মূল রচনা-রুপালি পর্দায় তিতাস

“তিতাস” পূর্ব বাংলার একটা খণ্ডজীবন, এটি একটি সৎ লেখা। ইদানীং সচরাচর বাংলাদেশে (দুই বাংলাতেই) এ রকম লেখার দেখা পাওয়া যায় না। এর মধ্যে আছে প্রচুর নাটকীয় উপাদান, আছে দর্শনদারি ঘটনাবলি, আছে শ্রোতব্য বহু প্রাচীন সংগীতের টুকরো—সব মিলিয়ে একটা অনাবিল আনন্দ ও অভিজ্ঞতার সৃষ্টি করা যায়। ব্যাপারটা ছবিতে ধরা পড়ার জন্য জন্ম থেকেই কাঁদছিল।’ অদ্বৈত মল্লবর্মণের উপন্যাস অবলম্বনে তিতাস একটি নদীর নাম চলচ্চিত্র তৈরিতে আগ্রহের


কারণ এভাবেই জানিয়েছিলেন ঋত্বিক কুমার ঘটক। ঋত্বিক ঘটক আরও বলেছিলেন, ‘অদ্বৈতবাবু অনেক অতিকথন করেন। কিন্তু লেখাটা একেবারে প্রাণ থেকে, ভেতর থেকে লেখা। আমি নিজেও বাবুর চোখ দিয়ে না দেখে ওইভাবে ভেতর থেকে দেখার চেষ্টা করেছি। অদ্বৈতবাবু যে সময়ে তিতাস নদী দেখেছেন, তখন তিতাস ও তার তীরবর্তী গ্রামীণ সভ্যতা মরতে বসেছে। বইয়ে তিতাস একটি নদীর নাম। তিনি এর পরের পুনর্জীবনটা দেখতে যাননি। আমি দেখাতে চাই যে মৃত্যুর পরেও এই পুনর্জীবন হচ্ছে। তিতাস এখন আবার যৌবনবতী। আমার ছবিতে গ্রাম নায়ক, তিতাস নায়িকা।’
ঋত্বিক তাঁর ছবি শেষ করেছেন আশাবাদ দিয়ে। দেখিয়েছেন নদী আর নেই, কিন্তু ধানখেত আছে। একটি সভ্যতা শেষ হয়ে যাওয়া মানেই জীবনের শেষ নয়। তাঁর মৃত্যুর মধ্যে উপ্ত আছে নতুন সভ্যতার বীজ। এভাবেই মানবজীবন বয়ে চলে।
সুবর্ণরেখা তৈরির পর প্রায় এক যুগ বিরতি নিয়ে তিতাস একটি নদীর নাম তৈরির কাজে হাত দেন ঋত্বিক কুমার ঘটক। মাঝখানে কোনো পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্র তৈরি করেননি তিনি। তিতাস একটি নদীর নাম ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৭৩ সালে। ছবিটির সংগীত চিন্তা, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করেছিলেন চলচ্চিত্রস্রষ্টা ঋত্বিক কুমার ঘটক। ছবির চিত্রগ্রাহক ছিলেন বেবী ইসলাম। ছবিতে অভিনয় করেছেন: রোজী সামাদ, কবরী, রওশন জামিল, রানী সরকার, প্রবীর মিত্র, গোলাম মুস্তাফা, ফখরুল হাসান বৈরাগীসহ অনেকে। ২০০৭ সালে ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের করা তালিকায় (দর্শক সমালোচকদের ভোটে) সেরা বাংলাদেশি ছবির মধ্যে সবার ওপরে ছিল তিতাস একটি নদীর নাম।
তথ্যসূত্র: ঋত্বিক কুমার ঘটকের বই, চলচ্চিত্র মানুষ এবং আরও কিছু

No comments

Powered by Blogger.