পদ্মা সেতু ও স্বচ্ছতা-বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন প্রকাশ করুন

বর্তমান সরকার গৃহীত সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন উদ্যোগগুলোর মধ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্প অন্যতম। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে সরকার এ বিষয়ে যে তৎপরতা দেখিয়েছে তাকে আন্তরিক না বলবার অবকাশ নেই। এ আন্তরিক তৎপরতার কারণে এ প্রকল্পে জনসাধারণের সমর্থন মিলেছে, প্রস্তাবিত সেতু 'স্বপ্নের সেতু' বলে আখ্যায়িত হয়েছে।


শুরুতে বিভিন্ন মহল থেকে আশা প্রকাশ করা হয়েছিল, এ সরকারের আমলে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ বিপুল জনসমর্থন অর্জন করতে পারবে। কিন্তু দিনে দিনে বছর গড়ালে ক্রমাগত এ সংশয়ই ঘনীভূত হতে থাকে যে, বর্তমান সরকারের মেয়াদে সেতুর কাজ পুরোদমে শুরু হতে পারবে কিনা। নানামুখী তর্ক-বিতর্ক এ সংশয় বাড়িয়ে তুলছে। সর্বশেষ ২৯ জুন পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে স্বপ্নটির বাস্তবায়ন যে সুদূরপরাহত হয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। যদিও যে কারণে বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিল করেছে, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বাংলাদেশ বিকল্প উপায়ে অর্থসংস্থানের চেষ্টা করে যাচ্ছে, বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনাও চলছে। স্বপ্ন বাস্তবায়নের সকল পরিকল্পনা ও সংকল্পই প্রশংসনীয়। বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের ব্যাপারে অবশ্য এরই মধ্যে অর্থমন্ত্রী গণমাধ্যমের কাছে সরকার গৃহীত পদক্ষেপসমূহের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তারপরও প্রশ্ন থেকেই যায়। বিশ্বব্যাংক কেন এ ঋণ প্রকল্প বাতিল করল? বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে কী আছে তা নিয়ে সরকার ও বিশ্বব্যাংকের কর্তাব্যক্তিদের নানামুখী কথাবার্তায় কিছু জানা গেলেও অনেক কথাই অজানা থেকে গেছে। আর সেই অজানা কথার ওপর নানা অনুমান ও আশঙ্কা ডালপালা মেলছে। প্রসঙ্গটি দুর্নীতির বলে নানা মুখরোচক গল্পও ছড়াচ্ছে। বিরোধী দলের তরফেও নানা অভিযোগ উত্থাপিত হচ্ছে। সেতু বিষয়ে ভবিষ্যৎ যে কোনো উদ্যোগ গ্রহণের আগে সরকারের উচিত, অনুমান-আশঙ্কা ও মুখরোচক গল্পের অবসান ঘটানোর পদক্ষেপ নেওয়া। সরকারের ভাষ্যে আস্থা রেখেই আমরা বিশ্বাস করতে চাই, পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি এবং বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তটি অযৌক্তিক। কিন্তু সাধারণের মধ্যে সে বিশ্বাস দৃঢ়মূল করতে হলে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা দরকার। বিশ্বব্যাংক ইতিমধ্যেই বলেছে, সদস্য দেশগুলোর প্রতি অঙ্গীকারের কারণেই তাদের তরফে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা সম্ভব নয়। কিন্তু সরকার চাইলে সেটি প্রকাশ করতে পারে। সরকার ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাংকের কাছে লেখা কিছু চিঠি প্রকাশ করেছে। সে ধারা অব্যাহত রেখে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনটিও প্রকাশ করা যেতে পারে। জাপানসহ বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা পদ্মা সেতু বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপের দিকে দৃষ্টি রাখছে। তাদের বিশেষ আগ্রহ এ বিষয়ে দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে সে বিষয়ে সরকার কী করে, তা নিয়ে। বলাবাহুল্য, বর্তমানে যেমন ভবিষ্যতেও তেমনি বিশ্বব্যাংকসহ ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ও দেশগুলোর সঙ্গে বহু প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে হবে আমাদের। সে ক্ষেত্রে পদ্মা সেতু নেতিবাচকভাবে অমীমাংসিত প্রসঙ্গ হিসেবে উঠলে তা বাংলাদেশের জন্য সুখকর হবে না। তাই বিষয়টির সুরাহা হওয়া উচিত। অন্যদিকে বাংলাদেশ যদি নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের ব্যাপারে দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তবে সবার আগে জাতীয় সংহতির বাতাবরণ তৈরি করতে হবে। অর্থনীতির চাপ সামাল দিতে সকলকে একমত হতে হবে। সে জন্য সেতু বিষয়ে এ যাবৎ যেসব প্রশ্ন উঠেছে, তার উত্তর মিলতে হবে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন প্রকাশ ও প্রতিবেদনে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্তসাপেক্ষে খণ্ডন করাটাই সরকারের পরবর্তী যৌক্তিক পদক্ষেপ হতে পারে।
 

No comments

Powered by Blogger.