হিসাব নিরীক্ষণ ও জনসমক্ষে প্রকাশ করুন- রাজনৈতিক দলের আয় ও ব্যয়

রাজনৈতিক দলের আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রদানের বিষয়টি রাজনৈতিক দল বা নির্বাচন কমিশনের গুরুত্বের সঙ্গে না নেওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন-বিধি অনুযায়ী, প্রতিবছর ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে পূর্ববর্তী খ্রিষ্টীয় বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়ার কথা।


কিন্তু ২৯ জুলাই পর্যন্ত তিনটি ছাড়া কোনো দলই আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়নি বলে সোমবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়। দেশে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৩৮। এ ব্যাপারে প্রধান দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আজ ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে তারা হিসাব জমা দেওয়ার চেষ্টা করবে। যদি তা সম্ভব না হয়, সময় বাড়ানোর আবেদন জানাবে।
গত দুই বছর, অর্থাৎ ২০০৯ ও ২০১০ সালের রাজনৈতিক দলের আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলেও তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। হয়নি নিরীক্ষাও। রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তির কারণে হিসাব প্রকাশ করা হয়নি বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সব রাজনৈতিক দলই দাবি করে, তারা জনগণের জন্য কাজ করে এবং তাদের কাজে গোপনীয়তার কিছু নেই। সে ক্ষেত্রে আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশে তাদের আপত্তি কেন? বরং আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করা হলে জনমনে রাজনৈতিক দলের আয়ের উৎস সম্পর্কে যে সংশয় ও সন্দেহ আছে, তার অনেকটাই দূর হয়ে যেত। দ্বিতীয়ত, নিরীক্ষার দায়িত্বটি নির্বাচন কমিশনের। তারা কোনো নির্ভরযোগ্য হিসাবরক্ষণ প্রতিষ্ঠান দ্বারা নিরীক্ষা করলেই বোঝা যেত, রাজনৈতিক দলগুলোর দেওয়া আয়-ব্যয়ের হিসাবে কোনো ফাঁকি আছে কি না। এখন হিসাব জমাদানের নামে একধরনের প্রহসন হচ্ছে, যা মোটেই কাম্য নয়।
রাজনৈতিক দলগুলোর আয় ও ব্যয়ের হিসাব নেওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল তাদের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনা। কিন্তু তাদের দেওয়া হিসাব যদি নিরীক্ষা না হয়, কী করে বোঝা যাবে এর ভেতরে গরমিল আছে কি না? যে রাজনৈতিক দল জনগণের জন্য কাজ করে, তারাই বা কেন জনগণের সামনে হিসাব প্রকাশে আপত্তি জানাবে? আর জানালে নির্বাচন কমিশনই বা কেন মানবে? আগের কমিশন রাজনৈতিক দলের দেওয়া হিসাব নিরীক্ষা না করে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়নি। বর্তমান কমিশনও একই কাজ করবে, তা কেউ আশা করে না। কোন রাজনৈতিক দল কাদের কাছ থেকে অর্থ নেয় এবং সেই অর্থ কীভাবে খরচ করে, তা জানার অধিকার নিশ্চয়ই জনগণের আছে।
নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলোর আয় ও ব্যয়ের হিসাব জমা দেওয়াই যথেষ্ট নয়, তাদের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনতে হলে সেই হিসাব নিরীক্ষা এবং জনসমক্ষে প্রকাশও করতে হবে। রাজনৈতিক দলের আয় ও ব্যয়ের হিসাব প্রদানের বিষয়টি নিয়ম রক্ষার কাজ হিসেবে না দেখে তাদের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির নিরিখে দেখা জরুরি বলে মনে করি।

No comments

Powered by Blogger.