যানজট সহ্য না করতে পেরে গুলি ছোড়েন সাংসদপুত্র রনি

বখতিয়ার আলম রনি
যানজটে আটকে থেকে দেরি সহ্য না করতে পেরে সাংসদপুত্র বখতিয়ার আলম রনি লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়লে দুজন নিরীহ লোক মারা যান। রাজধানীতে রাতে জোড়া খুনের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় বখতিয়ার আলমের আরও দুই বন্ধু জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া ও মো. কামাল ওরফে টাইগার কামাল প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তাঁরা এ কথা বলেছেন বলে আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর হাকিম মোহাম্মদ নুরু মিয়া জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া ও মো. কামাল ওরফে টাইগার কামালের জবানবন্দি গ্রহণ করেন। একই ঘটনায় গতকাল বুধবার আদালতে সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন বখতিয়ারের অপর বন্ধু আবাসন ব্যবসায়ী কামাল মাহমুদ। এর আগে এ মামলায় গ্রেপ্তার বখতিয়ার আলমের গাড়িচালক ইমরান ফকির আদালতে জবানবন্দি দিয়ে বখতিয়ারের নাম প্রকাশ করে।
গত ১৩ এপ্রিল রাতে রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে সাংসদ ও মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনির গুলিতে দুজন শ্রমজীবী মানুষ নিহত হন। গুলি ছোড়ার সময় বখতিয়ারের গাড়িতে জাহাঙ্গীর হোসেন, কামাল মাহমুদ ও টাইগার কামাল ছিলেন।
মামলার তদন্ত ও আদালত সংশ্লিস্ট সূত্র থেকে জানা যায়, সাক্ষীরা তাদের (জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, টাইগার কামাল) জবানবন্দিতে বলেন, কল্যাণপুরে একটি জমির বেচাকেনা নিয়ে কথা বলতে তাদের বাংলামোটরে শ্যালে বারে ডেকে পাঠান সাংসদপুত্র বখতিয়ার। সেখানে তারা মদপান করেন। তখন বখতিয়ারের সঙ্গে কামাল মাহমুদ ছিলেন। রাত ১১টায় শ্যালে বার বন্ধ হয়ে যায়। তখন বখতিয়ার তাঁকে সোনারগাঁও হোটেলে মদ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে বন্ধু জাহাঙ্গীরকে বলেন। এতে জাহাঙ্গীর রাজি হলে তাঁরা চারজন (কামাল মাহমুদসহ) বখতিয়ারের প্রাডো গাড়িতে করে সোনারগাঁও হোটেলে আসেন। সেখানে বখতিয়ার, জাহাঙ্গীর ও টাইগার কামাল আবার মদপান করেন। ফেরার পথে রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে এলএমজি টাওয়ারের সামনে পৌঁছালে গাড়ি যানজটে পড়ে। এতে বিরক্ত হয়ে বখতিয়ার লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে চার-পাঁচটি গুলি ছোড়েন। এতে দুজন লোক মারা যান।
সাংসদপুত্রের আরও দুই বন্ধু জবানবন্দি দিচ্ছেন
রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে জোড়া খুনের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় সাংসদপুত্র বখতিয়ার আলম রনির আরও দুই বন্ধু সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিচ্ছেন। তাঁরা হলেন—জাহাঙ্গীর ও টাইগার কামাল।
ঢাকার মহানগর হাকিম নুরু মিয়া আজ বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে ওই দুজনের জবানবন্দি গ্রহণ করছেন।
একই ঘটনায় গতকাল বুধবার আদালতে সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন বখতিয়ারের আরেক বন্ধু আবাসন ব্যবসায়ী কামাল মাহমুদ।
গত ১৩ এপ্রিল রাতে রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে সাংসদ ও মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পিনু খানের ছেলে বখতিয়ারের গুলিতে দুজন শ্রমজীবী মানুষ নিহত হন। গুলি ছোড়ার সময় বখতিয়ারের গাড়িতে ছিলেন কামাল।
মামলার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতকাল সকালে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কামাল মাহমুদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। এ সময় তিনি ১৩ এপ্রিল রাতে সাংসদপুত্রের গুলিতে দুই ব্যক্তি নিহত হওয়ার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আদালতে সাক্ষ্য দিতে রাজি হন। এরপর তাঁকে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে নিয়ে যান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির এসআই দীপক কুমার দাস। আদালতে জবানবন্দি দিয়ে কামাল মাহমুদ বাসায় ফিরে যান।
মামলার তদন্ত ও আদালত-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, কামাল মাহমুদ জবানবন্দিতে বলেছেন, কল্যাণপুরে একটি জমির বেচাকেনা নিয়ে কথা বলতে তাঁকে বাংলামোটরে শ্যালে বারে ডেকে পাঠান সাংসদপুত্র বখতিয়ার। তিনি সেখানে এসে দেখেন, বখতিয়ার মদপান করছেন। বখতিয়ারের সঙ্গে আরও দুই বন্ধু জাহাঙ্গীর হোসেন ও টাইগার কামালও ছিলেন। রাত ১১টায় শ্যালে বার বন্ধ হয়ে যায়। তখন বখতিয়ার তাঁকে সোনারগাঁও হোটেলে মদ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে বন্ধু জাহাঙ্গীরকে বলেন। এতে জাহাঙ্গীর রাজি হলে তাঁরা চারজন (কামাল মাহমুদসহ) বখতিয়ারের প্রাডো গাড়িতে করে সোনারগাঁও হোটেলে আসেন। সেখানে বখতিয়ার, জাহাঙ্গীর ও টাইগার কামাল আবার মদপান করেন। কামাল মাহমুদ আদালতের কাছে দাবি করেন, তাঁর মদপানের অভ্যাস না থাকায় তিনি পান করেননি।
জবানবন্দিতে কামাল মাহমুদ বলেন, রাত দেড়টার দিকে তাঁরা সোনারগাঁও হোটেল থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠেন। বখতিয়ারের গাড়িচালক ইমরান ফকির গাড়ি চালাচ্ছিলেন। বখতিয়ার বসেন চালকের পাশের আসনে। বাকি তিন বন্ধু পেছনের আসনে। তাঁরা প্রথমে জাহাঙ্গীরকে মগবাজার ডাক্তার গলির সামনে নামিয়ে দেন। পৌনে দুইটার দিকে নিউ ইস্কাটনে এলএমজি টাওয়ারের সামনে পৌঁছালে গাড়ি যানজটে পড়ে। এতে বিরক্ত হয়ে বখতিয়ার লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে চার-পাঁচটি গুলি ছোড়েন। এরপর মিনিট খানেক গাড়িটি সেখানে ছিল।
কামাল মাহমুদ আদালতকে বলেন, গুলি করতে দেখে তিনি বখতিয়ারকে বললেন, এটা কী করলা? জবাবে বখতিয়ার বলেন, কিছু হবে না, চুপ থাকো। পরে টাইগার কামালকে ঘটনাস্থলের একটু দূরে নিউ ইস্কাটনে এবং তাঁকে (কামাল মাহমুদ) হাতিরপুলে নামিয়ে দিয়ে বখতিয়ার ধানমন্ডির বাসায় ফিরে যান।

No comments

Powered by Blogger.