ইমামবাড়ায় বিস্ফোরণ: লাশ হয়ে ঘরে ফিরলেন জামাল

প্রতিবছরই আশুরায় হোসেনি দালানে যেতেন জামাল উদ্দিন। এবারও গিয়েছিলেন। দিনের বেলা বৃদ্ধ মাকে সঙ্গে নিয়ে হোসেনি দালান ঘুরিয়ে এনেছিলেন। সন্ধ্যায় সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন বোনকে। দুই ভাইবোন হোসেনি দালানের ইমামবারার ভেতরে কবরস্থানের পাশেই বসে ছিলেন। তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতি চলছে। যোগ দেয়ার কথা ছিল সেখানেও। কিন্তু তার আগেই দুর্বৃত্তদের বোমা হামলায় সব লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। বোন নুরুন্নাহার ভাই জামালকে পাগলের মতো খুঁজতে থাকেন। কিন্তু না, কোথাও নেই সে। পরে অবশ্য পাওয়া গেলো ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গুরুতর অবস্থায়। ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে তাকে। বোমা হামলায় তার শরীরে অসংখ্য জায়গায় স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়েছিল। আগুনে ঝলসে গিয়েছিল শরীর। জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছিলেন তিনি। কিন্তু গতকাল জীবনের সেই যুদ্ধে হেরে গেলেন। চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ নিয়ে বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়ালো দুইয়ে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, পেশায় ফেরিওয়ালা ছিলেন জামাল। বাড়িবাড়ি ঘুরে মেয়েদের বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী বিক্রি করতেন। লালবাগের ছোট্ট একটি বাসায় বৃদ্ধা মাকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন। পাঁচ ভাই আর এক বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। বিয়ে করেছিলেন, কন্যা সন্তানও রয়েছে তার। কিন্তু স্ত্রী জামালের ঘর ছেড়েছেন অনেক আগেই। গতকাল লালবাগে জামালের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বৃদ্ধ মা আয়েশা বেগম বিলাপ করছেন। তার বাবা হোসেনি দালানের সরদার ছিলেন। আশুরার সময় সেবায় নিয়োজিত থাকতেন জামাল নিজেও। আয়েশা বেগম বিলাপ করতে করতে বলছিলেন, আমাকে এখন কে দেখবে। কোথায় যাব আমি? এইত আমার বাবার দরবার। আমার বাবা ঘরের মধ্যেই দরবার করত। আমার বাবা কষ্ট করে দুইবার আমার অপারেশনের টাকা দিছে। আমি একটু অসুস্থ হলেই বাবা অস্থির হয়ে যেত। কোথায় চলে গেল বাবা আমার? আয়েশা বেগম জানান, ঘটনার দিন সকালে বাসায় মিলাদ মাহফিল ও শিন্নি বিতরণ করেন জামাল। এর পর তাকে নিয়ে হোসেনি দালানে যান। জিয়ারত শেষে বাসায় ফেরেন তারা। সন্ধ্যায় বোনকে নিয়ে আবারও গিয়েছিলেন তিনি। ছেলের মৃত্যুর শোকে কাতর মা বলেন, কালইতো হাসপাতালে দেখে আসলাম আমার বাবাকে। আজও দেখতে যাওয়ায় কথা ছিল। এখনতো আমার বাবাই ঘরে ফিরে আসল। আমি অসুস্থ হলে জামাল আর কাজে যেত না। কানে শুনতে পাই না বলে মেশিন কিনে দিয়েছে। দরজায় ঝুলানো ছেলের জামা কাপড় দেখিয়ে বললেন, এইতো জামালের সব জামাকাপড়। সবকিছুই রেখে গেছে বাবা। বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। পরিবারের সদস্যরা জানান, জামাল উদ্দিনের লাশ গতকালই আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.