বেগুনের দাম দ্বিগুণ

প্রতি কেজি লম্বা বেগুনের দাম ৮০ থেকে ৯০ টাকা।
ছবিটি কারওয়ান বাজার থেকে তোলা l প্রথম আলো
রাজধানীর কাঁচাবাজারে গত মঙ্গলবার যাঁরা সবজি কিনেছেন, তাঁরা গতকাল বুধবার বাজারে গিয়ে কিছুটা ধাক্কাই খেয়েছেন। কারণ, এই এক দিনেই লম্বা বেগুনের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। মানভেদে লম্বা বেগুনের কেজি গতকাল ছিল ৮০-৯০ টাকা। প্রতি কেজি ধনেপাতা ১৬০ টাকা থেকে হয়েছে ২০০ টাকা। শসার কেজি ১০ টাকা বেড়ে ৪০ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
মঙ্গলবার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি লম্বা বেগুনের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা।
পবিত্র রমজান মাস শুরু হচ্ছে কাল শুক্রবার। তাই ইফতারসামগ্রী তৈরিতে প্রয়োজন হয় এমন সবজির দাম সুযোগ বুঝে বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা। কারওয়ান বাজার ঘুরে গতকাল এ চিত্র পাওয়া গেছে। খুচরা ও পাইকারি—দুই বাজারেই এমন সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী। সবজির বড় পাইকারি বাজার বগুড়ার মহাস্থান হাটে এক দিনের ব্যবধানে গতকাল বেগুনের দাম ২০ টাকা থেকে বেড়ে ৬০ টাকা হয়েছে। আদা, রসুন ও কাঁচা মরিচের দামও বেড়েছে। হঠাৎ করে না বাড়লেও এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা পাম তেল, আলু, দেশি ও বিদেশি পেঁয়াজ, আদা এবং আমদানি করা রসুনের দাম বেড়েছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) গতকালের বাজারদরে এ তথ্য দিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, পাম তেল লিটারে ১-২ টাকা, দেশি ও বিদেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৫, আদা ও রসুন মানভেদে কেজিতে ১০ ও আলুর দাম বেড়েছে ৪ টাকা।
কারওয়ান বাজারে গতকাল প্রতি কেজি আলু মানভেদে ২০-২৪ টাকা, দেশি ও বিদেশি পেঁয়াজ ৪৫ টাকা, দেশি আদা ১৪০, ভারতীয় আদা ১৬০-২০০, পটোল ও করলা ৩০, ঝিঙে ৪০, চায়না রসুন ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। ছোলার কেজি ৬০-৬৫, দেশি মসুর ডাল ১১৫-১২০, বিদেশি মসুর ৯৫, অ্যাংকর ডাল ৫০-৫৫ ও খেসারি ডাল ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে খেজুরের দাম প্রতি কেজি ৭৫ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত।
জানতে চাইলে কারওয়ান বাজার কাঁচামাল আড়ত ব্যবসায়ী মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে সবজি প্রচুর পরিমাণে আসছে। দু-একটি ছাড়া কোনো পণ্যের দামই বাড়েনি। তিনি জানালেন, গতকাল পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৫-২০, আলু ১৮ থেকে সাড়ে ১৮ ও পেঁয়াজ ৩৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
তাহলে খুচরা বাজারে এসব পণ্যের দাম এত বেশি কেন—এ প্রশ্নে দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল) বাজারে মানুষের ঢল নামছে। মনে হইতাছে, বাজার কোথাও চইল্লা যাইব। মানুষের বাড়াবাড়ির কারণেই খুচরা ব্যবসায়ীরা দিছে দাম বাড়াইয়া।’ তাঁর মতে, মানুষ অন্যান্য সময়ের মতো রমজান মাসেও স্বাভাবিক বাজার-সদাই করলেই সবজির বাজার ঠান্ডা থাকত।
এদিকে সবজির পাইকারি বাজার বগুড়ার মহাস্থান হাটে মঙ্গলবার প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ কেনাবেচা হয়েছে ৮-৯ টাকায়। গতকাল সেখানে কাঁচা মরিচের দাম ওঠে ২০ টাকা। এক দিন আগের ১০ টাকা কেজির গ্রানুলা আলু গতকাল বিক্রি হয় ১৫ টাকায়। করলা কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে ১২ টাকায় বিক্রি হয়। এক দিন আগে পটোল ৭ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল তা ১২ টাকায় উঠেছে। শসার দাম দ্বিগুণ হয়েছে, ১৫ টাকা। মঙ্গলবার ছিল সাড়ে ৭ টাকা। ১২ টাকা কেজির বরবটি হয়েছে ২২ টাকা।
মহাস্থানের পাইকারি ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম হঠাৎ সবজির মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে বলেন, ‘প্রতিবারই রমজান মাসের প্রথম কয়েক দিন বাজারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সবজির দামও বাড়ে। এবার বৃষ্টির কারণে কিছু সবজির সরবরাহ কম। তাই এক দিনের মাথায় দুই থেকে তিন গুণ পর্যন্ত দাম বেড়েছে।’
জানতে চাইলে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রমজান মাসে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বেগুন, শসা ও ধনেপাতার মতো পণ্যের সরবরাহ ঘাটতির কারণে দাম কিছুটা বেড়ে যায়। তবে পেঁয়াজ, আদা, রসুনের মতো পণ্যের যথেষ্ট মজুত থাকার পরও মূল্যবৃদ্ধির কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।’

No comments

Powered by Blogger.