ভারত ও আফ্রিকাকে বাদ দিলে হবে না -নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার নিয়ে মোদি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ভারত ও আফ্রিকাকে বাইরে রেখে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার সম্পূর্ণ হতে পারবে না। প্রকৃত সংস্কারের জন্য ভারত ও আফ্রিকাকে এক সুরে কথা বলতে হবে। একইভাবে জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উদ্যোগকে সফল করতে গেলে নিজেদের স্বার্থে বিশ্বের এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে এক জোট হতে হবে।
রাজধানী নয়াদিল্লিতে গতকাল বৃহস্পতিবার ভারত-আফ্রিকা ফোরাম শীর্ষ সম্মেলনে এ অভিমত দেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে আফ্রিকার জন্য সহজ শর্তে এক হাজার কোটি ডলার অতিরিক্ত ঋণের কথাও ঘোষণা করেন। মোদি জানান, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশকে ভারত যে ঋণ দিয়ে আসছে, তা অব্যাহত থাকবে।
আফ্রিকার ৫৪টি দেশ এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছে। চার দিনের এই শীর্ষ সম্মেলনে এক হাজারের বেশি প্রতিনিধি যোগ দেন। গত বুধবার মোদি টানা আট ঘণ্টায় ২০টি দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদের দাবির বিষয়টির পাশাপাশি আলোচিত হয়েছে বোকো হারাম বা আইএসের দৌরাত্ম্য বন্ধে এক জোট হওয়ার প্রসঙ্গ। নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার ও পুনর্গঠন প্রসঙ্গে ভারতের দাবি ও অবস্থানকে আফ্রিকার অধিকাংশ শীর্ষ নেতা সমর্থন জানান। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা বলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যে বিশ্ব সংগঠনের জন্ম হয়েছিল, একবিংশ শতাব্দীতে সেই কাঠামো প্রাসঙ্গিক থাকতে পারে না। নতুন বিশ্বে নতুন প্রয়োজনের নিরিখে নতুনভাবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার ও পুনর্গঠন প্রয়োজন।
সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা এই সম্মেলনের একটা বড় দিক। বিশেষ করে আফ্রিকায় যেভাবে বোকো হারাম এবং অন্যত্র আইএসের উপদ্রব বাড়ছে। নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বুহারি তাঁর দেশে বোকো হারামের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াইয়ে ভারতের সহযোগিতা চান। কিন্তু দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বাইরে সমষ্টিগত ঘোষণা নিয়ে সন্ত্রাস বিষয়ে মতপার্থক্যের বিষয়টি থেকেই যাচ্ছে। ভারত তবু চেষ্টা চালাচ্ছে, রাজনৈতিক ঘোষণাপত্রে সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় ভারত-আফ্রিকা শীর্ষ সম্মেলনে একটা সহমত তৈরি হোক।
এই শীর্ষ সম্মেলনের একটি বড় উদ্দেশ্য আফ্রিকার সঙ্গে ভারতের সার্বিক সম্পর্ককে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া। ১৯৮৩ সালে জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনের পর সেই মাপের এটাই দ্বিতীয় উদ্যোগ। ভারত-আফ্রিকা বাণিজ্যের আকার বাড়ানোও এই উদ্যোগের একটা বড় লক্ষ্য। এ ক্ষেত্রে ভারতের প্রধান প্রতিপক্ষ হলো চীন। আগামী বছর চীন-আফ্রিকা শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। আফ্রিকার বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চাইছে ভারত। এখন মহাদেশটির সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য চীনের সঙ্গে। দেশটির এ মুহূর্তের অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ভারত বেশি করে নজর দিয়েছে আফ্রিকার বাজারে। এই সম্মেলন সেই লক্ষ্যভেদে সহায়ক হবে বলে ভারতীয় বাণিজ্য মহলের ধারণা।

No comments

Powered by Blogger.