সমুদ্রে জীবনাবসান-জনসচেতনতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই

মানুষের মৃত্যু হবেই। তার পরও কোনো কোনো মৃত্যু আত্মীয়-অনাত্মীয় সবাইকেই স্তম্ভিত করে দেয়। হৃদয়কে নাড়া দেয়। না মেনে উপায় নেই, জানার পরও মেনে নিতে পারে না কেউ সেই মৃত্যু। আর যদি সেই মৃত্যু হয় অস্বাভাবিক, তাহলে হৃদয়ে ঝাঁকুনি দেয় তা প্রচণ্ডভাবেই।


সংগীতশিল্পী আবিদ শাহরিয়ারের (২৩) মৃত্যুটা তেমনি ঝাঁকুনি দিয়ে গেছে বাংলাদেশের লাখ লাখ সংগীত শ্রোতাসহ অগণিত সাধারণ মানুষকে। আবেগতাড়িত করেছে আবিদের সহকর্মী মোস্তাকিন (২৭), মোত্তাকিন মাহমুদ তুর্য (২২) এবং আশিকের (২৮) মৃত্যু। তাঁরা সবাই বিজ্ঞাপনী সংস্থা মাত্রার কর্মী এবং বয়সে তরুণ। ঘটনার শিকার হয়েছেন কঙ্বাজার সমুদ্রসৈকতে গোসল করতে গিয়ে। মেধাবী এবং সৃষ্টিশীল এই তরুণরা সেখানে গিয়েছিলেন বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণের জন্য তাঁদের প্রতিষ্ঠান মাত্রার তত্ত্বাবধানে। শখ মেটাতে গিয়েছিলেন সমুদ্রস্নানে। সেটাই তাদের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
মৃত্যুই যেন তাদের টেনে নিয়ে গিয়েছিল সমুদ্রবক্ষে। তা না হলে এমন বুদ্ধিমান তরুণরাও ভাটা চলাকালে সমুদ্রে গোসল করতে নামে কিভাবে! এটা সবাই জানে, ভাটা চলাকালে সমুদ্রে গোসল করতে নামা বিপজ্জনক। অন্যদিকে প্রশ্ন আসে, সমুদ্রসৈকতে কি কোনো সতর্ক ব্যবস্থা চালু ছিল না? কঙ্বাজারে বেড়াতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরে আসার উদাহরণ শুধু তাঁরাই নন। গত বছর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে জীবন দিতে হয়েছে সমুদ্রের বুকে সেন্ট মার্টিনস দ্বীপে। তারও আগে লাবণী পয়েন্টে গোসল করতে নেমে কয়েক দিনের ব্যবধানে মারা গেছে ১০ জন পর্যটক। সুতরাং সমুদ্রে মৃত্যুবরণ করা যেন স্বাভাবিক ঘটনা। এ ধরনের মৃত্যুর জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী থাকে ভাটা চলাকালে সমুদ্রে নেমে সাঁতার কাটার চেষ্টা করা। কিন্তু সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা যে খুব কার্যকর নয়, আবিদ ও তাঁর সহকর্মীদের মৃত্যু আবারও তা প্রমাণ করল।
আবিদের মতো প্রতিশ্রুতিশীল একজন শিল্পীর প্রয়াণ আমাদের অবশ্যই ব্যথিত করে। একই সঙ্গে আমাদের অসচেতনতার বিষয়টিও ভেবে দেখতে হবে। তরুণরা যদি সচেতন হতো তাহলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সূত্রপাত হতো না। দেখা গেছে, সমুদ্র পাড়ে লাল পতাকা টাঙানোর পরও পর্যটকদের মধ্যে সমুদ্রে নেমে গোসল করার ইচ্ছা দমিত হয় না। সমুদ্র-তীরবর্তী এলাকায় মাঝেমধ্যে গুপ্তখাল সৃষ্টি হতে পারে। সেসব খালে কোনো অনভ্যস্ত ব্যক্তি গোসল করতে গেলে সহজেই বিপদে পড়ে যায়। ডুবুরিরা সন্দেহ পোষণ করছেন, আবিদের মৃত্যুও এই কারণে ঘটতে পারে। এ ধরনের দুর্ঘটনা বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ কমিয়ে দেয়। আমাদের অর্থনৈতিক সুবিধাকেও তা সংকুচিত করে। এমন পরিস্থিতিতে যেসব ছেলেমেয়ে সাগরে যায় গোসল করার জন্য, তাদের সাবধান হওয়া প্রয়োজন। ভবিষ্যতে যেন আর কাউকে এভাবে মৃত্যুবরণ করতে না হয়, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।


No comments

Powered by Blogger.