আইনশৃঙ্খলা-বেড়েছে আতঙ্ক, কমেছে অপরাধ by মাসুদুল আলম তুষার

নির্বাচনী ইশতেহারে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের অঙ্গীকার করলেও মহাজোট সরকার ক্ষমতা নেওয়ার তিন বছরেও তা পূরণ করতে পারেনি। উল্টো বিতর্কিত 'ক্রসফায়ার'-এর সঙ্গে যোগ হয়েছে 'গুপ্তহত্যা' ও 'হেফাজতে মৃত্যু'। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির এ ফারাক থাকলেও বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে বলে দাবি করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্তারা। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত তিন বছরে অপরাধমূলক ঘটনা ও মামলার সংখ্যা


কমেছে। সে সুবাদে অপরাধমূলক ঘটনার ব্যাপকতা না থাকলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গত তিন বছর জনমনে বেশ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিল। দেশজুড়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও এর সুফল সাধারণ মানুষ পেয়েছে যৎসামান্য। জনবল বৃদ্ধিসহ পুলিশ বিভাগকে আধুনিক ও প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার ঘোষণা থাকলেও কার্যকর হয়নি তেমন কিছুই। মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের শুরুতেই পিলখানা হত্যাযজ্ঞে বড় ধরনের সংকটে পড়ে। বিডিআরের অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের সূত্রে এ অপরাধ জনমনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। তবে অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, গত তিন বছরে জঙ্গি ও চরমপন্থীদের তেমন তৎপরতা ছিল না। বিচ্ছিন্ন কয়েকটি হত্যা ও সহিংস ঘটনা আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তুললেও অপরাধের ভয়াবহ বিস্তার ঘটেনি বলে তাঁরা মনে করেন।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার কালের কণ্ঠকে বলেছেন, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো আছে। জনসংখ্যা ও সময় বিশ্লেষণে অপরাধ পরিসংখ্যান কোনোভাবেই অস্বাভাবিক নয়। মূলত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের শুরুতেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর গুরুত্বারোপ করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনকে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে যোগ দেন তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ। কিন্তু প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শুরুর দিকে দাপ্তরিক আচরণে চমক দেখানোর চেষ্টা করলেও দ্রুততম সময়ে তিনি পদত্যাগ করেন। নানা নাটকীয়তার পর প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুকে। ২০১০ সালের ৩১ আগস্ট পুলিশের মহাপরিদর্শক পদে পরিবর্তন আনা হয়। আগের সরকারের আমলে দায়িত্ব নেওয়া নূর মোহাম্মদের স্থলাভিষিক্ত হন হাসান মাহমুদ খন্দকার। কাছাকাছি সময়ে র‌্যাবের মহাপরিচালক, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের পদসহ পুলিশের মাঠপর্যায়েও ব্যাপক রদবদল করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কর্মকর্তা নিযুক্তির ক্ষেত্রে গোপালগঞ্জ এলাকার বাসিন্দাদের প্রাধান্য দেখা দিলে সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। এ অবস্থায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়। তারপরও বিশেষ পরিচিতির পুলিশ কর্মকর্তাদের বাড়াবাড়ি সমালোচনার খোরাক হয়েছে।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন সংসদ সদস্যের বাড়াবাড়ি ও ছাত্রলীগ ক্যাডারদের টেন্ডারবাজির বেশ কিছু ঘটনা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে সরকারের ভাবমূর্তিতে। সরকারের দ্বিতীয় বর্ষে সব ছাপিয়ে আলোচনার শীর্ষে পেঁৗছেছিল 'ইভ টিজিং'। ২০১০ সালে দেশে ইভ টিজিংয়ের ঘটনায় খুন-খারাবি, অভিভাবকের ওপর হামলা ও তরুণীদের হাত-পা কেটে নেওয়ার মতো লোমহর্ষক ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যায়। প্রতিবাদকারীরাও রোষানলে পড়ে। বখাটেদের হামলায় নাটোরের কলেজশিক্ষক মিজানুর রহমান এবং ফরিদপুরে এক কিশোরীর মা চাঁপা রানী ভৌমিকের মৃত্যু তোলপাড় সৃষ্টি করে। হঠাৎ আলোচিত এ অপরাধ দমনে র‌্যাব-পুলিশ ও গোয়েন্দাদের মাঠে নামানো হয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী সরকার ইভ টিজিং-বিরোধী আইন প্রণয়নের পাশাপাশি তাৎক্ষণিক বিচারের উদ্যোগ নিলে অপরাধের বিস্তৃতি কিছুটা কমে।
বিগত কয়েক বছর মানবাধিকার সংগঠনগুলো সোচ্চার ছিল বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড তথা ক্রসফায়ার বন্ধের দাবিতে। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে গঠিত এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) শুরু থেকেই সমালোচনার মুখে পড়ে। এ বাহিনীর সবচেয়ে আলোচিত কর্মকাণ্ড ক্রসফায়ার বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে মহাজোট সরকার উদ্যোগী হবে বলেই জনগণের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু ক্রসফায়ারের ঘটনা বর্তমানে চাপা পড়ে গেছে 'গুপ্তহত্যা' অভিযোগের নিচে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে নেওয়ার পর অনেকে নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছেন বলে শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসহ বিভিন্ন দপ্তরে।
২০১০ সালের ২৫ জুন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগরের ৫৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর চৌধুরী আলম ইন্দিরা রোডের এক আত্মীয়র বাসা থেকে প্রাইভেট কারযোগে ধানমণ্ডি যাওয়ার সময় অপহৃত হন। দীর্ঘদিনেও তাঁর সন্ধান না মেলায় তিনি গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন বলেই ধারণা করছেন স্বজনরা। একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে যুবলীগ নেতা লিয়াকতের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে। এ রকম ঘটনায় সরকারের ভূমিকা স্পষ্ট না হওয়ায় সন্দেহ আর বিতর্ক বাড়ছেই। মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর গত তিন বছরে র‌্যাব ও পুলিশের সঙ্গে 'ক্রসফায়ার' বা 'বন্দুকযুদ্ধে' তিন শতাধিক নিহত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকার এ পদক্ষেপকে সরাসরি সমর্থন না দিলেও কার্যত নিশ্চুপ ছিল।
হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাই, সংঘর্ষসহ নানা অপরাধমূলক ঘটনাকে ছাপিয়ে গত দুই বছর আকস্মিক আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয় 'গুপ্তহত্যা'। এ নিয়ে রাজনৈতিক প্রলেপ সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক বাড়িয়ে দেয়। প্রতিটি নিখোঁজের ঘটনাকে গুপ্তহত্যা নামের সন্দেহের মোড়কে জড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন মহল থেকে দায়ী করা হতে থাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।
ওদিকে গত তিন বছরে দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক মদদে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসী ঘটনা বেড়ে যায়। অন্যদিকে খুনের ঘটনার মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের তরুণ সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের পিস্তলের গুলিতে ২০১০ সালের ১৩ আগস্ট সংসদ ভবন এলাকায় যুবলীগ নেতা ইব্রাহিমের মৃত্যুর ঘটনা সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়। বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন। একই বছর ৮ অক্টোবর নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা সদরে দলীয় কর্মসূচি পালনকালে নির্মম হত্যার শিকার হন বিএনপি সমর্থিত উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ নুর বাবু। বাবুকে পুলিশের সামনেই পিটিয়ে হত্যার দৃশ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে রাজনৈতিক উত্তেজনাও তৈরি হয়। এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সহিংস ঘটনায় প্রাণ হারান মেধাবী ছাত্র আবু বকর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের দুই পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকটি সহিংস ঘটনা ঘটে।
সর্বশেষ গত বছর আলোচিত হত্যা ঘটনার মধ্যে ছিল নরসিংদীর পৌর মেয়র লোকমান খুন ও যশোরের বিএনপি নেতা নাজমুল ইসলামকে অপহরণের পর হত্যা। নরসিংদীর জনপ্রিয় মেয়র লোকমান হোসেনকে খুনের ঘটনায় ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদের ভাই সালাহউদ্দিন আহমেদ বাচ্চুসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম আলোচনায় এলে সরকার সাময়িক বিব্রত হলেও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দেয়। গত তিন বছরে রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক অনেক ব্যক্তি নিহতের ঘটনা ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি করলেও মিইয়ে গেছে খুব স্বল্প সময়ে। ছিনতাই ও মাদকের ভয়াবহ বিস্তার রুখতে সরকারের নানা প্রচেষ্টাও সফল হচ্ছে না।
হরতালসহ অন্দোলন কর্মসূচি সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আচরণে তেমন পরিবর্তন ঘটেনি। বিশেষ করে পোশাক শ্রমিকদের কয়েকটি আন্দোলন মোকাবিলা করতে গিয়ে পুলিশ সমালোচনার মুখে পড়ে। পরিস্থিতি পর্যালোচনায় সরকার শিল্প পুলিশ ইউনিট গঠন করলেও তা নানা সীমাবদ্ধতায় পুরোমাত্রায় সক্রিয় হয়নি।
হয়রানিমূলক গ্রেপ্তারের অভিযোগে মহাজোট সরকার কয়েক দফা সমালোচিত হয়েছে। দুই দফা গণগ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনার অভিযোগ উঠলেও সরকার তা অস্বীকার করেছে। এ ছাড়া দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় নানামুখী বিতর্ক হয়। হরতাল ইস্যুতে মামলায় বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস ও শমসের মবিন চৌধুরীকে গ্রেপ্তার নিয়েও সমালোচনা হয়। এ ছাড়া বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, কামারুজ্জামান, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও কাদের মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হলে রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। তবে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাঁদের গ্রেপ্তার দেখালে সমালোচনা থেকে বাঁচে সরকার।
মহাজোট সরকারের বিশেষ সফলতা হিসেবে পরিগণিত হয় জঙ্গি দমন। দুর্ধর্ষ জঙ্গি নেতা শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইসহ শীর্ষ ছয় জঙ্গি নেতার ফাঁসি কার্যকরের পর নতুন করে সংগঠিত হচ্ছিল জঙ্গিরা। তাদের দমনে মহাজোট সরকার নানা উদ্যোগ নেয়। গ্রেপ্তার করা হয় নতুন নেতৃত্বদানকারী আমির সাইদুর রহমানকে। ২০১০ সালের মে মাসে রাজধানীর দনিয়া থেকে স্ত্রী ও তাঁর দলের সামরিক শাখার সমন্বয়কসহ গ্রেপ্তার হন এই জঙ্গি নেতা। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যেমন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন, তেমনি দুর্বল হয়ে পড়ে জঙ্গি সংগঠনটির নেটওয়ার্ক। জেএমবি ছাড়াও গ্রেপ্তার হয়েছেন আরেক নিষিদ্ধ সংগঠন হরকাতুল জিহাদের যুক্তরাজ্য শাখার আমির গোলাম মোস্তফা। এ ছাড়া র‌্যাব ও পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক আলোচনায় আসা 'অভিজাত' জঙ্গি সংগঠন বলে পরিচিত নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীরের অধ্যাপক ড. গোলাম মাওলা, ড. মুহিউদ্দিন আহমেদসহ শীর্ষ কয়েক নেতা। সব মিলিয়ে গত তিন বছরে বিভিন্ন সংগঠনের দেড় শতাধিক জঙ্গি নেতা-কর্মী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে আটক হয়েছেন।
বিভিন্ন ঘটনায় র‌্যাব ও পুলিশের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে কয়েকটি ঘটনার ওপর বিচার বিভাগীয় তদন্ত চলছে। নির্যাতিত এবং ভুক্তভোগী পরিবারগুলো আদালত এবং প্রশাসনের কাছে গিয়েও ন্যায়বিচার পায়নি_এমন বহু অভিযোগ রয়েছে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। বড় মাত্রার অপরাধ সামাল দিতে সরকার যে ধরনের কৌশল অবলম্বন করছে, তা সাধারণ নাগরিকদের আশ্বস্ত করতে পারছে না। বিশেষ করে ব্যক্তি অথবা বাহিনীর অপরাধকে নির্মূলের উদ্যোগ না নিয়ে সরকার নিজেই বিতর্কিত হয়েছে বেশ কয়েক দফা। এ সময় পুলিশের বিরুদ্ধেও ছিল বিস্তর অভিযোগ। হরতাল চলাকালে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর পুলিশের নির্যাতন, গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটকের পর বিশিষ্ট আইনজীবী এম ইউ আহম্মেদের মৃত্যু, বিএনপি নেতা ও ডিসিসির সদ্য বিদায়ী মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে পুলিশের সামনে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতের ঘটনায় সরকার সমালোচিত হয়েছে।
গত বছরের ২৩ মার্চ ঝালকাঠির রাজাপুরে তালিকাভুক্ত এক সন্ত্রাসীকে ধরতে গিয়ে র‌্যাবের গুলিতে নিরীহ কলেজছাত্র লিমন হোসেন আহত ও পঙ্গু হন। এ ঘটনা বছরব্যাপী আলোচনায় থাকলেও সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। একপর্যায়ে বিষয়টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের 'আইকন' হিসেবে দেশে-বিদেশে প্রচার পেতে থাকে। একইভাবে গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল কাদেরকে ধরে নিয়ে খিলগাঁও থানায় আটক রেখে অপরাধী বলে নির্যাতন করে পুলিশ। এ ঘটনাতেও সরকারের গড়িমসি তদন্ত স্পষ্ট ছিল। পরে বিচার বিভাগীয় ও পুলিশি তদন্তে খিলগাঁও থানার ওসিসহ তিনজনকে দোষী সাব্যস্ত এবং আদালতের নির্দেশে তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড করা হয়।
অন্যদিকে গত বছর শবেবরাতের রাতে সাভারের আমিনবাজারে পুলিশের মদদে ছয় ছাত্রকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তে সাভার থানার ওসি মাহবুবুর রহমানকে প্রত্যাহার এবং এসআই হারেস শিকদার ও আনোয়ারকে সাসপেন্ড করা হয়। কয়েক দিন পরই নোয়াখালীতে এক যুবককে আটক করে পুলিশ বিক্ষুব্ধ জনতার মধ্যে ছেড়ে দিয়ে গণপিটুনি দিয়ে হত্যায় মদদ দেয়।

No comments

Powered by Blogger.