নেতৃত্ব সংকটে পড়বে না লিবিয়া

তিউনিসিয়ায় বিপ্লবের যে আগুন জ্বলে উঠেছিল তার স্ফুলিঙ্গ একে একে ছড়িয়ে পড়েছে আরববিশ্বের দীর্ঘদিন ধরে একনায়কশাসিত দেশগুলোতে। সেই আগুন এখন ঘিরে ধরেছে লিবিয়াকে। কয়েক দিন ধরে দেশটিতে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরালো হয়ে ওঠায় এখন প্রশ্ন উঠেছে, লিবিয়ার ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে? উত্তরটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
এ কারণে যে আরববিশ্বে পরিবর্তনের যে সূচনা দেখা দিয়েছে, তাতে লিবিয়া রাষ্ট্রের টিকে থাকা, আঞ্চলিক নিরাপত্তাসহএকাধিক বিষয় এর সঙ্গে জড়িত।
চার দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছেন লিবিয়ার নেতা কর্নেল মোয়াম্মার গাদ্দাফি। ১৯৬৯ সালে জুনিয়র একদল তরুণ সেনা কর্মকর্তাকে নিয়ে ব্রিটিশ সমর্থিত রাজা প্রথম ইদ্রিসকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করেন তিনি। 'রাষ্ট্রক্ষমতা থাকবে জনগণের হাতে'_এমনটাই ছিল তাঁর স্লোগান। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে তাঁর নতুন চেহারা দেখা যায়। নিজের গড়া বিপ্লবী কমিটি হয়ে দাঁড়ায় জনগণের প্রতিনিধি। আর ওই কমিটি গঠনের কয়েক বছরের মধ্যেই দেশের যাবতীয় ক্ষমতা গাদ্দাফির একার হাতে চলে আসে। একনায়কত্বের কারণে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে। অনেকেই তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন। লিবিয়াকে মিসর বা তিউনিসয়ার মতো নেতৃত্ব সংকটে পড়তে হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। গাদ্দাফিকে বাদ দিলেও বেশ কয়েকজন সামনের সারির নেতা আছেন দেশটিতে। ১৯৬৯ সালের অভ্যুত্থানে গাদ্দাফির সঙ্গী, তাঁর সাবেক ডান হাত বলে পরিচিত ও এককালের প্রধানমন্ত্রী আবদুস সালাম জালুদ এখনো দেশে আছেন। স্কুলজীবনের এ বন্ধুর সঙ্গে এক দশক আগে মতবিরোধ হলে তাঁকে গৃহবন্দি করেন গাদ্দাফি। রয়েছেন গাদ্দাফির সরকারের জননিরাপত্তামন্ত্রী জেনারেল আবদুল ফাত্তাহ ইউনুস আল ওবেইদি। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি বেনগাজিভিত্তিক বিরোধী দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। আরো আছেন লিবিয়ার মুক্তি নামের জাতীয় ফ্রন্টের উপপ্রধান মোহাম্মদ আলী আবদুল্লাহ। এই দলটি অনেক দিন ধরে দেশ থেকে নির্বাসিত। বিশ্লেষকদের মতে, চলতি আন্দোলন দমনের ব্যাপারে কার্পণ্য করছেন না গাদ্দাফি। পশ্চিমাদের সঙ্গে লিবিয়ার বিচ্ছিন্নতার কারণে মিসর, তিউনিসিয়া বা বাহরাইনের মতো কূটনৈতিক চাপ তাঁর ওপর কাজ করবে না। যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল দেশগুলোর ক্ষেত্রে গণ-অভ্যুত্থান দমান করার জন্য সেনা অভিযান চালানো যতটা কঠিন ততটা কঠিন হবে না লিবিয়ার ক্ষেত্রে। কারণ তেলসমৃদ্ধির কারণেই দেশটির অবস্থান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটু ভিন্ন; তা দেশটির ক্ষমতায় যেই থাকুক না কেন। সূত্র : টেলিগ্রাফ।

No comments

Powered by Blogger.