এফএম রেডিও- হতে চাও কথাবন্ধু by সুচিত্রা সরকার

এক নিমেষেই আপনি পৌঁছে যেতে পারেন অনেক মানুষের কাছে! কানে কানে বলতে পারেন, বন্ধু, কী খবর বলো! শুনিয়ে দিতে পারেন তাদের কোনো প্রিয় কবিতা বা গান। তাদের উপহার দিতে পারেন কল্পনার রংধনু। অথবা জানাতে পারেন দুনিয়ার হালচাল।
ভাবছেন, কেমন করে? হয়তো উত্তরটা রয়েছে আপনার খুব কাছে। যেকোনো একটা এফএম রেডিও চালু করেই মিলিয়ে নিতে পারেন কথাগুলো।
ঠিক ধরেছেন, আমি কথাবন্ধুদের কথাই বলছিলাম। শুধু কণ্ঠস্বরের মাধ্যমেই কথাবন্ধুরা হাজারো শ্রোতার কাছে পৌঁছে যান। তাই সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে, তরুণদের অনেকেই কথাবন্ধু হতে চান। এই ক্ষেত্রটির প্রতি তাঁদের আগ্রহ ও ভালোবাসা দুটোই বেড়েছে। শুধু প্রয়োজন অনুশীলন আর সঠিক পথ ধরে এগোনো। তাই তরুণদের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে আমরা কথা বলেছি দেশের জনপ্রিয় চারজন কথাবন্ধুর সঙ্গে। তাঁরা বলেছেন তাঁদের আগ্রহ আর অনুপ্রেরণার গল্প। সেই সঙ্গে যাঁরা কথাবন্ধু হওয়ার স্বপ্ন লালন করছেন, তাঁদের জন্যও তাঁরা দিয়েছেন প্রয়োজনীয় পরামর্শ।
প্রথমেই কথা বলি এবিসি রেডিওর কথাবন্ধু ও প্রযোজক গোলাম কিবরিয়া সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো তরুণদের মধ্যে এখন এ পেশায় কাজ করার আগ্রহ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁরা কোনো দিকনির্দেশনা পাচ্ছেন না। কিন্তু তাঁরা সত্যিই শিখতে চান। নতুনদের উদ্দেশে তাই বলব, আপনারা যাঁরা কথাবন্ধু হতে চান, ভাষাজ্ঞানটা মজবুত করে নিন। উচ্চারণ ভালো করতে অনুশীলন করুন। ভাষার মিশ্রণ পরিহার করতে হবে। সত্যিই যদি কথাবন্ধু হতে চান, অনেক বেশি জানতে হবে। প্রচুর সিনেমা দেখতে হবে। প্রচুর গান শুনতে হবে। পত্রিকা পড়া, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারা আর ফেসবুক ব্যবহারটাও কাজে দেবে। সত্যি বলতে কি, এটা অন্য দশটা গৎবাঁধা চাকরির মতো নয়। এখানে প্রয়োজন সেন্স অব হিউমার। কারণ, জনগণকে কথাগুলো উপভোগ করাতে হবে। জনগণের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া তৈরি করতে হবে।’
রেডিও ফুর্তির আর জে ও স্টেশন প্রডিউসার জাহিদুল হক বলেন সম্ভাবনার কথা। তিনি বলেন,‘তরুণদের জন্য এই পেশাটা সত্যিই সম্ভাবনাময়। কাজের ক্ষেত্র অনেক বেড়েছে। আমি মনে করি, কাজ শেখার জন্য রেডিওগুলোই ইনস্টিটিউট হিসেবে কাজ করছে। এই কাজটা পেশা হিসেবে নিতে হলে নিজস্ব ব্যক্তিত্ববোধ থাকতে হবে, যেটা তৈরি করতে কোনো প্রশিক্ষণ দিতে হয় না। তরুণেরা যাঁরা এই পেশায় আসতে চান, তাঁদের সব সময় মাথায় রাখতে হবে, এটা জীবনের একটি অংশ। জীবনের বাইরের কিছু নয়। আর মনে রাখতে হবে, এই পেশায় আসতে হলে কথার জাদুকর হতে হবে। সব সময় ক্রিয়েটিভ আইডিয়া তৈরি করতে হবে।’
এবিসি রেডিওর প্রযোজক ও কথাবন্ধু গাজী শারমীন জানান, এই পেশা বর্তমান সময়ের তরুণদের কাছে শুধু পেশা নয়, নেশাও বটে। আর এই মাধ্যমটা বেশি আকর্ষণীয় হওয়ার কারণ এর দ্রুত ফিডব্যাক। শ্রোতাদের একবার শুভেচ্ছা জানাতেই মুহূর্তেই শত শত খুদেবার্তা এসে হাজির হয়। ওইসব খুদেবার্তা তাৎক্ষণিকভাবে কত মানুষকে যে আকৃষ্ট করে!
তিনি আরও জানান, একজন কথাবন্ধু শ্রোতাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। শ্রোতারা মনে করে, আমিও এই পেশায় গেলে এমনভাবে পারফরম করতে পারব। তবে এটাকে পেশা হিসেবে নিতে হলে কিছু মৌলিক বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যেমন, প্রচুর বই পড়তে হবে। ক্লাসিক্যাল, আধুনিক, ব্যান্ড—সব ধরনের গানই বেশি বেশি শুনতে হবে। পুরোনো গানগুলোকে ফেলনা বলে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। এটাই এই পেশার মূলমন্ত্র।
রেডিও টুডের কথাবন্ধু নুসরাত রাইসা জোর দিলেন কণ্ঠস্বরের চর্চার ওপর। তিনি জানান, এই পেশায় আসতে হলে উচ্চারণের জন্য আবৃত্তিটা বেশ কাজে লাগে। চিন্তার জগৎ তৈরি করতে বিতর্কচর্চা অনেক ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। অভিনয়, ভাষাজ্ঞানও অনেক কাজে লাগে। আর সেই সঙ্গে রেডিওর প্রতি ভালোবাসা, প্যাশন থাকতে হবে। এখন এই পেশায় প্রতিযোগিতা বাড়ছে। তাই রেডিও স্টেশনগুলো কোয়ালিটির ওপর জোর দিচ্ছে বেশি।
তো বন্ধুরা, যাঁরা কথাবন্ধু হতে চান, এখনই লেগে পড়ুন। নিজের চিন্তাটাকে একবার টিউনিং করে নিন। হয়তো আপনিই হবেন আগামী দিনের কথাবন্ধু।

No comments

Powered by Blogger.