‘আরব বসন্তে’ উদ্বুদ্ধ ফিলিস্তিনিরাও

‘আরব বসন্তের’ সফলতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ফিলিস্তিনিরাও স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোর দিকে ঝুঁকে পড়েছে। অবশ্য এসব ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর ওপর রয়েছে কর্তৃপক্ষের কড়া নজরদারি। গাজা ও পশ্চিম তীরের সাধারণ মানুষ ও আন্দোলনকর্মীরা নিজেদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, সভা-সমাবেশ ও সংস্কারের মতো বিষয়ে মত প্রকাশের প্রধান মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি।
ফিলিস্তিনের সাবেক প্রযুক্তিমন্ত্রী সাবরি সাইদামের মতে, পশ্চিম তীর, গাজা ও পূর্ব জেরুজালেমে বর্তমানে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যাই ১০ লাখ। রাজনৈতিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে যে হারে এসব সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করা হচ্ছে, এতে পরিবর্তন আসতে বাধ্য।
আগে ফিলিস্তিনি ইস্যুকে কেন্দ্র করেই মূলত ওই এলাকার জনগণ অনুপ্রাণিত হতো। তবে ২০১১ সালের পর পরিস্থিতি বদলে গেছে। ফিলিস্তিনিরাই এখন আরব অভ্যুত্থানে অনুপ্রাণিত হয়েছে। তারাও শুরু করেছে প্রযুক্তির ব্যবহার, যদিও অন্য আরব দেশগুলোর সঙ্গে সেখানকার পরিবেশ ও পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা।
২০১১ সালের শুরুতে যখন আরব দেশগুলোতে স্বৈরশাসকবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়, তখন ফিলিস্তিনের আন্দোলনকর্মীরাও ফেসবুক ও টুইটারে শুরু করে প্রচারণা। তবে এর লক্ষ্য ছিল ফাতাহ ও হামাসের মধ্যে দীর্ঘদিনের তেতো সম্পর্কের অবসান। এই প্রচারণারই চূড়ান্ত পরিণতি ছিল ১৫ মার্চের বিরাট বিক্ষোভ। ওই বিক্ষোভের ছয় সপ্তাহের মাথায় বৈরীপূর্ণ এই সংগঠন দুটি তাদের মধ্যে মতভেদ কমিয়ে আনার ঘোষণা দেয়। এরপর ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বার্ষিকীতে সীমান্ত বিক্ষোভ, জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ প্রাপ্তির দাবিতে প্রচারণা ও ইহুদি উপনিবেশগুলোতে তৈরি পণ্য বর্জনের মতো বড় আন্দোলনে চালকের ভূমিকা রেখেছে এই নতুন প্রযুক্তি।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, ইহুদি দখলদারদের মানবাধিকার লঙ্ঘন বা ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষের বিষয়গুলো প্রচারে সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার বাড়লেও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে এর ব্যবহার একেবারেই সীমিত। ওয়েবসাইটগুলোর মাধ্যমে রাজনৈতিক প্লাটফর্ম তৈরি বা ধর্মীয় দর্শন প্রচারের মতো বিষয়গুলো গাজার হামস শাসক বা পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের নজর এড়ায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারনেটে মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইলেকট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশনের ইন্টারন্যাশনাল ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন বিভাগের পরিচালক জিলিয়ান ইয়র্কের মতে, ফিলিস্তিনে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো কর্তৃপক্ষের কড়া নজরদারির শিকার হচ্ছে। ব্যবহারকারীদের আটক করা হচ্ছে।
ফেসবুকে মন্তব্যের মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে ২০১০ সালের অক্টোবরে ওয়ালিদ হাসাইনকে পশ্চিম তীর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তিন বছরের সাজা হয় তাঁর। গত সেপ্টেম্বরে মুক্তি পেলেও ক্ষোভে বর্তমানে অনলাইনে বসাই ছেড়ে দিয়েছেন ওয়ালিদ।
একই বছরের এপ্রিলে আসাদ আল-সাফতাওয়িকে (২২) আটক করে গাজার হামাস শাসকেরা। পরে সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসা ও অপপ্রচার রটানোর অভিযোগে তাঁকে ছয় মাসের স্থগিত দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
তবে মনের ভাবনাগুলো প্রকাশে এখন আর তিনি গ্রেপ্তারকে পরোয়া করেন না সাফতাওয়ি। তাঁর প্রশ্ন, ‘অন্যায়ের মুখে মাথানত করে সবাই যদি নিশ্চুপ হয়ে যায়, তবে উচ্চ স্বরে প্রতিবাদ জানাবে কে?’ এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.