গ্রামপুলিশরাও সরকারি কর্মচারী

সরকারি চাকুরের শেষ পরিণতি ভিক্ষুকের মতো হাত পাতা। পদবি তাঁদের গ্রামপুলিশ। নাম-পরিচয়ে পুলিশ হওয়ার পরও তাঁদের পুলিশি কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। কিংবা সরকারি কর্মচারী হয়েও তাঁদের কোনো স্কেল নেই বেতনের। ফলে সম্মান ও সম্মানী উভয় ক্ষেত্রেই তাঁরা এখনো পিছিয়ে আছেন অনেক দূর।


চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর মর্যাদাদানের ঘোষণা ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সেই নির্দেশেরও যেন মৃত্যু ঘটেছে। ফলে সেই ১৮৭০ সাল থেকে আজ অবধি একইভাবে তাঁদের রাত জাগতে হয়, রোদ-বৃষ্টিতে ভিজতে হয় এবং অপমৃত্যুর পচাগলা লাশ নিয়ে যেতে হয় সদরে কিংবা থানায়। গরু চুরি, সিঁদকাটা চোর কিংবা ছিঁচকে চোরদের ধরার ব্যাপারে তাঁদের ঝুঁকিপূর্ণ অবদান রাখতে হয়। এর পরও কেন তাঁদের উপযুক্ত মজুরি কিংবা সম্মানী নেই? এমনকি তাঁদের জন্য নির্ধারিত সম্মানজনক পদবি 'গ্রামপুলিশ'ও ব্যবহৃত হয় না তাঁদের মূল্যায়ন করতে গিয়ে। এটা যদি সবখানে ব্যবহৃত হতো তাহলেও তাঁদের চৌকিদার কিংবা দফাদারের মতো সেই পুরনো দিনের পদবি ধারণ করতে হতো না।
সরকারি কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা বিশেষ করে পুলিশ বিভাগের কর্মীদের জন্য স্বল্পমূল্যে রেশন দেওয়ার সুযোগ সম্প্রসারণ করা জরুরি স্বীকার করার পরও কার্যকর হয়নি। তাঁদেরর্ দীর্ঘদিনের দুর্গতি হ্রাসের জন্য সারা দেশের গ্রামপুলিশকে আন্দোলনে যেতে হয়েছে একসময়। তাঁদের চাপে পড়ে সরকার একসময় বেতন বাড়িয়ে ১৯০০ টাকা করেছে সত্যই। কিন্তু বর্তমান আক্রার দিনে এ টাকা দিয়ে কোনো পরিবারের পক্ষে দিনযাপন করা সম্ভব নয়। আর তাঁদের পক্ষেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করার পর কোনো কৃষিকাজ কিংবা আয়ক্ষম অন্য কোনো কাজ করা সম্ভব হয় না। যে কারণে তাঁদের এই স্বল্প আয় দিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতি নিরসনের জন্য তাঁরা চতুর্থ শ্রেণীর মর্যাদা লাভসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দাবি জানাতেই পারেন। দুর্ভোগ লাঘবের জন্য এবং গ্রামীণ জনপদে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সুষ্ঠু ভূমিকা পালনের জন্য তাঁরা সময় দিতে বাধ্য। কিন্তু সেই বাধ্যবাধকতাটুকু তাঁদের ন্যায্য সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রেও থাকা দরকার। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি সরকারি নির্দেশ জারি হয় ১৯৭৬ সালে। সেই নির্দেশটিও অকার্যকর হয়ে আছে একান্তই আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কিংবা অবহেলার কারণে। এ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কিংবা অবহেলার কারণে আমাদের অনেক দুর্ভোগই পোহাতে হয়। এমনি মানসিকতা যে কারো কারো আহার সংস্থানেও প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়, তা বোঝা গেল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত আরেকটি খবরে। সেখানে দেখা গেছে, একজন শিক্ষা কর্মকর্তাকে 'স্যার' না ডাকার কারণে একটি স্কুলের শিক্ষকদের বেতন বন্ধ হয়ে আছে দীর্ঘদিন। এমন অমানবিক মানসিকতাই কি গ্রামপুলিশদের ভাগ্য নিয়েও ছিনিমিনি খেলছে? গ্রামপুলিশদের ভাগ্য উন্নয়ন ঘটুক, ক্ষমতাকে অপব্যবহার করে আর কোনো দুর্ভোগ সৃষ্টি না হোক।

No comments

Powered by Blogger.