গার্মেন্টে আবার অশান্তি-নেপথ্যে গভীর ষড়যন্ত্রের সন্দেহ

আবার অস্থির দেশের প্রধান রপ্তানি খাত গার্মেন্ট শিল্প। বেতন বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন শ্রমিকরা। সড়ক অবরোধ করা হয়েছে। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ২০০ ফ্যাক্টরি। তৃতীয় দিন প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও বৃহস্পতিবার আবারও উত্তাল হয়ে ওঠে আশুলিয়া এলাকা।


শ্রমিকরা কর্মক্ষেত্রে গিয়ে স্বাক্ষর করে নেমে আসেন রাস্তায়। শ্রমিক বিক্ষোভের চতুর্থ দিনে আশুলিয়া গিয়ে শ্রমিকদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আইন প্রতিমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। আইন নিজেদের হাতে তুলে না নেওয়ার জন্য শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
দেশের গার্মেন্ট খাতে কর্মরত শ্রমিকদের বঞ্চনা নতুন কিছু নয়। এই খাতের শ্রমিকদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো মজুরি কাঠামো ছিল না। ফলে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পে অস্থিরতা ছিল। একটি মজুরি কাঠামো তৈরির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে মজুরি বোর্ড গঠন করার পর মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি নূ্যনতম মজুরি কাঠামো তৈরি করা হয়। শ্রমিকরা নূ্যনতম মজুরি পাঁচ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু মালিকপক্ষ ওই সময় সে দাবি মানতে অপারগতা প্রকাশ করায় শেষ পর্যন্ত ত্রিপক্ষীয় আলোচনায় গার্মেন্ট শ্রমিকদের নূ্যনতম মজুরি তিন হাজার টাকা নির্ধারিত হয়। অনেক দেনদরবারের পর গার্মেন্ট শিল্পে বেতন কাঠামো চালু করা হয়েছিল। সেই বেতন কাঠামো বর্তমান সময়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হলে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের মধ্য দিয়ে তা মিটিয়ে ফেলা যেতে পারে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন অনেকটাই নির্ভর করে তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর। এই শিল্পে যেমন প্রচুর বিনিয়োগ হয়েছে, তেমনি বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানও হয়েছে। সব মিলিয়ে গার্মেন্ট শিল্প এখন দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। স্বাভাবিকভাবেই এই শিল্প স্থবির হয়ে পড়লে এর প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে পড়বেই। গার্মেন্ট শিল্পে গত কয়েক দিনের অস্থিরতা তাই অনেককেই ভাবিয়েছে। আগে গার্মেন্ট শিল্পের শ্রমিকরা যে মজুরি পেতেন, তা ছিল বাজারদরের তুলনায় খুবই কম। তদুপরি কিছু কিছু গার্মেন্টে বেতন-বোনাস-ওভারটাইম ঠিকমতো না দেওয়া, কথায় কথায় চাকরি চলে যাওয়া ইত্যাদি অভিযোগ ছিল। নতুন বেতন কাঠামো চালু হওয়ার পরও তা নিয়ে অসন্তোষ থাকতে পারে। বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন কাঠামো কতটা সংগতিপূর্ণ- এমন প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে। স্বাভাবিকভাবেই এই সুযোগ নিয়েছে নেপথ্যের উস্কানিদাতারা। তারাই শ্রমিকদের ভাঙচুরের দিকে ঠেলে দিয়েছে। অভিযোগটি যে একেবারে অমূলক, তা নয়। বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পে ক্রমবর্ধমান অগ্রগতিতে ঈর্ষান্বিত কিছু দেশ বরাবরই এই অগ্রগতিকে থামিয়ে দেওয়ার জন্য নানা রকম চক্রান্ত করে আসছে। পাশাপাশি সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য কিছু রাজনৈতিক মদদের অভিযোগও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
বুধবার প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের কথা জানিয়ে আশুলিয়া এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভ বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু পরদিন আবার সেই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। বিশেষ করে নেপথ্যের একটি শক্তি যে উস্কানি দিচ্ছে, এটা বোধ হয় এখন স্পষ্ট। বৃহস্পতিবার আইন প্রতিমন্ত্রীও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে আশুলিয়া এলাকায় গেছেন। কিছুদিন পর পর গার্মেন্ট খাতে শ্রমিক অসন্তোষ ও শ্রমিকদের বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠার যে ঘটনা ঘটছে, এর স্থায়ী সমাধান দরকার। এ জন্য সরকার-শ্রমিক-মালিক- এই তিন পক্ষকেই ভূমিকা রাখতে হবে। দেশের অর্থনীতির এই প্রধান খাতটি যাতে কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সাম্প্রতিক শ্রমিক অসন্তোষ ও বিক্ষোভের নেপথ্যে যে ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা দরকার। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থেই গার্মেন্ট শিল্পকে রক্ষা করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.