রমজানে ঘাটতির আশঙ্কা ২ হাজার মেগাওয়াট

রমজানে বিদ্যুতের চাহিদা ধরা হয়েছে ছয় হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। বর্তমানে উৎপাদিত হচ্ছে গড়ে চার হাজার ৫০০ থেকে চার হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। অর্থাৎ গড়ে ঘাটতি থাকবে প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট। আর এই ঘাটতির ফলে দুর্ভোগের শিকার বিক্ষুব্ধ জনগণ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ওপর হামলা করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পিডিবির বিভিন্ন বিতরণ কম্পানির কর্মকর্তারা।


অন্যদিকে সরকারের দিক থেকে তরল জ্বালানিভিত্তিক কুইক রেন্টাল ও রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সচল রেখে রমজানে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সহনীয় রাখা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আরো বলা হয়েছে, রমজানে ইফতারি, তারাবি ও সেহরির সময় কোথাও আধা ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং করা হবে না।
গতকাল সোমবার বিদ্যুৎ ভবনে রমজানে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে সারা দেশ থেকে আগত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বিভিন্ন বিতরণ কম্পানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। এরপর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'ইফতারি, তারাবি ও সেহরির সময় যাতে দেশের মানুষ বিদ্যুৎ পায় আমরা সে ব্যবস্থা করব। এ সময় আধা ঘণ্টার বেশি কোথাও লোডশোডিং হবে না।' সারা দেশে আজানের সময় কোনো লোডশেডিং হবে না বলেও তিনি দাবি করেন।
রমজানে বিদ্যুতের চাহিদা সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, 'সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াট চাহিদা থাকবে। আমরা প্রয়োজনে সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করব। তবে গড়ে ছয় হাজার ৩০০ থেকে ছয় হাজার ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন করব আমরা।' দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন বেড়েছে দাবি করে বিদ্যুতের সঞ্চালন বিষয়ে তিনি বলেন, 'সাব-স্টেশনের সমস্যার কারণে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও আমরা তা সঞ্চালন করতে পারছি না।'
জ্বালানি উপদেষ্টা এসি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, 'দেশে এসি ব্যবহারের কারণে দেড় হাজার থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হয়। এসি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হলে বিদ্যুতের সমস্যা কমে যাবে।'
শিল্প-কল-কারখানা বন্ধ থাকা বাধ্যতামূলক করা হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, 'ঈদের সময় উৎপাদন বেশি থাকে। আমরা শিল্প মালিকদের অনুরোধ করব, তাঁরা যেন ইফতারি, তারাবি ও সেহরির সময় উৎপাদন কম করেন।' দোকান মালিকদের ওপর কোনো বিধি-নিষেধ আছে কি না সে ব্যাপারে তিনি বলেন, 'পুরনো নিয়মেই অর্থাৎ রাত ৮টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা থাকবে।' দোকান মালিকদের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য অনুরোধ করা হবে বলেও তিনি জানান।
তবে পিডিবির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানিয়েছেন, আগামীকাল বুধবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের বৈঠক হবে। বৈঠকে শিল্প-কারখানা বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বন্ধ রাখার ব্যাপারে আলোচনা হবে।'
বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড কম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সূত্রে জানা যায়, দেশে বর্তমানে সর্বোচ্চ ছয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালন করার মতো অবকাঠামো রয়েছে। এই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও মাঝে-মধ্যে সঞ্চালনে সমস্যা দেখা দেয়। যদি এর বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় তাহলে কোনোভাবেই তা সঞ্চালন করে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব নয়।
বিদ্যুৎ ভবনে গতকালের সভায় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ ইনামুল হক এবং পাঁচটি বিদ্যুৎ বিতরণ কম্পানির (বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কম্পানি, ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যোগ দেন। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বিতরণ কম্পানির কর্মকর্তারা দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সাব-স্টেশনগুলোতে হামলার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন জ্বালানি উপদেষ্টা, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।

No comments

Powered by Blogger.