তুরাগ তীরে চলছে বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি

মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহত্তর জমায়েত বিশ্ব ইজতেমা শুরু হতে আর মাত্র ৬ দিন বাকি। টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে আগামী ১৩ জানুয়ারি শুক্রবার ফজরের নামাজের পর বয়ানের মধ্য দিয়ে আরম্ভ হবে বিশ্ব তাবলিগ জামাতের এ বার্ষিক মহাসম্মেলন। এতে অংশ নেবেন দেশ-বিদেশের কয়েক লাখ মুসলি্ল। ধর্মীয় এ সমাবেশ আয়োজনে এখন চলছে শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি। হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষ মিলে প্রস্তুত করছেন ইজতেমার মাঠ। এ বছরও দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব


ইজতেমা। প্রথম পর্ব ১৩ জানুয়ারি শুরু হয়ে ১৫ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। চার দিন বিরতি দিয়ে ২০ জানুয়ারি শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব। প্রথম পর্বের মতোই ২২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বিশ্ব
ইজতেমা। ৬৪ জেলার মধ্যে প্রথম দফায় ৩২টি এবং দ্বিতীয় দফায় বাকি ৩২টি জেলার মুসলি্লরা অংশ নেবেন। প্রথম দফায় অংশগ্রহণকারী মুসলি্লরা দ্বিতীয় দফা শুরুর আগেই দ্বীনের দাওয়াতের উদ্দেশ্যে ইজতেমা মাঠ থেকে বেরিয়ে যাবেন।
ইজতেমা শুরুর আগেই গতকাল শুক্রবার হাজার হাজার মানুষ ইজতেমা মাঠে জুমার নামাজ আদায় করেন। নামাজের আগে ও পরে মুসলি্লরা অংশ নেন মাঠ প্রস্তুতি কাজে। গতকাল সমকালের টঙ্গী প্রতিনিধি ইজতেমা মাঠ ঘুরে জানান, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বয়স্করাও দিন-রাত কাজ করছেন। কেউ মাটি খুঁড়ে গর্ত তৈরি করছেন, কেউ বাঁশ নিয়ে যাচ্ছেন গর্তের কাছে। আরেকজন গর্তে বসাচ্ছেন বাঁশ। বাঁশের ওপর রশি বেঁধে কাপড় দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বিশাল প্যান্ডেল। মোট ১৬৫ একর মাঠের ৭০ ভাগেই প্যান্ডেল তৈরি হয়ে গেছে। এ প্যান্ডেলের পাশ ঘেঁষে তৈরি করা হচ্ছে অস্থায়ী অজুখানা, টয়লেট ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র। বয়ানমঞ্চের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। খুঁটিতে বাধা হচ্ছে মাইক। করা হচ্ছে ইলেকট্রিকের কাজ। মাঠ উন্নয়ন কাজে সেনাসদস্যরাও সহযোগিতা করছেন। নৌবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা তুরাগ নদের ওপর পন্টুন তৈরির কাজ করছেন। এক নৌসেনা জানান, মুসলি্লদের যাতায়াতের সুবিধার্থে আটটি ভাসমান পন্টুন স্থাপন করা হবে।
ইজতেমার আয়োজকরা জানান, বিশ্ব ইজতেমা প্রস্তুতির কাজ প্রতি বছর স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমেই করা হয়ে থাকে। এ বছর ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের ২৫ হাজার বিদেশি মেহমান আসবে। মাঠের পশ্চিম পাশে তাদের জন্য আলাদা প্যান্ডেল তৈরির কাজ চলছে।
ইতিমধ্যেই ইজতেমা এলাকার সড়কগুলোর দু'পাশে অবৈধ স্থাপনা, দোকানপাট উচ্ছেদের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
জানা গেছে, দু'পর্বে বিশ্ব ইজতেমা চলাকালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে পুলিশ ও র‌্যাবের ১০ হাজার সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। আকাশে থাকবে র‌্যাবের হেলিকপ্টার, নদীতে টহলবোট, বেশ কয়েকটি স্থানে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, কন্ট্রোল রুম, মাঠের প্রবেশ পথ ও খিত্তায় খিত্তায় দায়িত্ব পালন করবেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা।
আগত মুসলি্লদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে টঙ্গী সরকারি হাসপাতাল ছাড়াও প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসা ক্যাম্প স্থাপন, হাসপাতালের জন্য শয্যা সংখ্যাসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল ও অতিরিক্ত অ্যাম্বুলেন্স থাকবে। এছাড়া ছিনতাই, চুরি, হাঙ্গামা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ রাখতে এবং স্থায়ী-অস্থায়ী খাবারের দোকানগুলোর খাবারের মান পরীক্ষা করার জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।
ইজতেমা শুরুর দু'দিন আগ থেকে বিআরটিসির বিশেষ বাস সার্ভিস, বিশেষ ট্রেন চালু করা হবে। এছাড়া জরুরি যোগাযোগ রক্ষার্থে ৪০টি টেলিফোন লাইন সংযোগ থাকবে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহসহ থাকবে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা।

No comments

Powered by Blogger.