হুইটনি হিউস্টন-উই উইল অলওয়েজ লাভ ইউ!’

অম্লমধুর স্মৃতিগুলো, সেসব আমার সঙ্গী হলো। তাই ভালো থেকে গুডবাই। প্লিজ, তুমি কেঁদো না। আমরা দুজনই জানি, আমি তোমার যোগ্য নই। তবু জেনো, আমি তোমাকেই ভালোবেসে যাব, ভালোবেসে যাব! নিজের সবচেয়ে জনপ্রিয় গান ‘আই উইল অলওয়েজ লাভ ইউ’তে এভাবেই হূদয়ের অলিন্দে সযতনে লালন করা মানুষটার কাছে বিদায় চেয়েছেন।


হুইটনি হিউস্টন সত্যি সত্যি বিদায় নিয়ে চলে গেলেন না-ফেরার দেশে। নিজের গানে সব সময় আশার কথা বলেছেন, ভালোবাসার কথা বলেছেন। সত্তর আর আশির দশকে বিশাল একটি প্রজন্মের কাছে হয়ে ছিলেন অনুপ্রেরণার উৎসস্থল। কিন্তু সেই তিনিই যে ভেতরে ভেতরে ক্ষয়ে যাচ্ছিলেন, হতাশার ঘুণপোকা যে তাঁর দাম্পত্য জীবনে বাসা বেঁধেছে, প্রথমটায় টের পাওয়া যায়নি।
তার পরও হার মানেননি। নতুন করে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে লড়াই করতে চেয়েছিলেন; চেয়েছিলেন নতুন করে ক্যারিয়ারটা শুরু করতে। কিন্তু মৃত্যু নামের অমোঘ এক পরাজয়ই বরণ করে নিতে হলো শেষ পর্যন্ত। মৃত্যুর সময় পাশে পাননি কাউকেই। হোটেলকক্ষে ছিলেন একদমই একা। তাঁকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টাও তাই করা যায়নি।
রূপকথার মতো উত্থান হয়েছিল তাঁর। গান শিখেছেন মায়ের কাছে। মায়ের সঙ্গে নিউইয়র্কের নৈশক্লাবে পারফর্ম করতে গিয়ে নজরে পড়ে যান এক শীর্ষ মিউজিক কোম্পানির। মা পড়াশোনার ব্যাপারে একটু ছাড় দিতে নারাজ ছিলেন বলে প্রথম অ্যালবামটি বের হতে অবশ্য খানিকটা দেরিই হয়ে যায়। কিন্তু ১৯৮৫ সালে হুইটনি হিউস্টন নামেই অভিষেক অ্যালবাম প্রকাশিত হওয়ার পর সবাই জেনে যায়, পপ সংগীতের দুনিয়ায় এসেছে আরেক ধ্রুবতারা।
নিজের আড়াই দশকের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে একের পর এক সাফল্য এসে ধরা দিয়েছে তাঁর মুঠোয়। ছয়টি গ্র্যামিসহ চার শর বেশি পুরস্কার জিতেছেন। ২০০৯ সালে গিনেস কর্তৃপক্ষ এই স্বীকৃতি দেয়, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পুরস্কার পাওয়া নারী শিল্পী তিনিই। ১৯৮৫ থেকে পরবর্তী ১০ বছর বিলবোর্ডে এক নম্বর জায়গা করে নিয়েছিল তাঁর ১১টি সিঙ্গেল অ্যালবাম। বিশ্বজুড়ে ১৭ কোটির বেশি বিক্রি হয়েছে তাঁর অ্যালবাম। রিয়েলিটি শোর গুরু বিবেচিত ব্রিটিশ প্রযোজক সাইমন কোয়েল সিএনএনকে বলেন, ‘তিনি ছিলেন এক কিংবদন্তি। তাঁর মতো প্রতিভা কয়েক যুগ পর পর আসে। তাঁর মতো একটা গানকে কেউ এভাবে বিক্রি করতে পারেনি।’
হুইটনি হিউস্টন আর মাইকেল জ্যাকসন মিলে সে সময় একরকম ঝড়ই তুলেছিলেন। পপ মিউজিক ভিডিও ধারণাটি তখনো আনকোরা। এ দুই কালো শিল্পীর হাতেই যেন লেখা হয়েছে নতুন ইতিহাস। সংগীতের পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও সংক্ষিপ্ত কিন্তু বেশ সফল ক্যারিয়ার ছিল তাঁর। দ্য বডিগার্ড, ওয়েটিং টু এক্সহেল-এর মতো দারুণ জনপ্রিয় ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
সব সময় আশার গান শুনিয়েছেন, সেই তাঁরই ব্যক্তিজীবন একসময় মুড়ে গিয়েছিল হতাশার চাদরে। ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলেন সংগীতশিল্পী ববি ব্রাউনকে। কিন্তু ভালোবাসার নদীতে একসময় ধু ধু চর জেগেছিল। ব্যক্তিজীবনের এই হতাশাই হিউস্টনকে ধাবিত করে মাদক নামের অন্ধকার এক জগতের দিকে। ২০০৭ সালে স্বামীর সঙ্গে ঘটে বিচ্ছেদ।
২০০৯ সালে নতুন জীবনের শপথ নিয়েছিলেন। ওই বছর বের হয় তাঁর সপ্তম অ্যালবাম আই লুক টু ইউ। পরের বছর বিশ্ব সফরেও বের হয়েছিলেন। কিন্তু কেউ কেউ বলেন, মাদকের জাল সম্পূর্ণ ছিঁড়ে ফেলতে পারেননি। ১১ ফেব্রুয়ারি ক্যালিফোর্নিয়ার একটি হোটেলে যে তাঁকে মৃত অবস্থায় আবিষ্কার করতে হলো, এর কারণও মাদকের পরিণতি বলেই মনে করছেন কেউ কেউ।
লাখো-কোটি ভক্ত শোকসাগরে ভাসছেন। প্রার্থনা করছেন। আর মনে মনে গাইছেন: ‘উই উইল অলওয়েজ লাভ ইউ, ডার্লিং, উই লাভ ইউ, অলওয়েজ, অলওয়েজ...।’
 রাজীব হাসান
তথ্য: বার্তা সংস্থা, ওয়েবসাইট

No comments

Powered by Blogger.