অসহনীয় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি-সর্বশক্তি নিয়োগ করে বিদ্যুৎ দিন

অসহনীয় গরমে বিদ্যুৎ আসতে না-আসতেই আবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বৈদ্যুতিক পাখা। রাতে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে ঘর। মানুষের কর্মস্থল থেকে শুরু করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজে লেখাপড়া, বাড়ির গৃহস্থালির কাজ সর্বত্রই জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। অথচ সরকার বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডে নতুন সংযোগসহ যেসব আশার কথা শোনাচ্ছে, তা প্রতিফলিত হতে দেখা যাচ্ছে না।


সরকারের নীতিনির্ধারক মহল রমজান মাসে অপেক্ষাকৃত কম লোডশেডিংয়ের আশ্বাস দিলেও ঘটছে তার উল্টোটা। অন্যদিকে লক্ষ করা যাচ্ছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেরামত ও সংস্কারকাজের প্রয়োজনগুলো ত্বরিত সমাধান করতে পারছে না বিদ্যুৎসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অথচ কিল মারার গোঁসাই তারা ঠিকই থাকছে। পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আরো এক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়াল ১ আগস্ট থেকে। বিদ্যুতের পাইকারি মূল্য ১৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল ফেব্রুয়ারি মাসে। তখন ১১ শতাংশ পাইকারি দাম বাড়ানো হয়েছিল। পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ আগস্ট থেকে বাড়াল আবার। পাইকারির পাশাপাশি আগামী মাসেই খুচরা বিদ্যুতের দামও বাড়ানো হবে বলে জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যে কমিশনের কাছে সে ব্যাপারে প্রস্তাবও গিয়েছে।
এই যে একদিকে অসহনীয় লোডশেডিং, অন্যদিকে বিদ্যুতের দফায় দফায় মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে_এতে যেমন জনজীবন অতিষ্ঠ হচ্ছে, তেমনি দেশের কৃষি, শিল্পসহ নানা উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুতের দাম বাড়বে, কিন্তু জনগণ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাবে না_এমন আচরণ সরকারের ভাবমূর্তির জন্য মোটেই শুভ নয়। আরো একটি বিষয় লক্ষণীয় : দেশে বিদ্যুতের নূ্যনতম চাহিদা আছে পাঁচ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের। এর বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে গড়ে পৌনে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট। অথচ ঘাটতির তুলনায় বিদ্যুৎবিভ্রাট অনেক বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর অর্থ বিদ্যুতের অপব্যবহার, তথাকথিত সিস্টেম লস মানুষকে হিসাবের খাতার বাইরে ভোগান্তিতে ফেলছে। এ বিষয়টিও সরকারের খতিয়ে দেখা দরকার।
সরকারের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল ক্র্যাশ প্রোগামের আওতায় নির্মাণাধীন ও গৃহীত বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র দ্রুত বাস্তবায়ন, ১০, ২০, ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র নির্মাণসহ বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগও নেওয়া হবে। পুরনো বিদ্যুৎকেন্দ্র মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ ও ওভারহলিংয়ের ব্যবস্থা করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে। কিন্তু সে পরিকল্পনা বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় অতি মন্থরগতিতে এগোচ্ছে। যদিও দলটির লক্ষ্য ছিল পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে, কিন্ত এ প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সময় আওয়ামী লীগ সম্ভবত চাহিদা বৃদ্ধির কথা স্মরণ রাখেনি। সরকারকে এখন মনে রাখতে হবে, কতটা বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো মানুষের চাহিদা কতটা পূরণ হচ্ছে। নিশ্চয়ই সরকারের জানা আছে, দেশের মানুষের মধ্যে চরম অসন্তোষ তৈরি হয়েছে বিদ্যুতের ঘাটতি নিয়ে। এ ব্যাপারে সরকারকে সর্বশক্তি নিয়োগ করে বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান করতে পরামর্শ প্রদান ও অনুরোধ করছি। জনজীবন দুর্বিষহ হতে থাকলে সরকারের সফলতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেবে।


No comments

Powered by Blogger.