বিশ্বব্যাংক-সরকার দূরত্ব কমেছে, নতুন আশা by আরিফুর রহমান

পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বাস্তবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করায় সরকারের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের দূরত্ব কমে এসেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তাঁরা বলছেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ বা মামলা হয়ে গেলেই সম্পর্ক পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। অর্থমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা, এমনকি বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টরও এমন কথা বলেছেন। বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞদলের সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের বৈঠক শেষে গতকাল মঙ্গলবার দুদক সূত্র জানায়, দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শিগগিরই মামলা করা হবে।
পদ্মা সেতুতে সহ-অর্থায়নে চুক্তিবদ্ধ অন্য তিনটি সংস্থা এডিবি, জাইকা ও আইডিবির প্রতিনিধিদের সঙ্গে ইতিমধ্যে ম্যানিলায় বৈঠক সেরে ফেলেছে বিশ্বব্যাংক। ওই বৈঠকে ক্রয়-প্রক্রিয়ায় তাদের অধিকতর অংশগ্রহণসহ সেতু প্রকল্পের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়েছে। তিন সংস্থার প্রতিনিধিরা ঢাকায়ও বৈঠক করেছেন। পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে- বিশ্বব্যাংক এ অভিযোগ প্রথম উত্থাপন করে গত বছরের সেপ্টেম্বরে। এরপর কেটে গেছে এক বছরেরও বেশি সময়। এ সময়ে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা ও আইডিবির কোনো কর্মকর্তাই প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে যাননি। গত ৩ ডিসেম্বর সোমবার প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে আসেন জাইকার ভাইস প্রেসিডেন্ট। এর এক দিন পর সেতু এলাকা ঘুরে আসেন বিশ্বব্যাংকের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা। সব কিছু মিলিয়ে পদ্মা সেতুতে অর্থায়নকারী সংস্থাগুলোর দ্রুত ফিরে আসা নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। নতুন আর কোনো শর্ত জুড়ে না দিলে অর্থায়নে ফিরে আসতে বিশ্বব্যাংকের এখন কোনো বাধা নেই বলেই তাঁদের ধারণা। সরকারের এক নীতিনির্ধারক গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সব কিছু ঠিকমতোই এগোচ্ছে। আমরা (চূড়ান্ত কিছুর) কাছাকাছি চলে এসেছি। আশা করি কাল বলতে পারব শেষ পর্যন্ত কী হলো। '
তবে সতর্ক আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ইআরডির এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, 'সময় নিয়ে হলেও বিশ্বব্যাংকের দেওয়া সব শর্তই সরকার একে একে পূরণ করেছে। এ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক ও অন্য সংস্থাগুলোর মনোভাব ইতিবাচকই মনে হচ্ছে। নতুন কোনো শর্ত না থাকলে এ প্রকল্পে অর্থ দিতে তাদের আর আপত্তি থাকার কথা নয়।'
এদিকে মামলা-সংক্রান্ত বিষয়ে যথেষ্ট অগ্রগতি হলেও সরকারের বর্তমান মেয়াদে পদ্মা সেতুর মূল কাজ শুরু করা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা এখনো সন্দিহান। তাঁরা বলছেন, প্রক্রিয়াগত জটিলতা ছাড়াও রয়েছে আবহাওয়া ও কারিগরি দিক, যার কারণে আগামী সেপ্টেম্বরের আগে পদ্মায় ভারী ড্রেজার ঢুকতে পারবে না। তবে সংযোগ সড়ক নির্মাণসহ স্থলভাগের কিছু কাজ যেকোনো সময়ই শুরু করা যেতে পারে।
গত ১ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে এ চার সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আবারও বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে। পরদিন ২ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাংক ও জাইকার কর্মকর্তারা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে দেখা করে দুর্নীতি তদন্তে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। পুরো বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, বিশ্বব্যাংকের পরামর্শের আলোকে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীসহ অভিযুক্ত সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। যেসব বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে দূরত্ব ছিল এখন তা নেই বললেই চলে। সব মিলিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে।
এর আগে গত ২৮ নভেম্বর পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন পদ্ধতি পুনর্নির্ধারণ নিয়ে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা এবং আইডিবির উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা বৈঠকে করেন ম্যানিলায় এডিবির সদর দপ্তরে। বৈঠকে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি এলেন গোল্ডস্টেইন এবং এডিবির আবাসিক প্রতিনিধি তেরেসা খো যোগ দেন। এ ছাড়া জাইকা ও আইডিবির উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পদ্মা সেতু প্রকল্পে কেনাকাটাসহ সব কর্মকাণ্ডে চার উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার পুরোপুরি কর্তৃত্ব বা নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে প্রাথমিক এ বৈঠক হয় বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দেওয়ার পরও সরকার যথেষ্ট ব্যবস্থা নেয়নি- এমন অভিযোগে বিশ্বব্যাংক এর আগে এ প্রকল্পে ১২০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি বাতিল করে।

No comments

Powered by Blogger.