রাজনীতি ও জনজীবন-স্বস্তির পরিস্থিতি বজায় রাখুন

বিএনপি ও মিত্রদের ডাকা বৃহস্পতিবারের হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। বিচ্ছিন্ন কিছু মিছিল হলেও পিকেটারদের রাজপথে দেখা যায়নি। আবার সরকার সমর্থকরাও যে কোনো মূল্যে রাজপথ দখলে রাখার ঘোষণা দিলেও মারমুখী হয়ে ওঠেনি।


সংবাদপত্র এবং বেতার-টেলিভিশনে ১১ ঘণ্টার হরতালের খবর পরিবেশনের সময় 'নিরুত্তাপ', 'ঢিলেঢালা' ইত্যাদি বিশেষণ জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে সবচেয়ে স্বস্তির কথা হচ্ছে, তেমন কোনো অঘটন ছিল না। পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক ছিল। হরতাল আহ্বানকারীরাও রাজপথের দখল নিতে মরিয়া ছিল না। 'বাধা দিলে ফের হরতাল'_ এমন হুশিয়ারি তাদের তরফে ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকার ও বিরোধী পক্ষ এক ধরনের সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছে, যা জনগণ সাময়িক সময়ের জন্য নয় বরং দীর্ঘ সময়ের জন্যই প্রত্যাশা করে। তবে এটাও মনে রাখা দরকার যে, হরতালে অর্থনীতির ক্ষতি এড়ানো যায় না। এ ধরনের কর্মসূচি কর্মনাশা হিসেবে চিহ্নিত হয় এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই সঙ্গত কারণেই এর বিরোধিতা করে। হরতাল যত 'শিথিল-ঢিলেঢালাভাবেই' পালিত হোক না কেন, মোট ক্ষতির পরিমাণ হয় বেশ বড়। জনগণের স্বার্থে হরতাল আহ্বানের দাবি করা হয়, কিন্তু শেষ বিচারে সবচেয়ে কষ্ট ও ভোগান্তি হয় এই জনগণেরই। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও এতে বিনষ্ট হয় এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যায়। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তাদের হরতাল-বিরোধিতা থেকেও এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়। বিএনপি এবং তাদের মিত্র জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় থাকাকালে হরতালে অর্থনীতির যে ক্ষতি হয় তার চিত্র তুলে ধরেছে। একই অবস্থান প্রকাশ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের কথা ও কাজের মিল থাকুক, এটাই দেশবাসী দেখতে চায়। বিরোধীরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারে যে, হরতালে সমস্যার সমাধান নেই। জ্বালানি তেলের দাম কমানোর দাবি তারা জোরের সঙ্গে করেছে। কিন্তু এ ইস্যুর প্রতিবাদ জানানোর আরও অনেক উপায় তাদের জানা রয়েছে। প্রধানতম হচ্ছে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে যোগদান। মহাজোট সরকার হরতালের সময় যে সহনশীল মনোভাব দেখিয়েছে, সেটা জাতীয় সংসদের ফ্লোরে দেখালে বিরোধীদের জন্য এমন পদক্ষেপ গ্রহণ অনেক সহজ হয়ে যায়। বর্তমান সরকারের মেয়াদের বাকি এখনও দুই বছরের বেশি। সরকারের ভুলভ্রান্তি তুলে ধরা বিরোধী দলের দায়িত্ব। এটাও অভিজ্ঞতা যে, গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজ করলে বিরোধী দলের জন্য সংবাদপত্র এবং বেতার-টেলিভিশনে অনেক বেশি স্পেস বরাদ্দ থাকে। বিরোধীরা নিশ্চয়ই এটা উপলব্ধি করতে পারছে যে, তাদের প্রতি গণমাধ্যম বরং সরকারের চেয়েও একটু বেশি সহানুভূতিশীল। এ অবস্থায় তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে গেলে জনগণের যেমন সমর্থন পাবে, তেমনি প্রচারমাধ্যমও সহানুভূতিশীল থাকবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতা থাকবেই। কিন্তু মারমুখী অবস্থান কোনোভাবেই কাম্য নয়। নৈরাজ্য-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিও অগ্রহণযোগ্য। দেশে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা পরিবর্তনের ধারা চালু হয়েছে এবং তা অব্যাহত রাখা সবার দায়িত্ব। এর ব্যতিক্রম হলে দেশ ও দল সব পক্ষেরই ক্ষতি।

No comments

Powered by Blogger.