হরতাল : সেকাল ও একাল by আসিফ আহমেদ

প্রবল বর্ষার সময় ঘরের বাইরে যেতে নেই। কিংবা বলা যায়, ইচ্ছা থাকলেও তা পারা যায় না। এমনকি ছাতাতেও মানে না বৃষ্টি। গাড়ি থাকলে অবশ্য সমস্যা নেই। কিন্তু হরতালের সময় কী করবেন? এমন রাজনৈতিক কর্মসূচি আহ্বান করা হলেও ঘরের বাইরে যেতে নেই। যানবাহন নিয়ে বের হলে পিকেটাররা আটকাবে। ভাংচুর তো অবধারিত।


আগুনে নিঃশেষ করে দেওয়ার মতো চরম কিছুও ঘটতে পারে। আবার পিকেটিং করতে গেলে পুলিশ-র‌্যাবের হাতেও বেধড়ক পিটুনি খেতে পারেন। হরতালে যানবাহন চলাচল করার কথা নয়। হরতালের আগের রাতে মিছিলের স্লোগান থাকে_ গাড়িঘোড়া চলবে না, দোকানপাট খুলবে না। যানবাহন না থাকলে কী করে চলাচল করবেন? কেউ কোথাও যেতে অনুরোধ করলে এই একটি যুক্তিই যথেষ্ট। হরতালে ঘরে বসে থাকার জন্য এর চেয়ে মোক্ষম যুক্তি আর কী হতে পারে? আপনার যদি সঙ্গতি থাকে, তাহলে বাসায় ভালো-মন্দ খাওয়ার আয়োজন হতে পারে। দিনভর সিনেমা দেখতে পারেন। 'ফাও ছুটির দিনে' বিনোদনের আয়োজনে নতুন কিছু যোগ করা যায় কি-না, সেটাও ভাবনার বিষয় হতে পারে। তবে এসব হচ্ছে অনেক অনেক কাল আগের কথা। তখন হরতালের সময় ছিল বটে। সবকিছু অচল হলেই না হরতাল! হাল আমলের হরতাল অবশ্য অনেককেই হতাশ করবে। ছুটিটা মার যায়! এ হরতালে অনেক ধরনের যানবাহনই চলে না। তারপরও যথা ইচ্ছা তথা যাওয়া যায়। অনেক দূরের পথেও যেতে পারবেন। দূরপাল্লার বাস পাবেন না। কিন্তু ব্রেক জার্নির সুযোগ থাকে। এতে আপনার বাড়তি অর্থ গচ্চা যাবে, কিন্তু তাতে হরতাল আহ্বানকারীদের কোনো সমস্যা নেই। তারা সাফ জানিয়ে দেবে : 'আপনার স্বার্থেই আমাদের এ কর্মসূচি। অতএব, বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্র স্বার্থ বিসর্জন দিতেই হবে।' আপনি সরকারি বা আধা-সরকারি অফিসে কাজ করলে অবশ্যই হাজিরা দিতে হবে। বেসরকারি অফিসে তো মাফ পাওয়ার প্রশ্নই আসে না। যাতায়াতে অফিসের যান চলতে পারে, না-ও পারে। রিকশা-ভ্যানে অফিসে আসতে হলে পকেট একটু বেশি খালি হবে। ট্রেনে আপনি যে কোনো স্থানেই যেতে পারেন। এক সময় পিকেটাররা ট্রেন লাইনে ঝুঁকি নিয়ে শুয়ে পড়ত। কিন্তু এখন তেমনটি ঘটে না। লঞ্চ চলাচলেও বাধা নেই। বিমানও চলে নির্বিঘ্নে। আকাশে পিকেটাররা তৎপরতা দেখায় না।
হরতালে অবশ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। বড় মার্কেট বন্ধ থাকে। কেন এমনটি হয়, সেটা বড় প্রশ্ন। ভয়ভীতিই কি কারণ? দোকান খোলা রাখলে কোনো পিকেটার এসে বলবে না : 'বন্ধ করুন, নইলে জ্বালিয়ে দেব।' তারপরও দোকান বন্ধ থাকে। ক্রেতারাও পরদিনের জন্য অপেক্ষা করে।
হরতালের আগের সন্ধ্যায় মশাল মিছিল ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালে তা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। এখন তার সুফল ভোগ করছে আওয়ামী লীগ। তবে মশাল মিছিল যে কাজটি করতে পারত, তার চেয়েও অনেক বেশি সুফল মিলছে আরেক ধরনের কাজে_ যানবাহনে অগি্নসংযোগ। খুব বেশি দরকার পড়ে না, হরতালের আগের সন্ধ্যায় দু'চারটি বাস-প্রাইভেটকারে আগুন দিলেই চলে। বেসরকারি টেলিভিশন ও বেতার সঙ্গে সঙ্গেই এ খবর ছড়িয়ে দেবে। আগে এ খবর সংবাদপত্রে ছাপা হতো, কিন্তু পাঠকের কাছে তা পেঁৗছত পরদিন। এখন বিপদবার্তা সঙ্গে সঙ্গে প্রচার হয়ে যায়। এতে লাভ হয় হরতাল আহ্বানকারীদের। তারা অনেকগুলো মিছিল করে যে কাজ করতে পারত না, একটি বা দুটি গাড়িতে আগুন দিয়েই সে উদ্দেশ্য হাসিল করে ফেলে। দিকে দিকে বার্তা ছড়ায় উদ্বেগের। পরদিন হরতালের সময় যানবাহন বের হলে কী পরিণতি হবে, তার আগাম হুমকি মেলে। কিন্তু হায়, হরতালের সময় এমন ভয়ঙ্কর কাণ্ড করার জন্য কেউ যে রাজপথে
থাকে না!
 

No comments

Powered by Blogger.