‘অধিক সন্তান অধিক উপার্জন' এই নীতিতে বিশ্বাসী-বাউফলের চরে বাড়ছে মানুষ কমছে জমি by কামরুজ্জামান বাচ্চু

পটুয়াখালীর বাউফলে মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন ছোটবড় ১১টি চরে প্রায় ১২ হাজার লোকের বসতি। এখানে প্রতি পরিবারে গড় লোকসংখ্যা ৬ জন। অধিক সন্তান, অধিক উপার্জন। এ বিশ্বাসের কারণে চরবাসীরা জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ব্যবহার করতে নারাজ। তাই বছরের পর বছর বাড়ছে মানুষ, বাড়ছে নতুন বাড়িঘর। কমছে আবাদি জমি।


উপজেলার এ চরাঞ্চলের নিম্ন আয়ের লোকজনকে পরিবার পরিকল্পনার বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে হবে। তা না হলে গ্রামীণ অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করেন এলাকার সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রোজেক্ট ম্যানেজার হেমায়েত উদ্দিন জানান, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগ থাকলেও বাউফলে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে জনবল সঙ্কট, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলগুলো দুর্গম এলাকা হওয়ায় পরিবার পরিকল্পনার বাস্তবায়ন কার্যক্রম আলোর মুখ দেখছে না। তিনি আরও বলেন, উপজেলার বিশাল জনগোষ্ঠীর এক বড় অংশ বসবাস করে অনুন্নত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দুর্গম চরাঞ্চলে। যেখানে পৌঁছায় না জন্মনিয়ন্ত্রণের সেøাগান ‘দুটি সন্তানের বেশি নয়, একটি হলে ভাল হয়।’ চরাঞ্চলে বসতির মধ্যে ধর্মান্ধ ও কুসংস্কার আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। উপজেলার চরমিয়াজান, চরবেরেট, চরদিয়ারা, চরঅডেল, চরকচুয়া, চরফেডারেশনসহ প্রায় ১৮টি চরের বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির অস্বাভাবিক চিত্র পাওয়া গেছে।
চরমিয়াজানের গ্রাম্যচিকিৎসক আবদুল বারেক সিকদার জানান, চরাঞ্চলে কোন প্রকার আধুনিক চিকিৎসাসেবা না থাকায় অনাকাক্সিক্ষত গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে মারা পড়ছে গর্ভবতী মায়েরা। সামান্য সচেতনরা উপজেলায় এসে গোপনে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বা ইনজেকশন কিনে নেয়Ñ তাও আবার স্বামী বা পরিবারের সদস্যদের না জানিয়ে এসব ব্যবহার করতে হয়। চর ফেডারেশনের আলম ফকিরের স্ত্রী ফিরোজা বেগম (২৫)। তার বিয়ে হয় ১০ বছর আগে। বাল্যবিয়ে হলেও ফিরোজা এখন ৩ মেয়ে ১ ছেলের জননী। তার স্বামী আরও সন্তান নিতে চায়। এ চরের গৃহবধূ শাহিনুরের ৬ সন্তান, হেলেনার ৫ সন্তান, হাসিনার ৪ সন্তান। এদের প্রত্যেকের স্বামী আরও সন্তান নিতে চায়। তাদের ধারণা হচ্ছে, বেশি সন্তান হলে ভূমিদস্যু লাঠিয়ালদের হাত থেকে ফসল রক্ষা করতে পারবে। পাশাপাশি আয় রোজগারও বেশি হবে। এ চরের শতকরা ৬০ জন কৃষক, ৩০ জন জেলে ও ১০ জন লোক নিয়মিত কোন পেশায় নেই।
পাঁচ সন্তানের জননী চরমিয়াজানের রেহেনা বেগম (৩৫) বলেন, আল্লাহর দেয়া সৃষ্টিতে বাধা দিলে তিনি গোস্বা হন।
একই চরের মাজেদা বিবি ৬ সন্তানের জননী। তার ছেলে নেই একটিও। তাই তিনি ছেলে না হওয়া পর্যন্ত যত সন্তান নিতে হয়, ততবার নেবেন।
জনসংখ্যার এ অনিয়ন্ত্রিত অবস্থার বিষয়ে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. মোঃ মনজুরুল ইসলামের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, বাউফল মূল ভূখ-ের জনসংখ্যা প্রায় নিয়ন্ত্রিত। আগের মতো লোক বাড়ছে না, মানুষ সচেতন হয়েছে। তবে দুর্গম চরাঞ্চলে যানবাহন না থাকা, নিরাপত্তার অভাব, সংশ্লিষ্ট বিভাগে জনবল সঙ্কটের কারণে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তা ছাড়া ওই সব চরে লোকজন অশিক্ষিত ও ধর্মান্ধতার কারণে নিয়ন্ত্রণে রাখা কষ্ট সাধ্য। এ জন্য প্রয়োজন শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নসহ সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা।

No comments

Powered by Blogger.