অস্ট্রেলিয়ার নতুন গ্রান্ড মুফতি by ফরহাদ জাকারিয়া

গত রোববার অস্ট্রেলিয়ার ইমাম এবং মুফতিবৃন্দ একটি সভায় ড. ইব্রাহীম আবু মোহাম্মদকে নতুন গ্রান্ড মুফতি হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। মুফতি মোহাম্মদ এখন অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইমাম কাউন্সিলের ফতোয়া বোর্ডের সদস্য হিসেবে কর্মরত। তিনি মুফতি শেখ ফেহমি নাজি আল-ইমামের স্থলাভিষিক্ত হবেন।


অস্ট্রেলিয়ার গ্রান্ড মুফতি নির্বাচনকারী প্রতিষ্ঠানটির নাম অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইমাম কাউন্সিল (এনিক)। এটি বিভিন্ন রাজ্য ও এলাকার ইমামদের সমন্বয়ে গঠিত একটি সংগঠন। মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনে উদ্ভূত নানা সমস্যার সমাধান প্রদান এবং তাদের একতাবদ্ধ করতে সংগঠনটি কাজ করে। এনিকে নিবন্ধিত ইমামরাই ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করেন গ্রান্ড মুফতি।
ড. ইব্রাহীম আবু মোহাম্মদের জন্ম মিসরের পশ্চিমাঞ্চলীয় কাফ্র আল জাইয়াত শহরের বিনাওফির গ্রামে। বাল্যকালেই তিনি কোরআন হেফজ করেন। ১৯৭০ সালে তিনি মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ সম্পন্ন করেন। এরপর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে উসুলুদ্দীন বিষয়ে মাস্টার্স এবং পিএইচডি ডিগ্রি গ্রহণ করেন।
তিনি বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ইসলামী শিক্ষা বিষয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন আবুধাবির আল-আইন কলেজে। পরে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি কলেজে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত তিনি অধ্যাপনা করেন। ১৯৯৭ সাল থেকে তিনি ইসলামিক কাউন্সিল অব নিউ সাউথ ওয়েলসের সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা। ১৯৯৯ সালে তিনি 'কোরআন কারিম রেডিও অস্ট্রেলিয়া' প্রতিষ্ঠা করেন। রেডিও স্টেশনটি ইংরেজি ও আরবি উভয় ভাষায় অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে। এর শ্রোতা সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। এ পর্যন্ত তিনি ২৬টি বই রচনা করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার মুসলমানদের যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে তাদের বেশিরভাগই বিদেশি। এর কারণ হলো ভিনদেশি মুসলমানরাই সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ। চার লাখ মুসলমান নাগরিকের মধ্যে শতকরা ৪০ ভাগের জন্ম অস্ট্রেলিয়ায়। বাকিরা মূলত পাকিস্তান, বসনিয়া, তুরস্ক, লেবানন এবং অন্যান্য দেশ থেকে আগত। ভাষা এবং সাংস্কৃতিক কারণে জন্মসূত্রে অস্ট্রেলীয় মুসলমানদের চিন্তা-চেতনা এবং মানসিকতার সঙ্গে তাদের মানসিকতার একটা ব্যবধান স্পষ্টত দৃশ্যমান। আর এখন যারা ইমাম হিসেবে কাজ করছেন তাদেরও অধিকাংশই ভিনদেশি। তাদের বেড়ে ওঠা এবং শিক্ষা-দীক্ষা সবকিছুই হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বাইরে।
আগে অস্ট্রেলিয়ায় গ্রান্ড মুফতির পদটি একটি আনুষ্ঠানিক পদ হিসেবে থাকলেও এখন তা ক্রমশ পরিণত হচ্ছে প্র্যাকটিক্যাল একটি পদে। ফতোয়া নিয়ে সাংস্কৃতিক বিরোধ তৈরি হওয়ায় একজন সাবেক গ্রান্ড মুফতির বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার কথা অনেকের জানা। নবনির্বাচিত মুফতিও অস্ট্রেলিয়ার বাইরে বেড়ে ওঠা মানুষ। আর এ কারণেই তার ওপর রয়েছে বাড়তি চাপ। বহুজাতিক সংস্কৃতি অস্ট্রেলীয় মুসলমানদের একটি প্রধান সমস্যা। দায়িত্ব গ্রহণের পর দ্য টেলিগ্রাফকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি অবশ্য বলেন, 'ইসলামিক এবং অস্ট্রেলীয় সংস্কৃতির মধ্যে কোনো বিরোধ নেই।' তিনি কি পারবেন বহুজাতিক মুসলমানের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা অস্ট্রেলীয় মুসলিম সমাজকে একতাবদ্ধ করতে? এই প্রশ্ন এখন সবার।
 

No comments

Powered by Blogger.