কীভাবে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইব by মুফতি এনায়েতুল্লাহ

কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, 'হে মুমিনরা! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও। নামাজ প্রতিষ্ঠা করা নিশ্চয় একটি কঠিন কাজ। কিন্তু যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের কথা আলাদা। যারা জানে, একদিন সবাইকে তাদের মালিকের সম্মুখীন হতে হবে এবং তাদের সবাইকে তার কাছে ফিরে যেতে হবে।'


আমরা অনেক সময় বিভিন্ন বিপদে পড়ে থাকি। তখন আমরা আল্লাহর কাছে সাহায্য না চেয়ে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করি। আমরা বেমালুম ভুলে যাই যে, আল্লাহ ছাড়া আমাদের কেউ সাহায্য করার ক্ষমতা রাখে না। সত্যি কথা বলতে কি, দুঃখ ও কষ্টবিহীন মানবজীবন কল্পনা মাত্র। অন্য কথায় দুঃখ-কষ্ট মানবজীবনের অন্যতম ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। পৃথিবীতে বড় ধরনের কোনো সাফল্য লাভের জন্য কষ্টসহিষ্ণুতা ও পরিশ্রম অপরিহার্য। বিনা পরিশ্রমে যেমন পাহাড়ের চূড়ায় উপনীত হতে পারেন না পর্বতারোহী, তেমনি পরিশ্রম ছাড়া জীবনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যগুলো অর্জন করা কারও পক্ষে সম্ভব নয় ।
সংকট মোকাবেলার অন্যতম এবং মোক্ষম পন্থা হলো, সংকটের প্রকৃতি ও নানা দিক সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জ্ঞান অর্জন করা। যেমন, দু'জন প্রতিদ্বন্দ্বী খেলোয়াড় প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ার জন্য পরস্পরের ইতিবাচক ও নেতিবাচক বা দুর্বল দিকগুলো সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেন। তাই সংকট মোকাবেলার জন্য এর মূল কারণ সম্পর্কে ধারণা রাখাও জরুরি।
এ প্রসঙ্গে কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, 'এবং আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, জানমালের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তারই সানি্নধ্যে ফিরে যাব। তারা সেসব লোক, যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই হেদায়েতপ্রাপ্ত। -সূরা বাকারা :১৫৫-১৫৭
আলোচ্য আয়াতের তাফসিরে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে এমন মানুষ পাওয়া অসম্ভব যিনি জীবনে কখনও দুঃখ-কষ্টে পতিত হননি। মানুষ সবসময় অতীতে যা হারিয়ে গেছে তার জন্য আফসোস করে এবং ভবিষ্যতে কী হবে এই ভেবে দুশ্চিন্তা করে। অতীতের জন্য হা-হুতাশ করতে গিয়ে দুঃখে অনেকের বুক ফেটে যায়। কিন্তু ইমানদার ব্যক্তিরা অতীতের কথা ভেবে হতাশ হয় না কিংবা ভবিষ্যতে কী হবে তা ভেবে অযথা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয় না। কারণ তারা জানে, এ পৃথিবীর জীবন ক্ষণস্থায়ী এবং মানুষের জন্য পরীক্ষাক্ষেত্র। এ জন্যই হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'আল্লাহর কাছেই সব বিলুপ্ত বিষয়ের প্রতিদান আছে এবং তার কাছেই সবকিছুর প্রত্যাবর্তন।' অতএব আমাদের উচিত সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করা এবং বিপদে ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা।
বিপদে ধৈর্য ধারণ বেশ কঠিন ব্যাপার। তারপরও আমাদের ধৈর্য ধারণ করতে হবে। কারণ এটা আল্লাহতায়ালার আদেশ। আর আল্লাহর আদেশ-নির্দেশ পালনে নিজেকে আটকে রাখাই হলো মুমিনের কাজ। তাই যেসব বিপদ-আপদ আসবে সেসব ব্যাপারে অসঙ্গত, অনর্থক ও ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা থেকে নিজেকে আটকে রাখতে হবে। কেননা আল্লাহতায়ালা কোরআনে বলেন, 'হে ইমানদাররা! তোমরা ধৈর্য ধারণ কর।' -সূরা আল ইমরান :২০০
আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, 'নিশ্চয় ধৈর্যশীলদের অপরিমিত পুরস্কার দেওয়া হবে।' -সূরা যুমার :১০
আল্লাহতায়ালা কোরআনের অন্যত্র আরও বলেন, 'হে ইমানদাররা! ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।' -সূরা বাকারা :১৫৩
উলি্লখিত এসব আয়াত ছাড়াও ধৈর্য ও তার গুরুত্ব সম্পর্কে আরও অসংখ্য আয়াত রয়েছে কোরআনুল কারিমে। এসব আয়াত থেকে আমরা যা শিখতে পারি তাহলো, আল্লাহ আমাদের ধৈর্য ধারণ করতে হুকুম দিয়েছেন। তিনি ধৈর্য ধারণে অন্যের সঙ্গে সহযোগিতা করতে বলেছেন। তাই নিজেকে সবার চেয়ে বেশি ধৈর্যশীল হিসেবে তৈরি করা প্রয়োজন। প্রত্যেক ইমানদার সব রকম বিপদ-আপদকে আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা হিসেবে গ্রহণ করবে। আর এতে ধৈর্য ধারণ করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে থাকবে শুভ সংবাদ। আল্লাহ ধৈর্যশীলদের পুরস্কার ও প্রতিদান দেবেন বিনা হিসাবে। ধৈর্য ও ক্ষমাকে আল্লাহ দৃঢ় সংকল্পের কাজ বলে প্রশংসা করেছেন এবং ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আল্লাহতায়ালার সাহায্য থাকে।
ধৈর্য সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, 'পবিত্রতা ইমানের অর্ধেক। আর আলহামদুলিল্লাহ আমলের পাল্লা পূর্ণ করে দেয়। সুবহানাল্লাহ ও আলহামদুলিল্লাহ উভয়ে আকাশসমূহ ও পৃথিবীর নিকটবর্তী স্থান পূর্ণ করে দেয়। নামাজ হলো জ্যোতি। দান-সদকা হলো প্রমাণ এবং ধৈর্য হচ্ছে আলো। কোরআন তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে প্রমাণ হবে। প্রত্যেক মানুষ সকালে উঠে নিজেকে বিক্রি করে দেয়। এরপর সে নিজেকে মুক্ত করে অথবা ধ্বংস করে।'-মুসলিম
সঁভঃরধহধবঃ@মসধরষ.পড়স
 

No comments

Powered by Blogger.