ঔপনিবেশিক আমলে নির্যাতনব্রিটেনের বিরুদ্ধে তিন কেনীয়র মামলার শুনানি শুরু

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে নির্যাতনের শিকার তিন কেনীয় নাগরিকের করা ক্ষতিপূরণ মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। বাদীদের অভিযোগ, মাও মাও বিদ্রোহের সময় ব্রিটিশ সেনাদের হাতে তাঁরা নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ব্রিটেন সরকারের বিরুদ্ধে করা মামলাটির শুনানি গতকাল সোমবার লন্ডনের একটি আদালতে শুরু হয়েছে।
গত শতকের পঞ্চাশের দশকে কেনিয়ায় ব্রিটিশবিরোধী মাও মাও বিদ্রোহ হয়।
বিদ্রোহকালীন নির্যাতনের শিকার ওই তিনজনের নাম জেন মুথোনি মারা, পাওলো মুওকা এনজিলি এবং ওয়ামবুগু ওয়া নিয়িংগি। তাঁদের বয়স ৭০ থেকে ৮০-র ঘরে। এর মধ্যে এনজিলিকে খোজা করে দেয় ব্রিটিশ সেনারা। নিয়িংগিকে ব্যাপক মারধর করা হয়। মারাকে আটক কেন্দ্রে রেখে যৌন নির্যাতন করা হয়। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তারা ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন_এই মর্মে গত বছরের জুলাই মাসে রুল জারি করেন একজন ব্রিটিশ বিচারপতি। এর এক বছর পর মামলার শুনানি শুরু হলো। শুনানি চলবে টানা দুই সপ্তাহ।
বাদী পক্ষের আইনজীবী মার্টিন ডে শুনানি শুরুর আগে সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা খুশি যে শেষ পর্যন্ত আমাদের মক্কেল আদালতে তাদের অত্যাচারের কাহিনী বলতে পারবেন। আমরা আত্মবিশ্বাসী, ন্যায়বিচার পাব।' তিনি জানান, বাদীরা সবাই চান, এ জন্য ব্রিটিশ সরকার ক্ষমা চাইবে। পাশাপাশি অত্যাচারের শিকার জীবিত প্রায় এক হাজার জনের জন্য একটি কল্যাণ তহবিলের ব্যবস্থা করবে ব্রিটিশ সরকার, যাতে তাঁরা জীবনের শেষভাগে অন্তত একটু মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে পারেন।
তবে শুরু থেকেই ব্রিটিশ সরকার এ মামলার বিরোধিতা করছে। তাদের দাবি, ঘটনার অনেক পরে ব্যাপারটি আদালতে তোলা হয়েছে। তবে বাদীপক্ষের দাবি ছিল, এটি একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। তাই সময় এ ক্ষেত্রে বিবেচ্য নয়। কেনিয়ার সরকার ও মানবাধিকার কমিশন বাদীদের সমর্থন দিচ্ছে। মামলার চতুর্থ বাদী এনদিকু মুতউইওয়া মুতুয়া ইতিমধ্যে মারা গেছেন।
শুনানির সময় মাও মাও বিদ্রোহকালীন আট হাজার গোপন নথি আদালতে পেশ করা হবে। ১৯৬৩ সালে কেনিয়া স্বাধীনতালাভের পর নথিগুলো ব্রিটেনে পাঠানো হয়।
প্রসঙ্গত, ১৯৫২ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত মাও মাও বিদ্রোহ হয়। এ সময় ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। কারো কারো মতে, এ সংখ্যা অনেক বেশি হবে। সে সময় হাজারো মানুষকে আটক রেখে নির্যাতন করে ব্রিটিশ সেনারা। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দাদাও ছিলেন। সূত্র : এএফপি, বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.