হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয় বটগাছে-টঙ্গীতে স্কুলছাত্রীসহ দুই খুন

রাজধানীর উপকণ্ঠ গাজীপুরের টঙ্গীতে রবিবার রাতে দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে নবম শ্রেণীর ছাত্রী জান্নাতুল মাওয়া প্রাপ্তিকে (১৪) চারতলা ভবনের ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। টঙ্গীর উত্তর আরিচপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হত্যার অভিযোগে পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে।


নিহত প্রাপ্তি মাছিমপুর এলাকার প্রয়াত নাজিমউদ্দিনের মেয়ে। সে টঙ্গীর রেনেসো স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল।
অন্য ঘটনায় কামাড়পাড়া এলাকায় এক যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে লাশ বাঁশ দিয়ে গাছের ডালে 'ক্রুশবিদ্ধ যিশুর' মতো ঝুলিয়ে রাখা হয়। গতকাল সোমবার লাশটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই যুবকের পরিচয় জানা যায়নি।
প্রাপ্তির চাচা ব্যবসায়ী মাসুদ মিয়া জানান, প্রায় প্রতিদিন বিকেলে প্রাপ্তি উত্তর আরিচপুরে বান্ধবী রোকেয়া সুলতানা বিন্তির বাসায় আড্ডা দিত। রবিবার বিকেলে সে বিন্তিদের বাসা যায়। সন্ধ্যার পর ওই এলাকার এক ব্যক্তি ফোন করে ছাদ থেকে পড়ে প্রাপ্তির মৃত্যুর সংবাদ জানায়। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য তিনি বিন্তির বাবা সিরাজুল ইসলামের কাছে গেলে প্রথমে তিনি ঘটনাটি অস্বীকার করেন। পরে জানান, প্রাপ্তি ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সঙ্গে বিন্তি ও তার ভাই আছে। কোন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলেও তিনি না জানিয়ে সময়ক্ষেপণ করেন।
মাসুদ মিয়া জানান, রাত ১০টার দিকে বাসার কাছে লাশ অ্যাম্বুলেন্সে রেখে সঙ্গে থাকা লোকজন পালিয়ে যায়। অ্যাম্বুলেন্সচালক তাঁদের জানান, বিন্তি ও তার ভাই উত্তরায় নেমে গেছে। পরে থানায় খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে বিন্তির বাবাকে আটক করে। পরে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বিন্তিকে আটক করা হয়।
মাসুদ অভিযোগ করেন, পরিকল্পিতভাবে বিন্তির পরিবারের লোকজন প্রাপ্তিকে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করেছে। এ কারণেই সন্ধ্যার আগে সে ছাদ থেকে পড়লেও তাঁদের জানানো হয়নি। এ ঘটনায় তিনি বিন্তি ও তার বাবা সিরাজুল ইসলাম, মা জমিলা আক্তার ও ভাই মাহ্তাবকে আসামি করে টঙ্গী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘটনাস্থলের পাশের এক বাসিন্দা সাংবাদিকদের বলেন, 'শব্দ পেয়ে আমরা এসে দেখি মেয়েটি যন্ত্রণায় ছটফট করছে। পরে জানতে পারি, সে হাসপাতালে মারা গেছে।'
টঙ্গী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল আজিজ জানান, আটককৃত বিন্তি জানিয়েছে, প্রাপ্তি নিজেই লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। প্রথমে সে নিচের বিদ্যুতের তারের ওপর পড়ে। সেখান থেকে গড়িয়ে মাটিতে পড়ে আহত হয়। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে প্রথমে টঙ্গী হাসপাতাল এবং পরে ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা জানান তার মৃত্যু হয়েছে।
ছয় বছর আগে প্রাপ্তির বাবা টঙ্গীর ধনাঢ্য ব্যবসায়ী নাজিমউদ্দিন সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। এর এক বছর পর রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয় প্রাপ্তির একমাত্র ভাই কলেজছাত্র সাহাদাত হোসেন তমাল। রবিবার প্রাপ্তির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
অপর ঘটনায় গতকাল টঙ্গীর কামারপাড়া সেতুর পাশের একটি বটগাছের ডালে যুবকের লাশ ঝুলতে দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে জানায়। বটগাছের বড় দুটি ডালে একটি বাঁশ আড়াআড়ি বেঁধে যুবকের দুই হাত তাতে বেঁধে ক্রুশবিদ্ধ যিশুর মতো ঝুলিয়ে রাখা হয়। তাঁর গলায় আনুমানিক আড়াই ফুট লস্বা একটি ছোরা রশি দিয়ে ঝোলানো পাওয়া যায়। নিহত যুবকের শরীরের বিভিন্ন অংশে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন আছে। পরনে ছিল নীল জিন্সের প্যান্ট ও লাল টিশার্ট।
টঙ্গী মডেল থানার এসআই মাহমুদ মহিন জানান, খুনিরা গভীর রাতে এই যুবককে হত্যা করে লাশ বটগাছে ঝুলিয়ে রেখে চলে যায়। সম্ভবত গলায় ঝোলানো ছোরা দিয়েই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.