ভারতের সংসদে অনুসমর্থন জরুরি-সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি

প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরকালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি নবায়নের বিষয়টি শিগগির ভারতের সংসদে অনুসমর্থনের যে অঙ্গীকার করা হয়েছিল, তার বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ওই চুক্তির শর্তমতে, রেটিফিকেশন বা অনুসমর্থনের কাজটি সম্পন্ন করার পর ৩৬ বছরের বেশি সময় পার করেছে।


দুই দেশের সাম্প্রতিক শীর্ষ বৈঠকে ছিটমহল ও অপদখলীয় এলাকা বিনিময়ে ব্যাপকভিত্তিক সমঝোতা এবং প্রটোকল সই হলেও এর কিছু আনুষ্ঠানিকতা এখনো রয়ে গেছে। বিশেষ করে, প্লেনিপটেনশিয়ারি নিয়োগের মাধ্যমে চিহ্নিত সীমান্তের স্ট্রিপ ম্যাপ সই করার মতো কারিগরি কাজ শুরু হলেও শেষ করা সময়সাপেক্ষ। উপরন্তু ভারতীয় রাজনীতিতেও বিরোধী দলের তরফ থেকে বাধাদানের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। আসাম রাজ্যে এ নিয়ে নানাবিধ রাজনৈতিক তৎপরতা চলছে। ১৭ অক্টোবর আসামের বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন বসেছিল বিরোধী দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে। কিন্তু সেখানে কার্যপ্রণালি বিধিমতে বিরোধী দলের আলোচনার সুযোগ ছিল সীমিত। এবং আলোচনা শেষ হয় এই মর্মে যে বাংলাদেশ ও ভারত—উভয় দেশের সংসদে এ চুক্তি অনুসমর্থন করতে হবে।
এর আগেও আমরা ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের অনুসমর্থনের উল্লেখ দেখেছি। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের তরফে এর কোনো ব্যাখ্যা নেই। আসামের বিধানসভায় একজন মন্ত্রী বলেছেন, যে চুক্তি অনুসমর্থন করা হবে, তার বিষয়বস্তু এখনই প্রকাশ করা যাবে না। সেটা করা হলে বাংলাদেশ ‘বিদেশি খেলোয়াড়দের’ দ্বারা চাপের মুখে পড়বে। আর তখন ভারতের জাতীয় স্বার্থ বিঘ্নিত হবে। এ মন্তব্য রাজনৈতিক বাগাড়ম্বর হলে আশঙ্কার কিছু নেই। কিন্তু এ নিয়ে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি উত্তপ্ত হলে তার বিরূপ প্রভাব চুক্তি বাস্তবায়নে পড়তে পারে। বাংলাদেশ সরকার বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে ত্বরিত ব্যবস্থা নেবে।
বিজেপির নেতা এল কে আদভানি বাংলাদেশের সঙ্গে ভূখণ্ডগত চুক্তি করা নিয়ে আসামের জনসভায় কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন। তাঁর যুক্তি, সংসদকে আস্থায় না নিয়ে ভারত সরকার আসামের জমি বাংলাদেশকে ছেড়ে দিতে পারে না। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুর্নীতিসহ নানাবিধ ইস্যুতে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ করে চলেছে বিজেপি। বিরোধী দলকে সামলানো তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু দুই দেশের ছিটমহলবাসীর যৌথ প্রতিবাদের ভাষা দিল্লির পাঠ করা উচিত।

No comments

Powered by Blogger.