বিদ্যুৎ পরিস্থিতি-উদ্বেগের সময়ে স্বস্তির বার্তা

গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ ঘাটতি বাড়তে পারে, এমন উদ্বেগ প্রতি বছরই প্রকাশ পায়। এ বছরেও ব্যতিক্রম নেই। রোববার সমকালে এ সংক্রান্ত খবরে বলা হয়, 'একদিকে সেচ মৌসুম, অন্যদিকে গরমের কারণে চাহিদা বাড়বে। বর্তমানে (শীত-বসন্তে) পিক আওয়ারে বিদ্যুতের ঘাটতি ৪শ' মেগাওয়াটের মতো, কিন্তু্তু এপ্রিলে তা দেড় হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যেতে পারে।'


এর একদিন আগে সন্দ্বীপ উপজেলা কমপ্লেক্সের জনসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে মিলেছে স্বস্তিদায়ক খবর_ 'চলতি বছরের মধ্যেই বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে।' একই দিন অর্থাৎ শনিবার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বা পিডিবি থেকেও জানানো হয়েছে_ 'জাতীয় গ্রিডে এ বছরেই আরও ২ হাজার ৮৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।' গ্রীষ্মে যে দেড় হাজার মেগাওয়াট ঘাটতি হওয়ার কথা, সেটা হয়তো পূরণ হবে না, কিন্তু আশায় আশায় থাকাই যায়। বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের কত দিবস-রজনীই তো কাটছে আধুুনিক সভ্যতার এ অনন্য অবদানের সুফল বঞ্চিত থেকে। শুধু ঘরে বা কর্মস্থলে অন্ধকারে থাকা নয়, বিদ্যুতের জোগান না থাকায় কৃষি ও শিল্প খাতে উৎপাদন বিঘি্নত হয়। উদ্যোক্তারা নতুন করে মূলধন খাটাতে ভরসা পান না। বিদেশি যেসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনার বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেন, তারাও থমকে থাকেন অবকাঠামোগত এই সমস্যার কারণে। বছরটি শেষ হতে না হতে এ যন্ত্রণা থেকে নিষ্কৃতি মিললে এতদিনের কষ্টের কথা আর মনে রাখতে চাইবে না। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০১৩ সালের মধ্যে ৭ হাজার মেগাওয়াট, ২০১৫ সালে ৮ হাজার এবং ২০২১ সাল নাগাদ ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের পাশাপাশি কয়লা ও পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবহারের পরিকল্পনাও সরকারের রয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি, যেমন সৌরশক্তি ও বায়ুশক্তি কাজে লাগানোর বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সন্দ্বীপের মতো দুর্গম দ্বীপভূমিতে গিয়েছিলেন ১০ লাখ সোলার হোম সিস্টেম এবং ২০ হাজার বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের কার্যক্রম উদ্বোধন করার জন্য। ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড বা ইডকল এ প্রকল্পে অর্থের জোগান দিয়েছে। আগামী এক বছরে তারা আরও ১০ লাখ সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের জন্য অর্থ জোগান দেবে। প্রত্যন্ত এলাকাগুলোর জনগোষ্ঠীর জন্য এ ধরনের প্রকল্পই প্রত্যাশিত। তবে আমরা চাইব সময়মতো পরিকল্পনার বাস্তবায়ন। চলতি বছরের শেষে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেই যে দম ফেলার অবকাশ মিলবে, সেটা বলা যাবে না। প্রতিনিয়ত এর চাহিদা বাড়তে থাকবে। উৎপাদনের পাশাপাশি বণ্টনের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলাও বড় সমস্যা। এ কাজে বিপুল বিনিয়োগের প্রয়োজন পড়ে। গ্রাহকদের কাছ থেকে ব্যয় অনুযায়ী অর্থ আদায় করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। নতুন যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে তার জ্বালানি ব্যয় বেশি পড়ছে এবং এ জন্য সরকারকে প্রচুর ভর্তুকি গুনতে হয়, যা রাজস্ব বাজেটে ভারসাম্যের ক্ষেত্রে উদ্বেগের কারণ। এর দায় কতটা গ্রাহকের ওপর চাপানো হবে এবং কতটাই-বা সরকার বহন করবে সেটা নিয়ে উপযুক্ত সমীক্ষা হতে পারে। একই সঙ্গে উৎপাদন ও বিতরণ প্রকল্প স্থাপন ব্যয় যতটা সম্ভব সীমিত রাখার বিষয়েও কিন্তু সতর্কতা চাই। অপরিকল্পিত শ্বেতহস্তী কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

No comments

Powered by Blogger.