ক্ষমতার দ্বন্দ্বে ফুঁসছেন দুই সৌদি যুবরাজ

ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন সৌদি আরবের দুই যুবরাজ। তাদের বিদ্রোহের মুখে ভেঙে যেতে পারে ২৭১ বছরের সৌদি রাজতন্ত্র। দিন যত গড়িয়ে যাচ্ছে, অসন্তোষ তত ফুঁসে উঠছে। সৌদি নেতৃত্বাধীন ইয়েমেনে সামরিক আগ্রাসন, তেলের দাম পড়ে যাওয়া, জঙ্গি হামলা বৃদ্ধি ও হজ ট্রাজেডিসহ নানা বিপর্যয়ে বর্তমান শাসনব্যবস্থা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ৭৯ বছর বয়সী বর্তমান বাদশাহ সালমানের শারীরিক অবস্থাও খুব বেশি ভালো নয়। যে কোনো সময়ে বিশৃংখলা দেখা দিতে পারে রাজপরিবারে। বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর দিয়েছে। বাদশাহ সালমানের ভাগ্নে মোহাম্মদ বিন নায়েফ (৫৬) ও বাদশাহপুত্র মোহাম্মাদ বিন সালমানের (৩০) মধ্যে এ ক্ষমতার দ্বন্দ্ব^ তীব্র হয়েছে। বিন নায়েফ বর্তমানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদিকে বিন সালমান চালাচ্ছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। দুই যুবরাজের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয় ৬ মাস আগে যুবরাজ মকরিন বিন আবদুল আজিজ আল সউদকে সরিয়ে দেয়া নিয়ে। সাবেক বাদশাহ আবদুল্লাহ তাকে দেশের প্রথম ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন।
সৌদি গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক ছিলেন তিনি। তাকে সরিয়ে দেয়ার ফলে মোহাম্মাদ বিন সালমানের ক্ষমতা পাকাপোক্ত হয়। সৌদি আরব বিশেষজ্ঞ প্যারিসের সায়েন্স পো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিফেন ল্যাকরোইক্স বলেন, এ ঘটনাকে স্পষ্ট অভ্যুত্থান হিসেবে দেখে অনেকেই। মোহাম্মদ বিন সালমানের এত দ্রুত ক্ষমতার উচ্চাসনে আরোহণ করায় অস্বস্তিতে পড়ে বিরোধীরা। গত সেপ্টেম্বরে মোহাম্মদ বিন নায়েফের ঘনিষ্ঠ মন্ত্রী ও কেবিনেট সদস্য সাদ আল জাবিরিকে অপসারণ করেন বাদশাহ সালমান। এ ঘটনার পর ক্ষমতার দ্বন্দ্ব আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সৌদি আরবের দুটো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় এই বিরোধী দু’জনকে দিয়ে চালানোয় দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নীতির সমন্বয়হীনতা ঘটছে। ওয়াশিংটনের কারনিগ এনডাউনমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস সংগঠনের মধ্যপ্রাচ্য গবেষক ফ্রেডরিক ওহেরি বলেন, ইয়েমেন আগ্রাসন ছিল সৌদির দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ। এ বছরের হজে মিনা ট্রাজেডির ঘটনায় অন্তত ২ হাজার ২০০ হাজীর নিহতের পর ক্ষমতার লড়াই দেখানোর সুযোগ বেড়েছে। পুলিশের দায়িত্বহীনতার অভিযোগ তুলে মোহাম্মদ বিন নায়েফের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দায়ী করে তাকে সরাতে চায় সালমানের পক্ষশক্তি। অন্যদিকে ইয়েমেনের যুদ্ধের ব্যর্থতার জন্য দায়ী করে মোহাম্মদ বিন সালমানকে সরাতে চায় বিন নায়েফপন্থীরা। ক্ষমতার এ দ্বন্দ্ব^চক্রে রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি চান অনেকেই। কিন্তু সউদ পরিবারের রাজতন্ত্র ভেঙে গেলে মধ্যপ্রাচ্যের লিবিয়ার মতো দেশগুলোর অভিজ্ঞতায় সৌদি আরব কি স্থিতিশীল থাকবে? যাই ঘটুক জনগণের বড় অংশ এখন সউদ পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

No comments

Powered by Blogger.