ইয়াঙ্গুনে দুই নেতার বৈঠক-নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে একই ধরনের শর্ত সু চি ও হেগের

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ বলেছেন ,সামরিক জান্তার আমলে মিয়ানমারের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য দেশটিকে আরও অনেক কাজ করতে হবে। গতকাল শুক্রবার মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি একথা বলেন । বৈঠকে মিয়ানমারের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে প্রায় একই ধরনের শর্ত দেন তাঁরা। দুই দিনের সফরের শেষ দিনে গতকাল শুক্রবার ইয়াঙ্গুনে সু চির বাসভবনে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন
হেগ। এর আগে গত বৃহস্পতিবার দেশটির সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সু চি ও হেগ যেসব বিষয় উল্লেখ করেন তা হলো: শত শত রাজবন্দীর মুক্তি, মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করা, জাতিগত দ্বন্দ্ব সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান।
সু চি বলেন, ‘সব রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তি ও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিরাজমান জাতিগত দ্বন্দ্ব সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। আর আমরা অবশ্যই একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক নির্বাচন চাই।’ যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি উল্লেখ করে সু চি বলেন, ‘আমি সামনের দিকে তাকিয়ে আছি যখন পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে মিয়ানমার ও যুক্তরাজ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটবে।’ গত বৃহস্পতিবার সু চি বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনি মিয়ানমারে পুরোপুরি গণতান্ত্রিক একটি নির্বাচন দেখার জন্য বেঁচে থাকতে চান।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেগ বলেন, মিয়ানমারকে আরও অনেক কাজ করতে হবে। তবেই দেশটির ওপর থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হতে পারে। তিনি বলেন, ‘এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে আমরা মিয়ানমারের ওপর চাপ এখনো শিথিল করিনি।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেগ আরও বলেন, মিয়ানমারের জন্য এটা দারুণ এক সময়। কারণ, সু চি ও তাঁর দল এত দিন যেমন একটি দেশের জন্য সংগ্রাম করেছেন এখন তেমন একটি দেশের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেকে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ সময় সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া সু চির ‘ভক্ত’ বলেও উল্লেখ করেন।
সু চি গত দুই দশকের বেশির ভাগ সময় বন্দী ছিলেন। শেষ দফায় টানা সাত বছর গৃহবন্দী থাকার পর ২০১০ সালের নভেম্বরে মুক্তি পান। আগামী ১ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা সু চির।
মিয়ানমারে গত নভেম্বরে বিতর্কিত এক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে নামমাত্র বেসামরিক সরকার। তবে সেই সরকারের কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মহলকে অনেকটা চমকে দেয়। তারা বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করারও উদ্যোগ নেয়।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেগ গত বৃহস্পতিবার দুই দিনের সফরে মিয়ানমারে পৌঁছান। ৫০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে কোনো ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এটাই প্রথম মিয়ানমার সফর। এর আগে গত ৩০ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত মিয়ানমার সফর করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। ৫০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে তিনিই মিয়ানমার সফরে যাওয়া প্রথম মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এএফপি, রয়টার্স।

No comments

Powered by Blogger.