্থাকে নির্দিষ্ট গণ্ডি থেকে বের করে আনে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এতবার বলার পরও কেন মামলার অগ্রগতি নেই, তা রহস্যজনক।
দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে সরকারকে আহ্বান জানান ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ওয়াজেদুল ইসলাম খান।
এ হত্যার সঙ্গে নির্বাচনের সম্পর্ক ছিল বলে মন্তব্য করেন গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নূরুর রহমান সেলিম। তিনি বলেন, ‘নুরুল ইসলামকে ঋণখেলাপি দেখানোর রহস্য আজও উদ্ঘাটিত হলো না। তদন্তকারী সংস্থাগুলো আমাদের সঠিক তথ্য জানাতে পারছে না।’
সভার শুরুতে নুরুল ইসলামের স্ত্রী সাংসদ রুবী রহমান বলেন, ‘তদন্তের আশানুরূপ অগ্রগতি না হওয়ায় আমরা হতাশাগ্রস্ত। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের তদন্তকারীরা প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর এক বছর অতিবাহিত হয়েছে। ঘটনাস্থলের তদন্তও শেষ হয়েছে। কিন্তু তার পরও সার্বিকভাবে তদন্তের অগ্রগতি দেখছি না।’ তিনি দ্রুত তদন্তকাজ শেষ করে অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দাবি করেন।
সভায় আরও বক্তব্য দেন হাজারীবাগ ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন প্রমুখ।
এ ছাড়া নুরুল ইসলাম ও ইসলাম তমোহরের হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে গতকাল বিকেলে গণতন্ত্রী পার্টির উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন হয়। দেশব্যাপী দাবি দিবস পালনের অংশ হিসেবে নোয়াখালী, সিলেট, খুলনা, কুষ্টিয়া, কিশোরগঞ্জ, রংপুর ও ফেনীতেও মানববন্ধন হয়েছে।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ২৬ দিন আগে ২০০৮ সালের ৩ ডিসেম্বর রাতে গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি নুরুল ইসলাম ও তাঁর একমাত্র ছেলে ইসলাম তমোহর লালমাটিয়ার ফ্ল্যাটে রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডের শিকার হন। তমোহর ঘটনাস্থলে এবং নুরুল ইসলাম পরদিন হাসপাতালে মারা যান।

No comments

Powered by Blogger.