চরাচর-ভেষজ ওষুধ by আজিজুর রহমান

বাংলাদেশে ঐতিহ্যবাহী ভেষজ চিকিৎসাব্যবস্থা নতুন করে তেমন একটা প্রসার লাভ করতে পারেনি। দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৭ শতাংশ ইউনানি এবং ৬ শতাংশ আয়ুর্বেদি চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে থাকে। বর্তমানে ২৯৭টি ইউনানি, ১৯২টি আয়ুর্বেদীয় এবং ৭৭টি হোমিওপ্যাথিক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে রয়েছে।


ভেষজ ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বছরে প্রায় তিন হাজার মেট্রিক টন ভেষজ কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। উৎপাদিত ওষুধের ৯০ শতাংশ কাঁচামালের ৯৭টি ভেষজ উদ্ভিদ। অবশিষ্ট কাঁচামাল আমদানি করা হয় ভারত থেকে। আর এতে বছরে ব্যয় হয় কয়েক কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা। ভেষজ ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বছরে প্রায় ২১০ কোটি টাকার ওষুধ উৎপাদন করে। কিন্তু এর বিপরীতে এ ওষুধের চাহিদা রয়েছে এক হাজার ২০০ কোটি টাকার। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ শিল্পে প্রায় ৬০ হাজার লোক কর্মরত রয়েছে।
বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ হাজার উদ্ভিদ রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৫০০ ঔষধি উদ্ভিদ প্রজাতি বা ভেষজ। সেই সঙ্গে রয়েছে ভেষজ উৎপাদন উপযোগী উর্বর ভূমি, পর্যাপ্ত পানি এবং অনুকূল আবহাওয়া। এককথায় ভেষজ উদ্ভিদ উৎপাদনে সহায়ক প্রাকৃতিক পরিবেশ। ফলে উৎপাদন খরচও হয় কম। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও বিশ্ববাজারের কথা বিবেচনা করে দেশে পর্যাপ্ত ঔষধি উদ্ভিদ উৎপাদন ও চাষাবাদ করা প্রয়োজন। পরিকল্পিতভাবে ভেষজ উৎপাদন, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাতকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে বিশ্ববাজারে রপ্তানি করে বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। একই সঙ্গে কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হবে।
বিশ্ববাজারে ভেষজ ওষুধের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রতিবছর বিশ্বে ভেষজ ওষুধের চাহিদা ১৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০০০ সালে বিশ্ববাজারে ৬২ বিলিয়ন ডলারের ভেষজ ওষুধ বিক্রি হয়েছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০৫০ সালে বিশ্ববাজারে ভেষজ ওষুধের বাণিজ্য হবে পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলারের। এশিয়া ও আফ্রিকার বেশ কিছু দেশ ভেষজ ওষুধ ও ঔষধি উপাদান রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সক্ষম হচ্ছে। বাংলাদেশেও বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন অঞ্চলে ভেষজ উদ্ভিদের চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এখন প্রয়োজন বেসরকারি উদ্যোক্তাদের চাষাবাদ এবং ভেষজ প্রাকৃতিক চিকিৎসাব্যবস্থার প্রসারে সরকারের কার্যকর সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা।
আজিজুর রহমান

No comments

Powered by Blogger.