গৃহকর্তার ধর্ষণে অন্তঃস্বত্তা মেয়েটিকে এবার অপহরণ!

যশোরের ঝিকরগাছার বাকুড়া এলাকায় গৃহকর্তার ধর্ষণের শিকার অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া মেয়েটি অন্তঃস্বত্তা হয়েছে। ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী ৫ নভেম্বর তার সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ নিধারণ হয়েছে।
সেই সন্তানের পিতার পরিচয় নিয়ে যখন চরম দুশ্চিন্তা ভিকটিমের পরিবার তখন মেয়েটিকে অপহরণ করা হয়েছে। সাত দিনেও সন্ধান মেলেনি মেয়েটির।
গৃহকর্তা দাউদ সরদারের হুমকিতে দুই মাস ধরে বাড়ি ছাড়া মেয়েটি ও তার মা। তারা শহরের বারান্দী মোল্যাপাড়া এলাকা বাসা ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছিলেন। পালিয়ে এসেও রক্ষা পায়নি মেয়েটি।
পরিবারের অভিযোগ, গত ২৩ অক্টোবর মেয়েটি নিখোঁজ হয়েছে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) রাতে ভিকটিমের মা বাদী হয়ে কোতয়ালি থানায় মামলা করেছেন।
এর আগে ২০ অক্টোবর দাউদ সরদারকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল যশোরে মামলা করা হয়েছে। মামলার নম্বর পিং-২২৮/১৫। অভিযুক্ত হাজী দাউদ সরদার যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাকুড়া গ্রামের বাসিন্দা।
কোতয়ালি থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিবেশি হাজী মো: দাউদ সরদারের বাড়িতে কাজের মহিলা হিসেবে কাজ করতেন ভিকটিমের মা। এসময় তার  অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া ১৪ বছর বয়সী মেয়েও যাতায়াত করতো।
এই সুযোগে দাউদ সরদার তার মেয়েকে কৌশলে ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে মেয়েটি অন্তঃস্বত্তা হয়ে পড়ে। বিষয়টি জানাজানি করলে ভিকটিমক ও তার পরিবারের সদস্যদের খুন করে ফেলা হবে বলে ভয় দেখানো হতো।
ভয়ে দুই মাস আগে মেয়েকে নিয়ে যশোর শহরের বারান্দীপাড়ার তরিকুল ইসলামের ভাড়া বাসায় ওঠেন তারা। গত ২৩ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে মেয়েটি পার্শ্ববর্তী আমতলা মোড়ের পুরি (খাবার) কিনতে বাসা থেকে বের হয়। এরপর আর বাসায় ফেরেনি। ওই সময় অজ্ঞাতনামা লোকজন মেয়েটিকে অপহরণ করেছে।
ভিকটিমের মা বলেছেন, দাউদ সরদার ও তার লোকজন মেয়েটিকে অপহরণ করে খুন, গুম করেছে। অথবা কোথাও আটকে রেখেছে। অবিলম্বে তার মেয়েকে উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
ভিকটিমের আইনী সহয়তার জন্য পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ যশোর জেলা শাখা। সংগঠনটির লিগ্যাল এইড সম্পাদক কামরুন্নাহার কণা বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর গত ১৪ অক্টোবর যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে। ডাক্তারি রিপোর্টে মেয়েটির আগামি ৫ নভেম্বর ডেলিভারির সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এরপর মেয়েটির মা বাদী হয়ে ২০ অক্টোবর বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল যশোরে মামলা করে। আদালত ঝিকরগাছা থানা পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে। এরপর গত ২৩ অক্টোবার মেয়েটি নিখোঁজের পরদিন কোতায়ালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়।
তিনি আরও বলেন, প্রথম দিকে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু অভিযুক্ত দাউদ সরদার প্রভাবশালী হওয়ায় ভিকটিমের পরিবারকে হুমকি ধামকি দিয়ে ধামা চাপার চেষ্টা করে। পরে মেয়েটির পরিবার মহিলা পরিষদের সহযোগিতা চেয়েছে। মেয়েটি যাতে ন্যায় বিচার পায় সেজন্য আমরা কাজ করছি।
কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিকদার আক্কাছ আলী বলেন, ভিকটিমের মায়ের অভিযোগটি বৃহস্পতিবার রাতে মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। মেয়েটিকে উদ্ধারে অভিযান শুরু হয়েছে। তিনি জানান, মামলায় কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। সন্দেহভাজনদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.