পোশাকের বাজার-যুক্তরাষ্ট্রের নমনীয়তা প্রত্যাশিত

জাতিসংঘের অধিবেশনকে কেন্দ্র করে এখন বিশ্বের রাজনৈতিক নেতৃত্ব, কূটনীতিক, ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের মেলা বসেছে নিউইয়র্কে। বিভিন্ন দেশের নেতারা এ ধরনের অধিবেশনে যেমন নিজের দেশকে তুলে ধরতে চান, তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগের দিকে অন্য দেশগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টাও করেন।


অধিবেশন কেন্দ্রীয় উপলক্ষ হলেও পরিধির আলোচনাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। রাজনৈতিক নেতাদের দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় আলোচনার সুযোগও এসব অধিবেশনে কমবেশি ঘটে। তাই ওয়াকিবহাল মহলের পরামর্শ থাকে যেন এসব আন্তর্জাতিক আয়োজনগুলোতে দেশকে যথাযথভাবে উপস্থাপনের ব্যবস্থা থাকে। কূটনৈতিক প্রস্তুতি, পেপারওয়ার্ক ঠিকঠাক মতো হয়। সুযোগ মিললেই বাংলাদেশের ন্যায্য ইস্যুগুলো যেন উপস্থাপন করা হয়। ২০ সেপ্টেম্বর ইউএস চেম্বার ও এশিয়া সোসাইটি আয়োজিত ভোজসভায় এমনই এক সুযোগ এলো। বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারও দাবি করলেন। বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম। এ দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি, গণতন্ত্রায়ন, নারী অধিকার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র যথেষ্ট আগ্রহী। গার্মেন্ট শিল্প বাংলাদেশে যে সামাজিক রূপান্তর ঘটিয়েছে তা সকলের মনোযোগের বিষয়। সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো, এ শিল্পে নারী শ্রমিকের বিপুল অংশগ্রহণ। সস্তা শ্রমের সুলভ উৎপাদন তো বটেই, গার্মেন্ট শিল্পের এমন সব বিশিষ্টতার কারণেও বাংলাদেশের পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্তি প্রবেশাধিকার আছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, জাপানসহ কয়েকটি দেশে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করতে উচ্চহারে শুল্ক দিতে হয় আমাদের। সরকারের সঙ্গে সঙ্গে এ দেশের নাগরিকরাও মনে করে, এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নমনীয় হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। শুধু গার্মেন্ট পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার নয়, বিনিয়োগ ও ব্যবসার অবাধ ক্ষেত্রও তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসকে বাইরে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রত্যাবর্তনের পর অনেকটা স্থিতিশীলতা এসেছে, দুর্নীতিতে শীর্ষ স্থানীয় দেশ হিসেবে যে দুর্নাম বাংলাদেশ কুড়িয়েছিল তা অনেকটা দূরীভূত হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান চালিয়ে ইতিমধ্যে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার বিশিষ্ট ভূকৌশলগত অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার মধ্যে মেলবন্ধন তৈরি করতে পারে। এ দেশের বন্দর-যোগাযোগ অবকাঠামো আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে সেটি বাণিজ্যের নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। কিন্তু সুদূরপ্রসারী এসব স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে বড় বিনিয়োগ দরকার। মার্কিন বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে এলে এ ক্ষেত্রে একটা গতি আসতে পারে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ক্ষেত্রে আরও ব্যাপক অংশীদারিত্বের সুযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নবায়নযোগ্য জ্বালানি, ম্যানুফ্যাকচারিং, ব্যাংক, বীমা, কৃষি, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, পর্যটন, আইসিটি পণ্য, জাহাজ নির্মাণ, গার্মেন্ট, ফার্মাসিউটিক্যালস, সিরামিকসহ আরও বিভিন্ন খাতের কথা উল্লেখ করেছেন। নানা বিশ্লেষণ ও নথিপত্র থেকে বাংলাদেশে এ ধারণা প্রবল যে, বাংলাদেশ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ আছে। সেখানকার ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা যদি এ দেশ বিষয়ে আগ্রহী হয় সেটিই হবে আশার কথা। তবে এ ক্ষেত্রে শুধু প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানই যথেষ্ট নয়। কূটনৈতিক তৎপরতা, বিভিন্ন পর্যায়ের যোগাযোগ এমনকি নাগরিক পর্যায়ের যোগাযোগগুলোকেও কাজে লাগাতে হবে।
 

No comments

Powered by Blogger.