‘আমাদের নায়কেরা’- স্যার ফজলে হাসান আবেদকে অভিনন্দন

ব্র্যাক নামের বিশ্বের সর্ববৃহৎ বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের। অসাধারণ মেধা ও নিরলস পরিশ্রমে যিনি এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, তিনি স্যার ফজলে হাসান আবেদ।
গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া অঙ্গরাজ্যের রাজধানী দে ময়েন শহরে এ বছরের বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে তিনি নিজেই শুধু সম্মানিত হননি, সম্মানিত করেছেন বাংলাদেশের জনগণকেও, যাদের এক বিরাট অংশ অত্যন্ত কঠিন আর্থসামাজিক বাস্তবতায় এ দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করার নিরন্তর সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছেন। অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন এই পুরস্কারে ভূষিত হওয়ার জন্য তাঁকে অভিনন্দন।
পুরস্কার গ্রহণের সময় ফজলে হাসান আবেদ বলেছেন, ‘আমাদের নায়ক আসলে দরিদ্র লোকেরা, বিশেষত দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করা সেই সব নারী, যাঁরা জীবনের প্রতিটি পদে বাধার সম্মুখীন হন এবং তা কাটিয়ে ওঠেন।’ তাঁর এই মূল্যায়নের সঙ্গে আমরা পুরোপুরি একমত।
তবে এ-ও সত্য যে আমাদের এই নায়কদের জীবন-সংগ্রামের ছবি মানবিক নয়। দারিদ্র্য, অপুষ্টি, শিক্ষাহীনতা, সামাজিক বৈষম্য, সহিংসতা—মানুষের সঙ্গে মানুষের, সমাজের ও রাষ্ট্রের যত রকমের সম্পর্ক বিদ্যমান, তার সব ক্ষেত্রেই তাঁরা এখনো গ্রহণযোগ্য, মানবিক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেননি। নিজেদের শ্রমে তাঁরা মানবেতর দারিদ্র্যের কঠিন চক্র থেকে বেরোনোর চেষ্টা করছেন, কিছু মাত্রায় সফলও হচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের ক্ষমতায়ন ঘটেনি, ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাধার প্রাচীরগুলো এখনো অটুট রয়ে গেছে। রাজনৈতিক, নাগরিক ও সামাজিক অধিকারের ক্ষেত্রে তাঁদের বঞ্চনা-বৈষম্য ঘোচেনি; এখনো তাঁরা সমাজের সবচেয়ে নাজুক অংশ।
তবু সব প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করে তাঁরা এগিয়ে চলেছেন। স্যার ফজলে হাসান আবেদ যথার্থই বলেছেন: তাঁরা পদে পদে বাধার সম্মুখীন হন, এবং তা কাটিয়ে ওঠেন।
বাধার প্রাচীর ডিঙানোর এই মনোবল ও সক্ষমতাই তাঁদের জন্য এবং জাতির জন্য সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক দিক। এই আশা জাগিয়ে রাখাই সবচেয়ে জরুরি কাজ। সে জন্য তাঁদের ‘নায়কোচিত’ জীবন-সংগ্রামের স্বীকৃতির প্রতিফলন থাকা প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে। জাতীয় উন্নয়ন-অগ্রগতির ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় ও সরকারি দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতিকৌশলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সার্বিক অগ্রগতিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।

No comments

Powered by Blogger.