মানব পাচার প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি -সুজনের গোলটেবিলে বক্তারা

লোককে গুলি করে মানবপাচার সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় -সুজন
সমুদ্রপথে মানব পাচার বন্ধ করতে না পারলে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও খারাপ হতে পারে, যা বৈধ অভিবাসনের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দেবে। তাই মানব পাচার প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা ও পাচারকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) উদ্যোগে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত ‘মানব পাচার বন্ধে করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।
মূল প্রবন্ধে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ২০০৭ সালে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ২০১২ সালে দুই দেশের মধ্যে এক সমঝোতা স্মারক সই হয়। এরপর মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য ১৪ লাখ ব্যক্তি নিবন্ধন করেন। তার মধ্যে মাত্র সাত হাজার বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সুযোগ পান। তাই এটা সুস্পষ্ট যে বৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ কমে যাওয়ায় অবৈধ অভিবাসন বেড়ে যায়। বিপুলসংখ্যক অবৈধ অভিবাসী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রপথে থাইল্যান্ড হয়ে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের তথ্য দিয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ২০১৫ সালের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি থেকে মার্চ) বঙ্গোপসাগর দিয়ে ২৫ হাজার লোক অবৈধভাবে দেশত্যাগ করেছেন। এ সংখ্যা ২০১৩ ও ২০১৪ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এই ২৫ হাজারের মধ্যে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্য থেকে যাত্রা করেছিলেন। বাকি প্রায় সব যাত্রীই বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা থেকে গিয়েছিলেন।
এখনো প্রায় দুই হাজার লোক বিভিন্ন নৌকায় সাগরে ভাসমান রয়েছেন—এ খবর ইউএনএইচসিআরের এক কর্মকর্তা তাঁকে ই-মেইলে জানিয়েছেন বলে জানান বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, মানব পাচারকারীদের শুধু শাস্তি দিলেই হবে না, পাচারের কারণগুলোর প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়াও জরুরি।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, মানবেতিহাসে যত নিষ্ঠুর নির্যাতন হয়, সেটা হয় মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর। সেখানকার সামরিক জান্তা রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন করছে এটা ঠিক, কিন্তু গণতান্ত্রিক নেত্রী যিনি, সেই অং সান সু চিও পক্ষপাতমূলক আচরণ করছেন।
লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ মানব পাচার ও রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে সরকারের কাছে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দাবি করেন। তিনি বলেন, পাচারের জন্য যেভাবে লোকজনকে সমুদ্রে রাখা হচ্ছে, তা মানবেতিহাসে আর নেই। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক জনমত মিয়ানমারের বিরুদ্ধে থাকার কথা উল্লেখ করে সেটাকে কাজে লাগাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
মানব পাচারের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করতে না পারার সমালোচনা করে সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, থাইল্যান্ডে একজন জেনারেল অপরাধী হিসেবে বরখাস্ত হয়েছেন, কিন্তু বাংলাদেশে একজন কনস্টেবলকেও বরখাস্ত করা যায় না।
ইউএনএইচসিআরের বাংলাদেশ প্রতিনিধি স্টিনা লুংডেল বলেন, যাঁরা পাচার হচ্ছেন, তাঁদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করা হচ্ছে, কেউ কেউ মৃত্যুর শিকার হচ্ছেন।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সি আর আবরার, গণমাধ্যমব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.