চরাচর-বানিয়াচংয়ে পর্যটন সম্ভাবনা ও প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা by পিয়ানোর রহমান হাসান

হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলাটি একটি দৃষ্টিনন্দন জনপদ। ১৬টি ইউনিয়ন নিয়ে এ উপজেলা গঠিত। উপজেলা সদরে রয়েছে চারটি ইউনিয়ন। পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে বানিয়াচং অত্যন্ত সম্ভাবনাময় হওয়া সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, অবহেলা আর অদূরদর্শিতার কারণে বিষয়টি শুধু পর্যালোচনার বৃত্তবন্দি হয়েই রইল।
ইতিহাস-ঐতিহ্যের লালনভূমি ও অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বানিয়াচং এ দেশের অনেকের কাছেই সুপরিচিত। শুধু থানা সদরেই নয়, বেশ কয়েকটি ইউনিয়নেও রয়েছে অনেক পুরাকীর্তি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নিদর্শন। এর মধ্যে প্রায় ৬৬ একর আয়তনের কমলা রানীর দিঘি, বাইসাইকেলে প্রথম বিশ্ব ভ্রমণকারী ভূ-পর্যটক রমানাথ বিশ্বাসের বাড়ি, দিগন্তবিস্তৃত সবুজ মাঠসহ দৃষ্টিনন্দন অনেক ইতিহাসখ্যাত স্থান রয়েছে এখানে, যা পর্যটকদের খুব টানে। কিন্তু নানা কারণে এখানে পর্যটকের আগমন তেমন হয় না। জেলা সদরের সঙ্গে বানিয়াচংয়ের যোগাযোগব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত। বর্ষায় এই বানিয়াচং আরো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। সাধারণত কয়েকটি পাড়া বা মহল্লা নিয়ে গ্রাম গঠিত হলেও বানিয়াচংয়ের ক্ষেত্রে এ সংজ্ঞা অচল। দুটি কলেজ ও চারটি হাই স্কুল উপজেলা সদরেই অবস্থিত। এখানে রয়েছে শত বছরের পুরনো কয়েকটি মসজিদ, মন্দির এবং একটি রাজবাড়ি। বর্তমানে বানিয়াচং সদরে পাড়া-মহল্লার সংখ্যা প্রায় ১২০ এবং মোট জনসংখ্যা প্রায় সোয়া লাখ। এখন অবশ্য বলা হয়ে থাকে বানিয়াচং বিশ্বের সর্ববৃহৎ গ্রাম। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো একসময় বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম হিসেবে পরিচিত হলেও বর্তমানে এটি নগরে পরিণত হওয়ায় বানিয়াচংই এখন বিশ্বের সর্ববৃহৎ গ্রাম। বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের গবেষণায় তা-ই দেখানো হয়েছে এবং ২০০৪ সালের ৭ জুন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব মোদাবি্বর হোসেন চৌধুরী বানিয়াচং উপজেলা সভাকক্ষে এক সেমিনারে এ তথ্য প্রকাশ করেন। ১৯৯৭ সালের ১৫ অক্টোবর তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বানিয়াচংয়ের কমলা রানীর দিঘির পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত লোকনাথ রমণ বিহারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (বিদ্যালয়টি এরই মধ্যে শতবর্ষ অতিক্রম করেছে) মাঠ প্রাঙ্গণে এক জনসভায় বানিয়াচংকে পর্যটনকেন্দ্র করার ঘোষণা দিলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবে রূপ পায়নি। এ দেশের পর্যটন মন্ত্রণালয়, বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের অদূরদর্শিতার কারণে সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা এই বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পের বিপুল অঙ্কের আয় থেকে বঞ্চিত_এ অভিযোগ পুরনো। অভিযোগটি অমূলক নয়। এ দেশের বহু জনপদ রয়েছে, যেগুলো আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলে পর্যটন ক্ষেত্রের আরো বিস্তৃতি ঘটানো সম্ভব। সম্ভব বিপুল অঙ্কের আয় করাও, যা রাষ্ট্রীয় কোষাগার স্ফীত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। বানিয়াচং এমনই একটি ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় জনপদ, যার পরিচিতি দেশের সীমানা পেরিয়েও রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার বাস্তব রূপ বানিয়াচংবাসী দেখতে চায়। ইতিহাসখ্যাত বানিয়াচংকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে শুধু স্থানীয় লোকজনের জীবনচিত্রই পাল্টে যাবে না, জাতীয় অর্থনীতিতেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বানিয়াচংবাসী এ ব্যাপারে আশার ঘরে বাসা বেঁধে বসে আছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে আমলে নেবে_এও সবার প্রত্যাশা।
পিয়ানোর রহমান হাসান

No comments

Powered by Blogger.