চট্টগ্রামে ফিল্মি স্টাইলে ৪০ লাখ টাকার জন্য খুন

খোরশেদ ডেইরি ফার্মের মালিক খোরশেদ আলম (৪৫)। নগরীর পাঁচলাইশ থানার বাদুড়তলা এলাকায় তার ডেইরি ফার্ম। জমি অধিগ্রহণ বাবদ সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে পান ৪০ লাখ টাকা। তাতেই নজর আটকে যায় খোরশেদের বন্ধু আলমগীর ও সুফীর। যে করেই হোক খোরশেদের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতে হবে। তাই খোরশেদকে হত্যার কৌশল নির্ধারণ করে তারা। ঠিক করা হয় খোরশেদকে কোথাও ডেকে নিয়ে হত্যা করে টাকাগুলো নিজেদের দখলে নিতে হবে। পরিকল্পনা মাফিক কাজ চলতে থাকে। এক বিকেলে খোরশেদকে ফোন করে ডাকেন বন্ধু আলমগীর। বলা হয় রঞ্জু মিয়া লেনের সামনে আসতে। বন্ধুত্বের কারণেই আলমগীরের ডাকে সাড়া দিয়ে সেখানে যান আলমগীর। পরে সেখান থেকে একটি প্রাইভেটকারে খোরশেদকে নিয়ে যাওয়া হয় খতিবেরহাট এলাকায় অ্যাম্ব্রেসিয়া টাওয়ারের তৃতীয় তলায় নূর আয়েশার বাসায়। সেখানে আসেন আলমগীরের আরেক বন্ধু সুফী ও জনৈক নারী। সেখানেই পরিকল্পনামাফিক হত্যা করা হয় খোরশেদকে।
এটি হলিউড বা বলিউড কিংবা ঢালিউডের লোমহর্ষক ছবির দৃশ্য নয়। এটি বাস্তব একটি ঘটনা। ঘটনাটি বন্দর নগরী চট্টগ্রামের। ৪০ লাখ টাকার জন্য বন্ধু আলমগীর, সুফী ও এক নারী মিলে হত্যা করে খোরশেদ আলমকে। এমনটাই আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন নূর আয়েশা বেগম ও তার স্বামী আবদুর রহিম। তারা জবানবন্দিতে খোরশেদ হত্যার সঙ্গে আলমগীর, সুফী ও এক নারী জড়িত বলে দাবি করেছে। বুধবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম ঝলক রায়ের আদালতে তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পাঁচলাইশ থানার এসআই নুরুল ইসলাম বলেন, ‘খোরশেদ আলম হত্যাকাণ্ডের মামলায় এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তারা হত্যাকাণ্ডে খোরশেদ হত্যায় তার বন্ধু আলমগীর, সুফী ও এক নারী জড়িত বলে দাবি করেছে।’
জানা যায়, গত ২৬শে আগস্ট খোরশেদকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় খোরশেদকে খুঁজে না পাওয়ায় তার স্ত্রী পারভীন আক্তার বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এতে আলমগীর সহ চারজনকে আসামি করা হয়। মামলায় স্বামীর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেই তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় বলে উল্লেখ করেন পারভীন।
এদিকে জবানবন্দিতে নূর আয়েশা বলেন, আলমগীর, সুফী খোরশেদসহ এক নারী তার সেদিন তার বাসায় আসেন। এ সময় নূর আয়েশা কিছুক্ষণের জন্য তাদেরকে বাসায় রেখে নিচে যান। পরে ফিরে এসে দেখেন আলমগীর ও সুফী চলে গেছেন। আর ওই নারীটি পেটে ব্যথা বলে কাঁদছেন। এ সময় খোরশেদ কোথায় জানতে চাইলে নারীটি জানায় সে বাথরুমে। পরে নারীটিও চলে যেতে চাইলে নূর আয়েশা তাকে নিচে নামিয়ে দেন। এ সময় তার স্বামী বাসায় ছিলেন না। পরে কিছুক্ষণ পর খোরশেদ বাথরুম থেকে বের না হওয়ায় তিনি দরজা খুলে দেখেন খোরশেদের লাশ মেঝেতে পড়ে রয়েছে। পরে তার স্বামী বাসায় এলে তারা লাশটি ফেলে দিতে ১০ হাজার টাকায় দুজন লোক ভাড়া করেন। পরদিন ২৭ আগস্ট গভীর রাতে প্রবল বৃষ্টিপাতের সময় লাশটি পার্শ্ববর্তী খালে ফেলে দেয়া হয়।
এ ঘটনায় মোবাইল কলের সূত্র ধরে আবদুর রহিম ও নূর আয়েশার বাসার খোঁজ পায় পুলিশ। কিন্তু ওই বাসায় গিয়ে জানা যায় তারা বাসা পরিবর্তন করেছেন। পরবর্তীতে আবারও মোবাইল ট্র্যাক করে কক্সবাজার জেলার পেকুয়া থানার টুইটং এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.