দ্বীপজেলা ভোলা by এম. জহিরুল আলম

বাংলাদেশের একমাত্র দ্বীপজেলা ভোলা। সঙ্গত কারণে নদীভাঙনই এর প্রধান সমস্যা। প্রধান এ সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে যদি একবার ভূমির স্থিতিশীলতা আসে তবে কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অন্য সব সমস্যাই ধীরে ধীরে সমাধানের পথ খুঁজে পাবে।


যেখানে মানুষের প্রধান দুটি খাদ্য উপাদান শ্বেতসার ও আমিষ (ধান ও মাছ) উৎপাদনে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণই নয়, উদ্বৃত্ত দিয়ে দেশের অন্যান্য অংশের চাহিদা মেটানো হয়, সেখানে আমার প্রিয় জন্মস্থান ভোলা আধুনিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এতটা পিছিয়ে। এর মূল কারণ ওই যে সর্বনাশা নদীভাঙন। এখানে কর্মসংস্থান মূলত কৃষি ও মৎস্যনির্ভর। একই কারণে এখানে আরেকটি ঋণাত্মক প্রবণতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। ছাত্রজীবনের মেধাবী এসএসসি-এইচএসসিতে ভালো ফল অর্জনকারী ৮০-৯০ শতাংশ ছাত্রই উচ্চশিক্ষার্থে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে চলে যান। কিন্তু উচ্চশিক্ষা অর্জনের পর তারা কেউ-ই আর ভোলায় ফিরে আসেন না। এমনকি স্থায়ীভাবে সেটেল করার চিন্তা করেন বড় কোনো শহরে। অন্যদিকে ভোলায় জেলা-উপজেলা পর্যায়ের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের জন্য সরকারি কর্মকর্তারাও যেতে চান না বা গেলেও দ্রুত ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ কারণে ভোলার হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার নেই, কলেজগুলোতে শিক্ষক নেই। এ অবস্থাকে সঙ্গী করে আমার প্রিয় জন্মভূমি স্বপ্নের ভোলা কত দিনে কতটুকু এগোতে পারবে সে হিসাব মেলাতে সচেতন ভোলাবাসী গলদঘর্ম। পিছিয়ে পড়া জনপদ হিসেবে তিন পার্বত্য জেলা, হাওর ও মরুপ্রায় উত্তরাঞ্চলের জন্য যেভাবে পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ড, হাওর উন্নয়ন বোর্ড এবং বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের মাধ্যমে ওই সব এলাকার সাংবিধানিক অধিকার বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে, তেমনি পিছিয়ে পড়া জনপদ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ভোলার জন্য ভোলা উন্নয়ন বোর্ড অথবা ভোলা, হাতিয়া ও সন্দ্বীপের মতো দ্বীপগুলোর উন্নয়নে দ্বীপ উন্নয়ন বোর্ড গঠন করা হোক। প্রস্তাবিত ওই বোর্ডই সরকারের কাছে প্রস্তাব পেশ করবে পিছিয়ে পড়া ওই জনপদের উন্নয়নে কী কী কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা যায়।
ভোলার উন্নয়নের অগ্রাধিকার তালিকায় নিঃসন্দেহে এক নম্বরেই উঠে আসবে নদীভাঙন প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা। সত্তরের জলোচ্ছ্বাসের পর নদীর তীরে বাঁধ দেওয়াকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ভোলার মতো অতীব ভাঙনপ্রবণ এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধক কোনো প্রযুক্তি কার্যকর হবে কি-না তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান ছিলেন। তবুও বিদেশি বিশেষজ্ঞের সহায়তায় জরিপ কাজ চলে আসছিল। বিশেষ করে, একবিংশ শতাব্দীর যাত্রাকালেই কার্যকর উদ্যোগ গৃহীত হয়। নেদারল্যান্ডসের সহায়তায় জরিপ কাজের মাধ্যমে ভোলা সদর ও দৌলতখানে তিন ফেজে বল্গক ফেলার কাজের ডিজাইন করা হয়। ডিজাইন অনুযায়ী প্রথম ফেজের কাজ সমাপ্তির পর দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার চলে এলে এক অর্থবছর দ্বিতীয় ফেজের কাজ বন্ধ থাকে। এ পর্যায়ে ভোলার জেলা প্রশাসক ও ভোলার কতিপয় ব্যক্তির উদ্যোগের ফলে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজটি সমাপ্ত হয়। এখানে অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক কথা হলো, দেশের অন্যান্য এলাকার মতো ভোলাতে কৃত কাজের স্থানে নদী আর ভাঙেনি। অর্থাৎ আশাতীত সাফল্য এসেছে। এখনও তৃতীয় পর্যায়ের কাজটি না হওয়ায় ভেঙেই চলেছে। এ অবস্থায় ভোলার প্রস্তাবটি মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনে ঘোরাঘুরি করলেও দৌলতখানের প্রস্তাবটি পাঠানোই হয়নি। অতি সম্প্র্রতি ভোলা ডেভেলপমেন্ট ফোরামের জোরালো তৎপরতায় প্রস্তাব পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পানিসম্পদমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে আবেদনের মাধ্যমে অবহিত করা হয়েছে। এখন তারা যদি একটু সদয় হয়ে অবশিষ্ট কাজটুকু করার ব্যবস্থা করেন, তবেই ভোলা রক্ষা পেতে পারে।

এম. জহিরুল আলম :সদস্য সচিব ভোলা ডেভেলপমেন্ট ফোরাম

No comments

Powered by Blogger.