এমপিও পেতে পাসের হার ও শিক্ষার্থী বেশি লাগবে- সংশাধন হচ্ছে নীতিমালা by মোশতাক আহমেদ

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতে নতুন নিয়ম আসছে। এখন থেকে বিদ্যালয় এমপিওভুক্তির জন্য বোর্ডের পরীক্ষায় (জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসিসহ সমমান) পাসের হার ৭০ শতাংশ এবং কলেজের জন্য পাসের হার ৬০ শতাংশ হতে হবে। পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও আগের চেয়ে বেশি লাগবে। একই সঙ্গে বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় শিক্ষক ও কর্মচারীদের নতুন নতুন পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ রকম নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির নতুন নীতিমালা করতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে নীতিমালার খসড়াও চূড়ান্ত করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। ইতিমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই খসড়া নিয়ে একটি কর্মশালা করে অংশীজনদের মতামত নিয়েছে। খসড়াটি এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এরপর মন্ত্রণালয় সরকারি আদেশ জারি করবে। জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, শিগগিরই নীতিমালাটি চূড়ান্ত করা হবে এবং ভবিষ্যতে এই নীতিমালার আলোকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হবে।
বেতন-ভাতার সরকারি অংশ পাওয়ার জন্য প্রথমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সরকারের তালিকাভুক্ত হতে হয়, যেটিকে সংক্ষেপে এমপিওভুক্ত বলা হয়। প্রতিষ্ঠানের পর শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য এমপিওভুক্ত করা হয়। সর্বশেষ ২০১০ সালে ১ হাজার ৬০০-এর কিছু বেশি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। এখন আবার এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সাংসদদের পছন্দ অনুযায়ী প্রায় এক হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেটি থেমে আছে।
বর্তমানে সারা দেশে এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা আছে ২৬ হাজারের বেশি। এর মধ্যে গত নভেম্বরের হিসাব অনুযায়ী নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩ হাজার ৩২৬টি, উচ্চবিদ্যালয় ১২ হাজার ৭৭৩টি, দাখিল মাদ্রাসা ৫ হাজার ৩৭১টি, আলিম মাদ্রাসা ১ হাজার ১০৮টি ও মহাবিদ্যালয় (ইন্টারমিডিয়েট) আছে ১ হাজার ৪৩৫টি। বাকিগুলো ডিগ্রি কলেজ, ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসা।
প্রস্তাবিত নীতিমালায় মাধ্যমিক স্তরের বিদ্যালয় এমপিওভুক্তির জন্য শহর এলাকায় ৬০ জন ও মফস্বল এলাকায় ৪০ জন পরীক্ষার্থী (পাবলিক পরীক্ষায়) থাকতে হবে। বিদ্যমান নীতিমালায় থাকতে হয় যথাক্রমে ৫০ ও ৩০ জন। পাসের হার বর্তমানে ৫০ শতাংশ থাকতে হয়। নতুন এমপিওভুক্তির জন্য তা হতে হবে ৭০ শতাংশ। উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়েও একই সংখ্যক শিক্ষার্থী ও পাসের হার লাগবে।
স্নাতক (পাস) স্তরের কলেজ এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষার্থী থাকতে হবে শহর এলাকায় ৫০ জন ও মফস্বল এলাকায় ৩৬ জন। বর্তমানে থাকতে হয় যথাক্রমে ৪০ জন ও ২৬ জন। পাসের হার লাগবে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ। বর্তমানে এটি আছে ৫০ শতাংশ।
দাখিল ও আলিম স্তরের মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির জন্য পাসের হার ৭০ শতাংশ লাগবে। পরীক্ষার্থী থাকতে হবে শহর এলাকায় ৪০ জন ও মফস্বলে ৩০। বর্তমানের নিয়মে আরও ১০ জন কম হলেও চলে।
বাড়বে জনবল: নতুন পদ বাড়ানোর বিষয়ে খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রতিটি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পদ বাড়বে সাতটি। এই স্তরে বর্তমানে অনুমোদিত পদ আছে নয়টি। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে ২২টি পদ। এখন আছে ১৬টি। মাদ্রাসাতেও বাড়বে পদ।
বিদ্যমান জনবল কাঠামো অনুযায়ী নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বাংলা, ইংরেজি, সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে একটি শিক্ষকের পদ আছে। প্রস্তাবিত কাঠামোতে প্রতিটি বিষয়ে একটি করে মোট তিনটি শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ দুটি পদ বাড়ছে।
মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে বর্তমানে বাংলা, ইংরেজি, সমাজবিজ্ঞান/ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ের জন্য তিনটি শিক্ষকের পদ আছে। প্রস্তাবিত কাঠামোয় ব্যবসায় শিক্ষা চালু থাকলে ওই বিষয়ে আরও একটি পদ সৃষ্টি করতে বলা হয়েছে। এই স্তরে বিজ্ঞানে সহকারী শিক্ষকের পদ আছে একটি, সেখানে ভৌতবিজ্ঞানের জন্য একটি ও জীববিজ্ঞানের জন্য আরেকটি পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। খসড়া অনুযায়ী প্রতি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ে একটি শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করতে বলা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.