টিআইবি ক্ষমা না চাইলে আইনি ব্যবস্থা

জাতীয় সংসদ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা না চাইলে টিআইবির (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ) বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ  করার হুমকি দিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, সংসদ নিয়ে টিআইবি যে ভাষা ব্যবহার করেছে তা অমার্জনীয় শুধু নয় গর্হিতও। এ জন্য টিআইবিকে ক্ষমা চাইতে হবে। না হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গতকাল বিকালে ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের এক বৈঠকে জোটের শীর্ষ নেতারা টিআইবির বক্তব্যকে শিষ্টাচার বহির্ভূত, দুরভিসন্ধিমূলক ও রাজনৈতিক আখ্যায়িত করে সংগঠনটির বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় বক্তব্য রাখেন। নেতারা টিআইবির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাসহ অযাচিত মন্তব্যের জন্য সংগঠনটির সদর দপ্তরে অভিযোগ দাখিলেরও দাবি তোলেন। বৈঠক সূত্র জানায় মূলত রুটিন বৈঠক হলেও গতকাল ১৪ দলের বৈঠকে আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল টিআইবিকে নিয়ে। পাশাপাশি দলীয় পরিচয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ সাম্প্রতিক দুই বিদেশী ও পুলিশ হত্যা এবং পবিত্র আশুরার রাতে হোসেনি দালানে বোমা হামলার ঘটনাও আলোচনায় ওঠে আসে। গতকালের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ১৪ দলের এমন একাধিক শীর্ষ নেতা মানবজমিনকে জানান, টিআইবির বক্তব্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ বলে ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ মনে করে। টিআইবির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংগঠনটির সদর দপ্তরে অভিযোগ দাখিলের পরামর্শ দিয়েছেন তারা। নেতারা আরও বলেন, টিআইবির বক্তব্যকে বিএনপির বক্তব্য বলে মনে হচ্ছে। এসব বক্তব্য শিষ্টাচার বহির্ভূত, রাজনৈতিক ও দুরভিসন্ধিমূলক। সরকারের অনেক ভালো কাজ আছে। কিন্তু এগুলো নিয়ে তারা কথা বলে না। ১৪ দলের নেতাদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম টিআইবির বক্তব্যকে জাতীয় সংসদকে অবজ্ঞার  শামিল বলে উল্লেখ করেন। বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ড. আবদুর রাজ্জাক টিআইবির বক্তব্য ও তাদের কার্যক্রমকে কূটনৈতিকভাবে মোকাবিলার পরামর্শ দেন। এদিকে গতকালের বৈঠকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় পরিচয়ে করার সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা ও জোটগতভাবে না-কি এককভাবে নির্বাচন করা হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা জানান, নির্বাচনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরেই এখনও কোন আলোচনা হয়নি। ১৪ দলের সঙ্গে এ বিষয়ে পরবর্তী বৈঠকে আলোচনা হবে বলে জানিয়ে দেন তিনি। 
বৈঠক শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, জাতীয় সংসদ নিয়ে টিআইবির এ ধরনের মন্তব্যে আমরা বিস্মিত, ক্ষুব্ধ। যে ভাষায় তারা বক্তব্য দিয়েছে তার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। যে অমার্জনীয় ও গর্হিত ভাষা তারা ব্যবহার করেছে তা কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষেও করা সম্ভব নয়। টিআইবির কঠোর সমালোচনা করে সংগঠনটির অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে তাদের অর্থের উৎস খুঁজে বের করতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানান তিনি। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এরা কারা? এদের পরিচয় কি?  নির্বাচন চাওয়ার অধিকার তাদের কে দিয়েছে? তারা কি দেশে অসাংবিধানিক সরকার চায়? এদের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে।  পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করবো, এদের অর্থের উৎস খুঁজে বের করতে। তিনি বলেন, এই সংসদে যারা আছেন তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত। বিগত প্রায় দুবছর ধরে সংসদ সফলভাবে চলছে। সংসদ কিভাবে চলে তা প্রধানমন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন। এটা কোন গোপন চেম্বার নয়। সংসদে কি হয় তা জনগণ দেখতে ও শুনতে পাচ্ছে। অতীতে সংসদে যা হয়েছে তা বর্তমান সংসদে হচ্ছে না। সংসদে এখন গালাগালি হচ্ছে না। তাহলে তারা কিভাবে এমন কথা বলতে পারে। তিনি বলেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খালেদা জিয়া কি উদ্দেশ্যে নির্বাচন বানচাল করার জন্য আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করলেন? সম্প্রতি দুই বিদেশী ও একজন পুলিশ হত্যা এবং পবিত্র আশুরার দিনে হোসেনি দালান মসজিদে বোমা হামলা একই সূত্রে গাঁথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই শীর্ষ নেতা বলেন, একজন নেত্রী (বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া) বিদেশে গেলেন। তখন থেকেই একটার পর একটা ঘটনা ঘটছে। হত্যার ঘটনায় যাদের নাম এসেছে তারা একটি রাজনৈতিক দলের মুখচেনা। এভাবে তারা তাদের চক্রান্ত সফল করতে চায় কি-না এখন সে প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। বিএনপি নেতা শমসের মবিন চৌধুরীর পদত্যাগ প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এটা তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। বিএনপিতে পদত্যাগ শুরু হয়ে গেল না-কি? একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে নাসিম বলেন, তাদের ভাষা ও পাকিস্তানীদের ভাষা একই। সংবাদ সম্মেলনে সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনায় উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি দুই বিদেশী ও পুলিশ হত্যায় জড়িত কয়েকজনকে গ্রেপ্তার এবং দুর্গা পূজা সুষ্ঠুভাবে পালন করতে ভূমিকা রাখার জন্য ১৪ দলের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান মোহাম্মদ নাসিম। এর আগে ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বিএম মোজাম্মেল হক, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এস এম কামাল, এনামুল হক শামীম, সুজিত রায় নন্দি, দলের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ড. আবদুর রাজ্জাক, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলি। ১৪ দলের শরীক দলের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া, জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ/মোজাফফর) সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক, সহ-সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুর রহমান সেলিম, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, গণআজাদী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস কে শিকদার, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. জাকির হোসেন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.