বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি-ধরে রাখতে হবে এ অর্জন

বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশটি কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে আরেক ধাপ এগিয়ে গেছে। অর্থনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য এই ইতিবাচক তথ্যটি সম্প্রতি ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আংকটাড) প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে।


আংকটাডের এই প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশ এশিয়ার মধ্যে নিজেদের অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে সক্ষম হয়েছে। এই উপমহাদেশের দুটি দেশ_পাকিস্তান ও ভারতের চেয়েও বাংলাদেশের অবস্থান ঊধর্ে্ব। এশিয়ায় এ দেশ দ্বিতীয় স্থান লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করায় এটাই প্রমাণ হয় যে এখানে এখন বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বিরাজ করছে। এই পরিবেশ বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরও আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বিনিয়োগ পরিস্থিতির খাতওয়ারি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সেবা খাতেই অধিকতর আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ব্যবস্থাকে ত্বরান্বিত করতে হলে উৎপাদন খাতে অধিকতর বিনিয়োগ নিশ্চিত করা দরকার। উৎপাদনের অন্যতম শর্ত অবকাঠামোগত উন্নয়ন তথা জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়ন না হলে উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ বাড়বে না। তবে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে, দেশে সেবা খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি হওয়াটাও আমাদের দেশের জন্য বিশাল প্রাপ্তি। অবশ্য যে খাতেই বিনিয়োগ হোক না কেন, এই বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি আমাদের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সরকারের উদারনীতিরই সাক্ষ্য বহন করে। ২০০৯ সালের তুলনায় এই বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির হারও উল্লেখ করার মতো। যদিও সারা বিশ্বে বিদেশি বিনিয়োগের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১১৪তম, কিন্তু নিজ দেশের ইতিহাসে চমৎকার একটি হার সহজেই চোখে পড়ে। ২০০৯ সালের তুলনায় এই বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়েছে ৩০ শতাংশ। ২০০৯ সালে বাংলাদেশে এফডিআই এসেছিল ৭০০ দশমিক ১৬ মিলিয়ন ডলার। ২০১০ সালে এসে সেটা দাঁড়িয়েছে ৯১৩ দশমিক ৩২ মিলিয়ন ডলারে। দেশের প্রধান সমস্যা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন দেশের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। সরকারের প্রতিশ্রুতির মধ্যেও এটি ছিল অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। তারা নির্বাচনের আগেও এই বিষয়ে ইশতেহারের মাধ্যমে জনগণকে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছিল। এই খাতে ২০০৯ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বৈদেশিক বিনিয়োগ হয়েছে, যে কারণে এই খাতে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন স্পষ্টত চোখে পড়ে। নিঃসন্দেহে এই খাতের উন্নয়নের জন্য বৈদেশিক সহযোগিতার প্রয়োজন ছিল অনেক বেশি। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপানের মতো দেশগুলো তুলনামূলকভাবে কম বিনিয়োগ করার কারণে হয়তো সামগ্রিক বিনিয়োগের পরিমাণ কিছুটা কম মনে হতে পারে। কিন্তু এশীয় বিনিয়োগ চোখে পড়ার মতো। এ ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগ শীর্ষ স্থান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক হবে এশীয় দেশের এই বিনিয়োগ মাধ্যমে। সাম্প্রতিক বৈদেশিক বিনিয়োগের আরেকটি ইতিবাচক দিক হচ্ছে, বিনিয়োগকারীদের এখানে টিকে থাকা। তার মানে, বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দেখছে, এখানে তাদের বিনিয়োগ লাভজনক এবং এখানকার বিনিয়োগ-পরিবেশও তাদের অনুকূলে। তাদের এই ভাবনার কারণেই বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের ইতিহাস পাল্টে গেছে। জনসংখ্যা, রপ্তানি আয়, আমদানি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং জনসংখ্যার তুলনায় এফডিআই কম হওয়াই ছিল বাংলাদেশের ইতিহাস। বর্তমান হাল সেই ইতিহাসকে বদলে দিতে শুরু করেছে। বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আস্থাশীলতাকে ধরে রাখতে পারলে বৈদেশিক বিনিয়োগ আরো বৃদ্ধি পেতে পারে এবং অর্থনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার অবস্থানও পরিবর্তন করতে সক্ষম হবে। আমরা সেদিনের অপেক্ষা করতে পারি।

No comments

Powered by Blogger.