পুরস্কারে স্নাত রণবীর কাপুর

‘কখনো ভাবিনি, অভিনেতা হব। ভাগ্যের চাকা ঘুরে এখন আমি ক্যামেরার সামনে’—হরহামেশা এ ধরনের বক্তব্য দিতে দেখা যায় তারকা অভিনয়শিল্পীদের। ব্যতিক্রম রণবীর কাপুর। তাঁর ভাষায়, ‘বোধ হওয়ার পর থেকেই জেনেছি, আমাকে অভিনেতা হতে হবে। এর বিকল্প নেই।


’ রাজ কাপুরের নাতি, ঋষি কাপুর-নীতু সিং কাপুরের ছেলে অভিনয় করবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে এত অল্প সময়ে যে সে খান-সাম্রাজ্য অতিক্রম করে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরে নেবে, তা রীতিমতো অনেকের জন্য বিস্ময়। এবার সব কটি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার ঘরে তুলেছেন রণবীর কাপুর। ‘ফিল্মফেয়ার’-এর দর্শক এবং সমালোচক তো তাঁকে জোড়া পুরস্কার এনে দিয়েছে। রকস্টার ছবির বদৌলতে এত বড় সাফল্য! রকস্টার বক্স অফিস হিট, ছবির অ্যালবামও সুপারহিট। নায়িকার কারণে হোক কিংবা জটিল চিত্রনাট্য, ছবিটি আমজনতার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি মোটেও। তবে রণবীর পেরেছেন। তাঁর অভিনয় দেখে স্বয়ং বোদ্ধা দর্শকেরাও রায় দিয়েছেন—এত কম সময়ে এত নিখুঁত অভিনয় কী করে শিখল কাপুরপুত্র? অবশ্য রণবীরের পুরস্কার জয় এবারই প্রথম নয়। অভিনয় জীবনের প্রথম ছবিতে শ্রেষ্ঠ নবাগত তারকার সব কটি পুরস্কার পেয়ে রণবীর জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি এসেছেন। তার দুই বছর পর ওয়েক আপ সিড, আজব প্রেম কি গজব কাহানির জন্য বাগিয়ে নিয়েছিলেন ‘ফিল্মফেয়ার’ সমালোচকদের পুরস্কার। ২০১০-এ রাজনীতি ছবিতেও ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন নানা পাটেকর, নাসিরুদ্দিন শাহ, মনোজ বাজপেয়ি, অজয় দেবগন, অর্জুন রামপালকে। রাজনীতি ছবির প্রাণই বলা হয়েছিল রণবীরকে। স্বাভাবিকভাবেই রণবীর নানা পদের বিশেষণে প্লাবিত হচ্ছেন। ‘সময়ের সুপারস্টার’, ‘প্রজন্মের একমাত্র সুপারস্টার’, ‘খান-রোশনের জন্য হুমকি’, ‘শাহরুখের পর একমাত্র রোমান্টিক নায়ক’ ইত্যাদি।
অনেকেই ভাবেন, রণবীরের সাফল্য বুঝি তাঁর সমসাময়িক ইমরান খানকে নির্ঘুম রাত্রির জোগান দেয়! রণবীর-ইমরান নাকি এখন একে অন্যের মুখ দেখতে পারেন না! এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে রণবীরই বলেন, ‘ইমরান এতটা ছোট মনের মানুষ নয়। আমি যেমন ওর দিল্লি বেলি দেখে মুগ্ধ হয়ে ওর সম্মানে পার্টি করেছি, ইমরানও তেমনি জানে ওর এবং আমার অবস্থান সম্পূর্ণ আলাদা। আমি কখনোই ইমরানের অবস্থান ছিনিয়ে নিতে পারব না। ইমরানও পারবে না আমার অবস্থানে জায়গা করে নিতে। সুতরাং, কী দরকার অন্যকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করে?’ রণবীর নিজেকে প্রমাণ করে ছেড়েছেন। তবে তাঁর ভাষায়, ‘আমি এখনো মনের মতো অভিনয় করতে পারিনি। অনুরাগ বসুর বারফি (প্রিয়াঙ্কা, ইলিয়েনা) ছবিতে মন-প্রাণ উজাড় করে কাজ করছি। মূক ও বধির চরিত্র, অথচ পুরো ছবিটাই সিচুয়েশনাল কমেডি। শুটিংয়ের পুরোটা সময়ই প্রিয়াঙ্কা এবং আমাকে ভুলে যেতে হয়েছে আমাদের তারকা-সত্তাকে। আমরা চরিত্রের সঙ্গে মিশে গিয়ে ক্যামেরার বাইরেও কথাবার্তা বন্ধ করে দিয়েছিলাম।’ অনুরাগ বসুর কিশোর কুমার এবং রাজীব গান্ধী ছবিতেও রণবীরের অভিনয় করার কথা। রাজকুমার হিরানির আগামী ছবিতে আনুশকা শর্মার বিপরীতে এবং করন জোহর প্রযোজিত অয়ন মুখার্জির ইয়ে জাওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি (দীপিকা) ছবিতে কাজ করতে যাচ্ছেন রণবীর। এ বছরের ভালোবাসা দিবসে শোনা গেছে, নার্গিস নয়, রণবীর আবারও প্রেমের নৌকা ভিড়িয়েছেন ক্যাটরিনার মনের ঘাটে। কেউ আবার দাবি করেন, দীপিকা পাড়ুকোনের সঙ্গে পুরোনো সম্পর্কটা ঝালাই করতে চলেছেন রণবীর। এ প্রসঙ্গে রণবীর বলেন, ‘প্রথমত, ভালোবাসা দিবসেই আমি বিশ্বাস করি না। আমার সাবেক প্রেমিকাদের জিজ্ঞাসা করলে জানতে পারবেন, আমি ১৪ ফেব্রুয়ারি পরিবারের সঙ্গে ভালোবাসা ভাগাভাগি করতেই বেশি পছন্দ করি। আর এ বছর তো আমি একা! একা থাকার অন্য রকম মজা আছে। তাই এ সময়টা উপভোগ করছি।’
সত্য-মিথ্যার যাচাই সময়ই করে দেবে। তবে তাঁর ভক্তরা আপাতত দিন গুনছেন রণবীরের ওয়ার্ল্ড ট্যুর কনসার্টের। খুব শিগগির বিশাল দল নিয়ে দেশ-বিদেশ ঘুরবেন কাপুরতনয়। ক্যাটরিনা তো থাকছেনই, শহীদ কাপুরকেও রণবীর আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তাঁকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য। শহীদও প্রস্তাব পাওয়ামাত্র সম্মতি জানিয়েছেন। এখন যে রণবীরের সময়। তাঁকে ‘না’ করার সাধ্য কারোরই নেই।
 রুম্মান রশীদ খান
ডি এন এ, রিয়েল বলিউড, বিজনেস অব সিনেমা, বলিস্পাইস, বলিউড হাঙ্গামা ডট কম অবলম্বনে

No comments

Powered by Blogger.