বেসরকারি খাতের অগ্রদূত স্যামসন চৌধুরী-আজ পাবনায় সমাহিত করা হবে

বিশিষ্ট শিল্পপতি ও স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা স্যামসন এইচ চৌধুরীর মরদেহ শুক্রবার রাত ৯টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পেঁৗছে। বিমানবন্দরে তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু। এ সময় তার পরিবারের সদস্য এবং শীর্ষ ব্যবসায়ীরা বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন। স্যামসন এইচ চৌধুরী সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।


বিমানবন্দর থেকে তার মরদেহ নেওয়া হয় রাজধানীর কাকরাইলে ক্যাথলিক চার্চে। স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠান মিডিয়াকমের পরিচালক অজয় কুণ্ডু সমকালকে জানান, আজ শনিবার ভোরে তার মরদেহ হেলিকপ্টারযোগে পাবনার আতাইকুলায় নেওয়া হবে। সেখানে স্থানীয়দের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে পাবনায় অবস্থিত স্কয়ার ফার্মাসিটিউক্যালসের প্রধান কার্যালয়ে নেওয়া হবে। সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সর্বস্তরের মানুষ এখানে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পাবেন। পরে পারিবারিক সমাধিস্থান এস্ট্রাস
প্রাঙ্গণে তাকে সমাহিত করা হবে। সমকালের পাবনা অফিস জানিয়েছে, প্রতিথযশা ব্যবসায়ী স্যামসন এইচ চৌধুরীর মরদেহ পাবনায় আসার প্রতীক্ষা করছেন এলাকার সর্বস্তরের মানুষ। তার মৃত্যুতে দলমত নির্বিশেষে সবাই শোকাভিভূত। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠন তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে অপেক্ষার প্রহর গুনছে।
এদিকে স্যামসন এইচ চৌধুরীর মৃত্যুতে দেশের ব্যবসায়ী মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শীর্ষ ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশের ইতিহাসে তিনিই এখনও পর্যন্ত সেরা উদ্যোক্তা। নিঃসন্দেহে তিনি বেসরকারি খাতে দেশের শিল্প ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রদূত।
স্যামসন এইচ চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি এ. কে. আজাদ বলেন, ব্যবসায়ীদের জন্য অসামান্য প্রেরণার উৎস স্যামসন এইচ চৌধুরী। তিনি হয়তো আমাদের মাঝে শারীরিকভাবে আর থাকছেন না কিন্তু তার সৃষ্টি করে যাওয়া উদাহরণ, তার আদর্শই আমাদের মাঝে থাকবে ভবিষ্যতের পাথেয় হয়ে। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, কেবল ৬ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ বা ৩৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান দিয়ে তার মতো উদ্যোক্তাকে সীমাবদ্ধ করে রাখার কোনো সুযোগ নেই। তিনি একই সঙ্গে আকর্ষণীয় নেতৃত্বের অধিকারী ছিলেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতার বদলে অন্য ব্যবসায়ীরা যাতে নিজেদের মতো করে দাঁড়িয়ে যেতে পারেন সে বিষয়েও তার সমান নজর ছিল। নিজের প্রতিষ্ঠানকে তিনি এমন একটি করপোরেট কাঠামোর মধ্যে দাঁড় করিয়ে গেছেন যে তার অবর্তমানেও সামনের পানে এগিয়ে যেতে তাদের কোনো সমস্যাই হবে না।
এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, দেশের উদ্যোক্তাদের মধ্যে তিনি লিজেন্ডারি অবস্থানে থাকবেন আরও বহুকাল। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের কোম্পানি করার প্রচেষ্টা তার হাত ধরে এসেছে। কেবল তিনিই আমাদের ইনস্টিটিউশন। এতটা জ্ঞানসমৃদ্ধ ব্যবসায়ী দেশে আর কবে আসবেন সেটি নিয়েও সন্দেহ পোষণ করেন মীর নাসির।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি আমজাদ খান চৌধুরী বলেন, সব মিলে তিনি এতটাই সফল একজন ছিলেন যে দশ জনমেও হয়তো অনেকের পক্ষে এতটা করা সম্ভব হবে না। নিঃসন্দেহে তিনি দেশসেরা শিল্পোদ্যোক্তা। ৩৫ হাজার পরিবারকে তিনি তার বুকে আগলে নিয়েছেন। তার প্রতিষ্ঠানে যারাই কাজ করতেন তাদের প্রত্যেককে নিজের পরিবারের সদস্য মনে করতেন। এতটা সততা, স্বচ্ছতা এবং নিষ্ঠা দিয়ে বাংলাদেশের আর কাউকে ব্যবসা করতে দেখা যায় না।
আমেরিকান চেম্বারের (অ্যামচ্যাম) সভাপতি আফতাব-উল ইসলাম বলেন, স্যামসন এইচ চৌধুরী ব্যবসায়ী সমাজের কাছে রোল মডেল ছিলেন। ব্যবসার ক্ষেত্রে দেশের সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করে তিনি সর্বোচ্চ করদাতার সম্মান অর্জন করেন। সত্যিকার অর্থেই তিনি দেশের বিজনেস আইকন। সততা এবং নীতি-নৈতিকতার চর্চার মধ্য দিয়ে ব্যবসাকে কীভাবে এগিয়ে নিতে হয় তা তার কাছেই সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে।
পোশাক রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ব্যবসার সঙ্গে সঙ্গে দেশপ্রেমকে জড়িয়ে নিয়েছিলেন তিনি। দেশকে উন্নত করা, অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার চিন্তা তার মধ্যে সব সময়ই ছিল।
দেশের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যবসায়ী আবদুর রউফ চৌধুরী বলেন, সব ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তার পক্ষে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু স্যামসন এইচ চৌধুরীর কোনো স্বপ্নই বৃথা যায়নি। যেখানে তিনি হাত দিয়েছেন সফল হয়েছেন। আবার তার সহযোগিতা নেননি শীর্ষ পর্যায়ে এমন ব্যবসায়ীও পাওয়া যাবে না। সহযোগিতার ক্ষেত্রে তিনি কখনোই প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা মনে আনেননি। অন্যদিকে সাধারণ মানুষকে ভালোবাসা থেকেই তিনি দেশে সেরা ওষুধ কোম্পানি গড়েছেন, যা তাকে শত শত বছর মানুষের মাঝে বাঁচিয়ে রাখবে।
ওষুধ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি স্যামসন এইচ চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি। সমিতির এক শোকবার্তায় বলা হয়, ওষুধ শিল্পের সার্বিক উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে এতটা অবদান দেশে আর কেউ কখনও রাখেননি। তিনি শুধু একজন সফল উদ্যোক্তাই ছিলেন না, একই সঙ্গে তিনি অসংখ্য জনহিতকর কাজেরও নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার দেশপ্রেম এবং মানবপ্রেম তাকে সবার কাছে সুপরিচিত করে তুলেছিল।
আরও যারা শোক জানিয়েছেন : গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল প্রমুখ শোক জানান। এ ছাড়া জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ, বাংলাদেশ নারী মুক্তি আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠন স্যামসন এইচ চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.