সতর্ক অবস্থানে আওয়ামী লীগ by জাকির হোসেন লিটন

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর এবং দলের ভাইস চেয়ারম্যান সমশের মবিন চৌধুরীর পদত্যাগসহ দলটির সাম্প্রতিক পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। রাজনীতির গতি কোন দিকে মোড় নিচ্ছে তার ব্যাপক বিচার-বিশ্লেষণ চলছে সরকারের ভেতরে। এসব ইস্যুতে আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্যে সমালোচনামূলক নানা বক্তব্য দিলেও পরিস্থিতির ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, সমশের মবিন চৌধুরীর হঠাৎ অবসরের ঘোষণায় আপাতদৃষ্টিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বেশ ফুরফুরে মনে হলেও নীতিনির্ধারকেরা বিষয়টি খুব সতর্কভাবে দেখছেন। দেশের গুমোট রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন করে কোনো মেরুকরণ হচ্ছে কি না তা নিয়ে চিন্তিত তারা। বিশেষ করে রাজনীতিতে কোনো মেরুকরণ হলে তার সাথে আওয়ামী লীগের কোনো প্রভাবশালী নেতা সম্পৃক্ত থাকছেন কি না বিভিন্ন মাধ্যমে তার ওপর নজর রাখছেন দলটির নীতিনির্ধারকেরা। তবে লন্ডন সফররত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দেশে ফিরলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠবে বলে ধারণা করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনের লন্ডন সফরকে কড়া নজরদারিতে রেখেছে সরকার। বিএনপির পক্ষ থেকে এ সফরকে নিছক পারিবারিক সফর বলা হলেও বিএনপির দলীয় রাজনীতি এবং ভবিষ্যৎ কৌশল নির্ধারণে এ সফরকে ‘সন্দেহ ও ষড়যন্ত্রের’ চোখে দেখছেন ক্ষমতাসীনরা। সে জন্য পারিবারিক সফরের কথা বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও গত ২০ সেপ্টেম্বর লন্ডন যান। পরে নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘের ৭০তম অধিবেশনে যোগ দিয়ে ১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করতে লন্ডন যান।
সরকার ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মহলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সৈয়দ আশরাফুল ইসলামই নন; খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরকালীন সরকারের অন্তত ডজনখানেক প্রভাবশালী মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা সরকারি ও বেসরকারি কাজে দেশের বাইরে অবস্থান করেন। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী তারানা হালিমও লন্ডন সফর করছেন। সরকারি কাজে বিভিন্ন সেমিনারে অংশ নেয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে তারা সেসব দেশের প্রতিনিধিদের অবহিত করেছেন।
জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া চোখের ডাক্তার দেখাতে লন্ডন গেলেও তার এ সফরের রাজনৈতিক গুরুত্ব আছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। শুধু তাই নয়, খালেদা জিয়ার সফরের সময় বিএনপির প্রভাবশালী অনেক নেতার লন্ডনে অবস্থানকে আরো গুরুত্বের সাথে নিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকেরা। তাদের মতে, দীর্ঘ আট বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি এখন সঙ্কট ও দুরবস্থার শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে। তাই দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি ক্ষমতায় যেতে হলে অনেক ইস্যুই খালেদা জিয়া লন্ডনে বসে নিষ্পত্তি করতে পারেন বলে ধারণা করছেন তারা। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন আদায়ই বিএনপির লন্ডন এজেন্ডা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সে জন্য খালেদা জিয়ার লন্ডন থেকে ফিরতে বিলম্ব, দেশে হঠাৎ করেই বিদেশী নাগরিক হত্যা, হোসনি দালানে বোমা হামলা এবং সর্বশেষ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সমশের মবিন চৌধুরীর দল থেকে পদত্যাগের বিষয়টিকে খুব সতর্ক দৃষ্টিতে দেখছেন আওয়ামী লীগ ও সরকারের কর্তাব্যক্তিরা।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ নয়া দিগন্তকে বলেন, খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমান লন্ডনে বসে ষড়যন্ত্র করে সরকার পতন ঘটানোর নীলনকশা আঁকছেন, এটা তারা সফল করতে পারবেন না।
সমশের মবিন চৌধুরীর পদত্যাগ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিএনপির ধ্বংসাত্মক রাজনীতির কারণে বিরক্ত হয়েই তিনি পদত্যাগ করেছেন। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। তাই বিএনপির দেশপ্রেমিক ও বিবেকবান নেতারা অচিরেই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রতি অনাস্থা দিয়ে বিএনপি থেকে বেরিয়ে আসবেন।
আওয়ামী লীগের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়া দেশের জনগণের কাছে প্রত্যাখ্যাত ও পরিত্যক্ত হয়ে দেশ ও দেশের জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতেই লন্ডন গেছেন। তারই অংশ হিসেবে দেশে বিদেশী নাগরিক হত্যা ও হোসনি দালানে বোমা হামলা করা হয়। সেটি ইতোমধ্যেই বেরিয়ে এসেছে। এসব অপকর্মের কারণে সমশের মবিন চৌধুরীও দল ছেড়েছেন। আওয়ামী লীগ সব সময় সতর্ক রয়েছে। দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে তাদের দেশবিরোধী সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.