ছোট পরিসরেই যাত্রা শুরু করছে ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকস by আসজাদুল কিবরিয়া

চেষ্টাটা বেশ আগের। স্বপ্নটা তারও আগের। আর সেটা হলো, লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস বা দিল্লি স্কুল অব ইকোনমিকসের মতো ঢাকায়ও অর্থনীতিতে অধ্যয়ন ও চর্চার একটি উন্নততর স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। অবশ্য লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স (এলএসই) বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত সামাজিক বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি। ১৮৯৫ সালে যাত্রা শুরু করে এর পরিধি অনেক বিস্তৃত ও বড়। অন্যদিকে ১৯৪৯ সালে দিল্লি


স্কুল অব ইকোনমিকস (ডিএসই) যাত্রা শুরু করে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ হিসেবে। এর পরিধিও আজ অনেক বিস্তৃত। সুতরাং, ধারণা হিসেবে স্কুল অব ইকোনমিকসের পরিধি অনেক বড়। নামকরণ হলেই তা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর কাতারে চলে যায় না। এ জন্য সময় প্রয়োজন। প্রয়োজন যথাযথ প্রস্তুতি ও প্রচেষ্টা। বাংলাদেশের পরিকল্পনা কমিশনের প্রথম ডেপুটি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নূরুল ইসলাম অনেক দিন ধরে ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকস গঠনের কথা ভেবেছেন। একই ধরনের চিন্তা বা স্বপ্ন কাজ করেছে দেশের প্রবীণ ও খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদদের ভেতরে।
শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির উদ্যোগে এই ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকস গঠনের কাজ শুরু হয়। তবে এটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। এতে সমিতির কোনো কর্তৃত্ব নেই। বরং পৃথক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ট্রাস্টি বোর্ডের আওতায় এটির কাজ চলবে। আপাতত রাজধানীর ইস্কাটনে অর্থনীতি সমিতির ভবনেই ছোট পরিসরে প্রতিষ্ঠানটির কাজ শুরু হয়েছে। গত বছর ডিসেম্বর মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীভূত প্রতিষ্ঠান (কনস্টিটিউটেন্স ইনস্টিটিউশন) হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়েছে ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকস। অর্থা এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা নেওয়ার ডিগ্রি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে স্নাতকোত্তর বা পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা কোর্স শুরু করছে ডিএসসিই। নয় মাস মেয়াদি এই কোর্সের প্রথম ব্যাচের ক্লাস শুরু হবে এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে। ইতিমধ্যে ছাত্রছাত্রী ভর্তির জন্য আবেদনপত্র নেওয়া হচ্ছে। আসন অবশ্য ৩০টি। এর পাশাপাশি এ বছরই পরিবেশ অর্থনীতিতে দুই বছরের মাস্টার্স ডিগ্রি কোর্স শুরু করা হবে। এ জন্য শিক্ষক নিয়োগের কাজ চলছে। নিয়মিত শিক্ষকদের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান থেকে খণ্ডকালীন ভিত্তিতে শিক্ষকেরা এখানে আসবেন অধ্যাপনা করতে।
ডিএসসিইর গভর্নিং কাউন্সিল ও একাডেমিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। তিনি অর্থনীতি সমিতির সভাপতিও ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠান থেকে যা ডিগ্রি দেওয়া হবে, তা সবই স্নাতকোত্তর। আপাতত দুটি ডিগ্রি নিয়ে কাজ শুরু করা হলেও এখান থেকে ভবিষ্যতে পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হবে। অবশ্য এমফিল ডিগ্রির সুযোগও রাখা হচ্ছে এ জন্য যে, অনেকে হয়তো একটানা পিএইচডি শেষ করতে পারবে না। সে জন্য এমফিল করে পিএইচডির পথে কিছুটা এগিয়ে থাকতে পারবে তারা। কিন্তু আমরা এমফিলকে উসাহিত করতে চাই না। কেননা, অর্থনীতিবিদ হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য এমফিল খুব একটা সহায়ক নয়।’
খলীকুজ্জমান আরও বলেন, ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকসের পড়ালেখার প্রধান বৈশিষ্ট্য হবে অর্থনীতির প্রায়োগিক দিকে অধিকতর মনোযোগ দেওয়া। স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত পড়ালেখা করে যা শিখেছে, তা ঝালাই করে আরও উচ্চমানের তাত্ত্বিক জ্ঞান আরোহণের পাশাপাশি এই জ্ঞান কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সেটাই শেখানো হবে।
ডিএসসিই থেকে গবেষণা কর্মকাণ্ডকে বিশেষভাবে উসাহিত করা হবে বলেও জানান খলীকুজ্জমান। গবেষণা কাজে সহায়তা দিতে সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, শক্তিশালী তথ্যভান্ডার ও আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে বেকারত্ব সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেতে একটি গবেষণাকাজে হাত দিয়েছে স্কুল। এর জরিপ চলছে। বিনিয়োগ পরিবেশ ও দারিদ্র্য নির্ণয়ের বহুমুখী সূচক নিয়েও কাজ করা হচ্ছে। একটি পূর্ণাঙ্গ ওয়েবসাইট (www.dscebd.org) নির্মাণ করা হচ্ছে যেন বিভিন্ন তথ্য সহজেই ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া যায়।
তবে ইস্কাটনের সীমিত পরিসর থেকে ভবিষ্যতে পূর্বাচলে নিজস্ব জায়গায় নিজস্ব ভবন নির্মাণ করে সেখানে স্কুলটি স্থানান্তর করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে অর্থনীতি সমিতির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে স্কুলের জন্য জমি বরাদ্দের ঘোষণা দেন। এ ছাড়া সরকার থেকে প্রথমে প্রতিষ্ঠানটির জন্য দুই কোটি টাকা দেওয়া হয়। এখন বছরে এক কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে। নিয়মিত অর্থায়নের জন্য একটি এনডাউমেন্ট তহবিল গঠনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকস শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যোগসূত্র স্থাপনের জন্য মনোযোগ দিয়েছে। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের সঙ্গে শিক্ষক-ছাত্র বিনিময় কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দিল্লিতে দক্ষিণ এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও কথাবার্তা হচ্ছে।
ডিএসইসির যাত্রা শুরু সম্পর্কে অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের (ইআরজি) পরিচালক সাজ্জাদ জহির প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। বিশেষ করে পরিবর্তিত বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে জ্ঞানের বলয়ে অর্থনীতির নতুন ধ্যাণ-ধারণা ও বিশ্লেষণে প্রতিষ্ঠানটি ভূমিকা রাখবে, এমনটা প্রত্যাশিত। সে জন্য শিক্ষণ-প্রশিক্ষণের গুণগত মান ও বস্তুনিষ্ঠ গবেষণার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। কিন্তু এদিকে না গিয়ে গতানুগতিক ধারায় অগ্রসর হলে ও কোনো গোষ্ঠীকেন্দ্রিক বিচ্ছিন্ন কর্মকাণ্ডে আবদ্ধ হয়ে পড়লে শুধু সম্পদেরই অপচয় ঘটবে।’

No comments

Powered by Blogger.