রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ফের টেকনাফ উখিয়ায় তৎপর মৌলবাদীরা-শরণার্থীদের শিবিরে উস্কানি দিচ্ছে এরা কারা, কোন্্ উদ্দেশ্যে বিদেশী টিভি চ্যানেলে পাঠানো হচ্ছে সাজানো ভিডিওচিত্র? by এইচএম এরশাদ

আরাকান অঞ্চলের রোহিঙ্গাদের অবৈধ অভিবাসী উল্লেখ করে তাদের দেশান্তর করার মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের ঘোষণার বিষয়টিকে পুঁজি করে স্বার্থান্বেষী মহল ফের সীমান্তে ষড়যন্ত্রে নেমেছে। বাবড়ি চুল, পাজামা-পাঞ্জাবি পরিধেয় ও কাঁধে ব্যাগ বহনকারী অচেনা একাধিক যুবক সোমবার সকালে টেকনাফ ও উখিয়ার দুটি শরণার্থী শিবির


এবং বস্তির রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সাক্ষাত করেছে। শরণার্থী শিবিরে গোপনে বসানো রোহিঙ্গাদের ইন্টারনেট ব্যবহার করে ওই যুবকরা বেশ কিছু গোপন ঠিকানা ও পরামর্শ দিয়ে গেছে বলে শরণার্থী ক্যাম্পের একটি সূত্রে জানা গেছে। অচেনা ওসব যুবক আন্তর্জাতিক জঙ্গী এবং রোহিঙ্গা সংগঠন আইটিএম-এর নেতা বলে সূত্রটি জানিয়েছে। সব জঙ্গী সংগঠন ও জামায়াত-শিবির ক্যাডারদের অপতৎপরতায় নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজার সীমান্ত এলাকার লোকজনের মাঝে। স্থানীয় বাসিন্দারা আবারও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটানোর আশঙ্কা করছেন। অবশ্য মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের ওই ঘোষণার পর থেকে সীমান্ত এলাকায় বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবি ৪২ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল জাহিদ হাসান। পাশাপাশি সাগরপথে কোস্টগার্ডের টহলও জোরদার করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী সংগঠন আরএসও বিলুপ্ত হওয়ার সময় তাদের ভারি আগ্নেয়াস্ত্রগুলো জামায়াত-শিবিরের কাছে বিক্রি করেছিল। বিক্রীত ওইসব অস্ত্রের কয়েকটি ভারি অস্ত্র ফের তাদের হাতে নগদ মূল্যে ফিরিয়ে নেয়া যায় কিনা, এ ব্যাপারে জামায়াত-শিবিরের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে গোপনে সাক্ষাত করতে অচেনা ওই যুবকরা কক্সবাজার ও সীমান্ত এলাকায় এসেছে বলে সূত্রটি জানায়।
মিয়ানমারে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া রোহিঙ্গা-রাখাইন জাতিগত দাঙ্গার পেছনে জামায়াত-শিবির এবং একাধিক জঙ্গী গ্রুপের সম্পৃক্ততা এবং দুটি এনজিও সংস্থার প্রতিনিধিদের ইন্ধন ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই জঙ্গী গ্রুপের নেতারা টেকনাফ-উখিয়ার দুটি শরণার্থী শিবির ও অবৈধভাবে বসবাসকারী বস্তিতে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সোমবার ভোরে গোপন বৈঠক করেছে বলে সূত্রটি আভাস দিয়েছে। আর অচেনা ব্যক্তিরা রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাত করার পেছনে কী রহস্য রয়েছে, এ বিষয়ে ভাবিয়ে তুলেছে ওয়াকিফহাল মহলকেও। ৪ দলীয় জোট সরকারের মদদে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীসহ অন্তত ৪ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়ে গেছে এখনও। ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’র মতো আবারও রোহিঙ্গাদের দেশে এনে ফায়দা হাসিল করতে মরিয়া সব মৌলবাদী ও জঙ্গী গ্রুপের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছে সচেতন মহল। সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা বলেছেন, রোহিঙ্গারা যাতে ফের এদেশে শরণার্থী হয়ে না আসে, এজন্য সরকারী সংস্থাগুলোকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে তারা প্রস্তুত রয়েছেন।
সূত্র জানায়, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমের ওপর সেদেশের সরকার ফের নানা রকমের অত্যাচার শুরু করে দিয়েছে এবং এতে রোহিঙ্গারা মানবিক বিপর্যয়ের শিকার বলে সাজানো কিছু ভিডিওচিত্র ইন্টারনেটে রোহিঙ্গা সংগঠন আইটিএম নেতারা আলজাজিরা, সিএনএন ও রেডিও তেহরানসহ বিশ্বের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রেরণ করে চলেছে বলে জানা গেছে। রোহিঙ্গাদের অবৈধ অভিবাসী উল্লেখ করে তাদের দেশান্তর করার মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের ঘোষণার বিষয়টিকে পুঁজি করে সীমান্ত এলাকার গুটিকয়েক অত্যুৎসাহী লোক, এনজিও, দেশে অবস্থানকারী বিচ্ছিন্নতাবাদী রোহিঙ্গা নেতা, মৌলবাদী ও জঙ্গী গ্রুপ ফায়দা লুটতে নানা গুজব ছড়িয়ে সীমান্ত পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এদেশের জনগণ ছাড়াও রোহিঙ্গাদের স্বদেশ মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত মিরজাল জাইন উদ্দিনও মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। অথচ বিভিন্ন গুজব রটিয়ে স্বার্থান্বেষী মহল সীমান্তে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার এবং আবারও রোহিঙ্গা আনার পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। ওসব ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।

No comments

Powered by Blogger.