সরকারি হস্তক্ষেপের বদলে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ জরুরি-অস্থির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতার অন্যতম কারণ দলীয়করণ ও সরকারি হস্তক্ষেপ। বুয়েট উপাচার্যের দলীয় বিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তগুলোই সেখানে গণপদত্যাগ ডেকে এনেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে সিন্ডিকেট কর্তৃক পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোটি টাকা জোগানোর সিদ্ধান্তে।


বিশ্ববিদ্যালয় কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান নয়, তাই তড়িঘড়ি তাদের এমন সিদ্ধান্তে অনেকেই অবাক হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন না হওয়ার কারণও মূলত ক্ষমতাসীন দলের হিসাবনিকাশ। এর আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। এখন ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। প্রশাসন ও শিক্ষকদের মধ্যে বিরোধ পরিলক্ষিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও।
আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করি যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্বায়ত্তশাসন আছে বলা হলেও, তা ক্রমশ কাগুজে বিষয়ে পরিণত হয়েছে। একসময় মূল রাজনৈতিক দলগুলোর লেজুড়বৃত্তিই ক্যাম্পাসে সহিংসতার জন্ম দিয়েছিল। সেই অপসংস্কৃতির সঙ্গে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দলীয়করণের মহোৎসব শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। অনেক ক্ষেত্রে অনিয়ম নিয়মে পরিণত হয়েছে কিংবা অনিয়মের প্রতিবাদ না করার মধ্য দিয়ে কথিত ‘শান্তি’ বিরাজ করছে। একশ্রেণীর শিক্ষক ক্ষমতাসীনদের নেক নজরে থাকার জন্য নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে চলেছেন। আবার তাঁদের প্রতিপক্ষ প্রতিবাদের নামে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করার প্রয়াস করেন এবং ভবিষ্যতে যাঁরা ক্ষমতায় আসবেন, তাঁদের কৃপাপ্রার্থী হন। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, সেই দলের সমর্থক শিক্ষকেরা প্রশাসনিক কর্তৃত্ব লাভ করেন; কিন্তু সেটি মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে হলে সমস্যা এত প্রকট হতো না।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সংকটের মূলে রয়েছে কায়েমি স্বার্থ ধরে রাখতে দুই বিবদমান পক্ষের লড়াই। কিছুদিন আগেও যাঁরা নির্বাচিত উপাচার্য পেতে আন্দোলন করেছিলেন, তার বিরোধিতা করা যেমন সংগত নয়, তেমনি মেয়াদোত্তীর্ণ ডিন, সিন্ডিকেট ও সিনেট সদস্যদের বিষয়টি অমীমাংসিত রেখে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনও গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আন্দোলনরত শিক্ষকদের একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে হবে। আর সে ক্ষেত্রে আলোচনার বিকল্প নেই। বুয়েটে পরিস্থিতি আরও জটিল রূপ নিয়েছে হঠাৎ করে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ঘোষণায়। আন্দোলনরত শিক্ষকেরা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। আশা করি, সেখানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা করবেন না, যেমনটি করেননি এর আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা সমাধানে।
যেসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত, সেগুলোতে এই আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের পাশাপাশি সরকারি হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। আর যেসব বিশ্ববিদ্যালয় এর বাইরে আছে, সেগুলোতেও মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সব নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। অন্যথায় শিক্ষাঙ্গনের এই অস্থিরতা বন্ধ করা যাবে না।

No comments

Powered by Blogger.